Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়ায় বিদেশী শ্রমিকদের যত দুর্দশা


কোরিয়ায় বিদেশী শ্রমিকদের উপর কোরিয়ানদের নির্যাতন, বৈষম্য এবং বিদেশীদের কি কি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কোরিয়া হেরাল্ড। বাংলা টেলিগ্রাফের পাঠকদের জন্য রিপোর্টি অনুবাদ করেছেন মো. মহিবুল্লাহ।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদেশী শ্রমিক নিয়োগ দান শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। কর্মক্ষেত্রের ব্যাপ্তি বাড়ার সাথে সাথে বর্তমানে এই জনশক্তিও বিশাল অংকে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১২ সালে কোরিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ৭,৯১,০০০। কলকারখানা, হোটেল-রেস্তোরা, নির্মাণ শিল্পের মতো কঠিন পরিশ্রম অথচ স্বল্প মজুরীর কাজগুলোর প্রতি কোরিয়ান শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান অনীহা দেশটির ব্যবসা-বানিজ্যের জন্য যখন হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল তখন এসব শুন্যস্থান পূরণ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন ভিনদেশী দিনমজুরেরা।20130424001110_0কোরিয়ার অর্থনীতিকে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে দক্ষতার সাথে টিকে থাকতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখে চলা সত্ত্বেও এসব অভিবাসী শ্রমিক এ দেশে বরাবরই অবিহেলিত, বঞ্চিত, নিগৃহীত। সাম্যবাদের ধ্বজাধারী সমাজ এখনও তাদের ঠিক মানুষ হিসেবে দেখে না।

chardike-ad

বর্ণবৈষম্য প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া এবং বিবাহিত বিদেশী নারী শ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তা না দেয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন কোরিয়ার সমালোচনা করে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই।

কোরিয়ায় অভিবাসন বিষয়ক যৌথ কমিটির এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১১ সালে এখানকার বিদেশী শ্রমিকদের ৭৮ শতাংশ অসদাচরণ ও ২৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। মার্চে প্রকাশিত জরিপ প্রতিবেদনে নারী শ্রমিকদের যৌন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলা হয় এ সময়ে অন্তত ৩৫.৫ শতাংশ নারী কর্মী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং আরও ৩৫.৫ শতাংশ মালিকদের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্খিত শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ এনেছেন।

আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত কিছু প্রতিষ্ঠান দুর্বল আইনের সুযোগ নিয়ে বিদেশীদের মাসিক বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি নিয়ে টালবাহানা করে থাকেন। কোরিয়ার বর্তমান কর্মসংস্থান অনুমোদন ব্যবস্থা অনুসারে কর্মক্ষেত্রে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধায় স্থানীয় ও বিদেশী শ্রমিকদের মধ্যে কোন বৈষম্য করা যাবে না। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানই বিদেশী শ্রমিকদের পাওনা সুযোগ-সুবিধা ঠিকভাবে দিচ্ছে না।

মাথার ঘাম পায়ে গেলে দিনরাত কাজ করা অভিবাসী শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত এমন হাজারো বঞ্চনা আর অন্যায়ের শিকার হলেও ভাষাগত সীমাবদ্ধতা এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারনে তারা এসব ব্যাপারে সবসময় আইনের আশ্রয়ও নিতে পারেন না। কোরিয়া সাপোর্ট সেন্টার ফর ফরেন ওয়ার্কার্সয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক লি গুনো অভিবাসী শ্রমিকদের ভাষাসংক্রান্ত দুর্বলতাকেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়া আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয় যেমন বেতনের রশিদ, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ইত্যাদিও শ্রমিকরা অনেক সময় জোগাড় করতে পারে না। এমন নানা কারনে প্রতিবাদ-প্রতিকারের চেয়ে নিয়তি হিসেবে সব মেনে নেয়াটাই শ্রেয় জ্ঞান করে মুখ বুঝে সহ্য করে যান তারা।

অনেক কোরিয়ানই মনে করেন বিদেশী শ্রমিক মাত্রই অপরাধপ্রবণ। সকল কোরিয়ান এক ও অভিন্ন রক্তের- এমন তত্ত্বে বিশ্বাসীরা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি খুব আক্রমণাত্মক হয়ে থাকেন। যে কোন রকম অর্থনৈতিক মন্দায় এমন ধ্যানধারণা বিদেশী কর্মীদের প্রতি অনেক অন্যায় আচরণের প্রধান কারন হতে দাঁড়ায়।

20130424001109_0তবে এসব সমস্যা সমাধানে আইনের প্রয়োগের চেয়ে মানসিকতার পরিবর্তনই বেশী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন স্যামসাং ইকোনোমিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক ছোয়ে হং। তিনি বলেন, “নাগরিকত্বের ধারনাকে প্রসারিত করে অভিবাসীদের আপন ভাই জ্ঞান করে বুকে টেনে নিতে হবে। বিদেশীরা যেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে কোনপ্রকার বৈষম্যের শিকার না হয় এবং স্ব স্ব ধর্ম, সংস্কৃতি, বিশ্বাস নিয়ে আমাদের সমাজে আমাদেরই অংশ হয়ে বসবাস করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।” আর এ জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় বহুজাতিক সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্তি করে শিক্ষার্থীদের এসবের সাথে অভ্যস্থ হতে সাহায্য করার পাশাপাশি জনগণের মাঝে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির উপর গুরুত্ত্ব আরোপ করেন মি.ছোয়ে।