Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সাবাশ, তুমি হইলা আসল বাপ!

মোহাম্মদ আল আমিন, সিউলঃ

শহরের শিক্ষিত পরিবার। অনেক সাধনার পর সেই ঘরে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান এলো ২৬ জুন, ২০০০। বাবা মা উভয়েই তাদের সন্তানকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে। বাবা মা সন্তানকে ভালোবাসবে এটা আবার নতুন কী! দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া দুনিয়া জোড়া সকল প্রাণীর স্বভাবই তাই।

chardike-ad

মেয়েটির বয়স এখন মাত্র ১৩ বছর সাত মাস। মেয়েটিকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন। অনেক বড় হবে পড়া লেখা করবে। অনেকের ধারণা এই মেয়েটি বেশ লক্ষ্মী, বড় হয়ে সে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। সুনাম ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে, এলাকার নাম হবে সর্বোপরি দেশেরও সুনাম হবে। আসলে হলোও তাই, এই মেয়েটির যোগ্যতার কারণে এখন তাকে গোটা দুনিয়া এক নামে চেনে।

Al amin vaiকিন্তু সমস্যা হলো অন্যখানে। এই পরিবারের পাশেই হোমড়া চোমড়া গোছের এক প্রচন্ড দাপুটে মাস্তান ছিল। বজ্জাত প্রকৃতির এই মাস্তানের কোন প্রতিবেশী বন্ধু নেই। সারাক্ষণ অন্যান্য প্রতিবেশীর সাথে কাট-কাট মার-মার লেগেই আছে! আজ এর সাথে তো কাল ওর সাথে ঝগড়া চলছেই। সুযোগ পেলে প্রতিবেশীদের উপর গুলি ছুড়তেও দ্বিধা করেনা। এই তো কিছুদিন পূর্বে ফেলানী নামক এক মেয়েকে গুলি করে কাঁটাতারের উপর ঝুলিয়ে রেখেছিল। বুঝেন, কী পাষন্ড!

মিডিয়া কিছুদিন নিউজ কাভার করে এখন সব ভুলে গেছে! একটা কথা না বললেই নয়, এই এলাকার মানুষের স্মৃতিশক্তি খুবই ক্ষণস্থায়ী, বলতে পারেন জেলি ফিশের ব্রেইনের মত এদের ব্রেইন। শুধু স্মৃতিশক্তিকে দোষ দিয়েও লাভ নেই। ঘটনা তো এক দুইটা না, একের পর এক ঘটনা চলতেই আছে, মানুষ কোনটা মনে রাখবে বলুন! এখানে মিডিয়াও বেঁচাকেনা হয় শুনেছি।

যাহোক, যে মেয়েটির কথা বলছিলাম, সে বড় হওয়ার সাথে সাথে ঐ প্রতিবেশীর কুনজরে পড়ে। একদিন মাস্তান সাহেব স্কাইপিতে মেয়ের বাবাকে হুমকি দিয়ে বললো ‘শোন, তোর মেয়েকে আমাদের কাছে বিক্রি করে দিতে হবে, নইলে ঘ্যাচাং!’

আচ্ছা বলুন তো এটা কী করে সম্ভব! বাবা হয়ে তার নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দিতে পারে, শুনেছেন কোথাও, কোনদিন? কিন্তু না! এই পাষণ্ড বাবা শেষমেশ তার মেয়েকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এর পিছনে অবশ্য দুটি কারণ ছিল, এক- মৃত্যুর হুমকি, দুই-বেশি টাকার অফার। মেয়ের মা এই খবরে ক’ দিন ঘ্যান ঘ্যান করেছিল, কিন্তু টাকার পরিমান শুনে মা ও কনভিন্সড! লোকমুখে শোনা যায়, এই মাস্তানের সাথে মেয়েটির মায়ের অনলাইন কানেকশন ছিল, এখনও নাকি আছে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লো গোটা দেশে। নেটিজেনরা নেমে পড়লো ফেসবুকে, দলে দলে তরুণরা নেমে পড়লো শাহবাগ, প্রেসক্লাবে। শুরু হলো মানব বন্ধন, প্রতিবাদ সভা। চারিদিকে ছিঃ ছিঃ রব পড়তে লাগলো! একি কান্ড, বাবা হয়ে মেয়েকে টাকার লোভে বিক্রি করে দেয়! মানুষ বলা বলি করতে লাগলো এটা কোন যুগে আইলাম রে বাবা!

কে শোনে কার কথা? বাবা তার মেয়েকে যথা সময়ে নিয়ে গেলেন মরুভূমির দিরহাম শহর দুবাই। সেখানেই বিক্রির টাকা পয়সার লেনদেন হবে। গোটা দেশের মানুষ এই খবরে মর্মাহত, সংক্ষুব্ধ! কিন্তু প্রতিবাদ ছাড়া সাধারণ মানুষের আর কিছুই করার ছিলনা। দুবাই গিয়ে ঘটলো এক মজার কাহিনী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আগত অতিথিরা মেয়ের বাবাকে ধিক্কার দিয়ে বলতে লাগলো, তুমি কেমন বাবা হে বাপু! টাকার লোভে নিজ মেয়েকে বিক্রি করে দাও! তোমার লাজ লজ্জা কী কিছুই নাই?

অধিকাংশ অতিথি বাধ সাধলো এই বলে ‘না তুমি এই নিষ্পাপ মেয়েকে কোন ভাবেই বিক্রি করতে পারবেনা। দেখি তোমার মেয়েকে ক্যামনে বিক্রি করো!’
অবস্থা বেগতিক, বেচারা বাবা পড়লো বিরাট ফাঁপরে! কন্যা বিক্রি হলোনা। অগত্যা টাকা পয়সা ছাড়াই কন্যাকে নিয়ে দেশে পাড়ি জমালেন। এই খবর শুনে দেশের মানুষ খুশিতে আটখানা! পত্রিকার পাতা জুড়ে খবরে এলো, সারা দুনিয়া জানলো, সবাই এখন খুশি।

এদিকে আরেক উদ্ভট কান্ড ঘটে বসলো। মেয়ের বাবার গৃহপালিত কিছু চ্যালা চামুন্ডা ছিল, তারা ফেসবুকে মেয়ের বাবাকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্ট্যাটাস দিতে থাকলো এই বলে ‘সাবাশ, তুমিই হইলা আসল বাপ। তোমার হাত থেকে ওরা মেয়ে কিনে নিতে পারে নাই, পারে নাই। তুমি হইলা বাপের বাপ…খাপের খাপ!’

আচ্ছা বলুন তো, মেয়ের বাপ এখন খুশি না বেজার?

বিঃদ্রঃ ইহা শুধুই একটি কল্পনা মাত্র। তবে মেয়ের নামটি যদি ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দল’ রাখা হয় তাহলে হয়তো একটি সত্য কাহিনী বেরিয়ে আসতেও পারে।

লেখকঃ পিএইচডি গবেষক, কনকুক বিশ্ববিদ্যালয়, সিউল।