সিউল, ২৩ মার্চ ২০১৪:
আমরা সবাই কম-বেশি হাঁচি। কেউ কেউ খুব বেশি উচ্চৈঃস্বরে দেয়, আবার অনেকে চেপে যায় ভদ্রতাসহকারে। আমরা স্বাভাবিকভাবে এ হাঁচি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কিন্তু কেন এ হাঁচি? আজ আসুন হাঁচি বিষয়ে মজার কিছু কথা জানা যাক—
ঘণ্টায় ১০০ মাইলের ওপর ভ্রমণ করলে হাঁচি আসে: বিজ্ঞানীরা কিছু মানুষের ওপর গবেষণা করে দেখেছেন, তারা ১০০ মাইলের ওপর ভ্রমণ করার পর শরীরে যে ক্লান্তি অনুভব করেন, তার ফলস্বরূপ হাঁচি দিতে শুরু করেন। আবার কিছু মানুষের ওপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তারা ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ মাইল ভ্রমণেই হাঁচি দিতে শুরু করেন।
হাঁচির কফ জীবাণু আক্রান্ত: যে হাঁচি দেয়, তার পাঁচ ফুট এলাকায় চক্রকারে জীবাণু থাকে। সে ভূমিতে কফ ফেললে ৩০ ফুট চক্রাকারের দূরত্বেও জীবাণু থাকে। উল্লিখিত দূরত্বের ভেতরে অন্য যেসব মানুষ থাকে, তারা নিরাপদ নয় তথা জীবাণুমুক্ত নয়।
হাঁচি অপ্রয়োজনীয় বস্তু ত্যাগ করে: ২০১২ সালের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন কেন আমরা সূক্ষ্মভাবে হাঁচি দিই। যখন হাঁচি দিই, তখন কী ঘটে। এ বিষয়ে ডেইলি সায়েন্স প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে— অস্থির হয়ে যাওয়া একটা কম্পিউটারকে যেমন তার অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ত্যাগ করে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে হয়, তেমনি আমাদের নাকের ক্ষেত্রে প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় বিষয় হাঁচির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সর্দি, অ্যালার্জিযুক্ত কফ প্রভৃতি নাকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে বাধা দেয়, ফলে সেগুলো সরাতে হাঁচি আসে। আর হাঁচি দ্বারা নাক পরিষ্কার হয়।
সূর্যের আলো বেশির ভাগ হাঁচির কারণ: পালক, মরিচ, ঠাণ্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, বিরক্তিকর অ্যালার্জি, নিয়ন্ত্রণহীন হাঁচির কারণ হিসেবে চিহ্নিত। তত্ত্বগতভাবে আরো কারণ থাকতে পারে। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় স্পষ্ট করে একটা কারণ পাওয়া গেছে আর তা হলো, সূর্যের উজ্জ্বল আলো। দেখা গেছে প্রতি চারজনের একজন এ কারণে হাঁচি দেয়। লাইফ সায়েন্স রিপোর্ট করেছে— কেন এ ঘটনা ঘটে, সেটা বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করতে পারেননি, তবে মস্তিষ্ক ও চোখের মণি সূর্যের উজ্জ্বল আলোর প্রভাবে সংকুচিত হয়। এ কারণে স্বাভাবিক কাজে বাধা পায় বলে মস্তিষ্ক ও চোখের মণি সংশ্লিষ্ট পথগুলো পরিষ্কার হতেই হাঁচি চলে আসে।
দুই বা তিনবার হাঁচি দেয়া স্বাভাবিক: ‘এভরিডে হেলথ’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী দুই বা তিনবার হাঁচি দেয়া স্বাভাবিক। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে এর অধিক হলে উদ্বেগের কারণ থাকে।
অনিচ্ছায় চোখ বন্ধ হয়: যদি একজন হাঁচিদাতা হাঁচি আসার আগেই বুঝতে পারে যে, তার হাঁচি আসছে, তিনি চেষ্টা করলেও চোখ খোলা রাখতে পারবেন না।
হূদযন্ত্র থামে না: ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী হার্টের গতি সাধারণত একটা ব্যাঙাচির মতোই ধীরস্থির থাকে। হাঁচির আগে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নেয়া এবং স্নায়ুকে জাঁকিয়ে তোলার কারণেও হাঁচির সময় হূদযন্ত্রের এ গতি থমকে দাঁড়ায় না বরং সচল থাকে।
হাঁচি দেয়াই ভালো: যখন হাঁচি বের হচ্ছে না অথচ চেহারায় এর আভাস— এমন অবস্থায় শ্বাসকষ্ট ও অস্বস্তি বোধ হয় চরমভাবে। আবার এমন হতে পারে ধর্মীয় উপাসনালয়, জমাট আড্ডায়, জনসমাগমে বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে থাকাবস্থায় হাঁচি এলে অনেকে সেটা দমন করার চেষ্টা করেন। যদিও এমন আচরণ অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বুক, দাঁত, চোখ, মস্তিষ্ক, রক্তপ্রবাহ প্রভৃতিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এ হাঁচি-দমন। এমনকি কানের শ্রবণশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তা। কানের তালা ফেটেও যেতে পারে অনেক সময়। সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির স্কুল অভ মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক সারগান অ্যালান ওয়াইল্ড ‘লাইভ সাইন্স’কে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, কোনোভাবে হাঁচি দমানো ঠিক না।
হাঁচি এসে আটকে গেলে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে সেটা বের হতে সহায়ক হয়। এ বিষয়ে অ্যালান ওয়াইল্ড বলেন, এ সময় নাক ঘষামাজা করতে হবে, নিঃশ্বাস বড় করে নিয়ে আবার ছেড়ে দিতে হবে ঘন ঘন। তাহলে হাঁচি তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। সূত্রঃ বণিকবার্তা।