Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জবসের প্রয়াণে আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা নিয়েছিল স্যামসাং

সিউল, ১৯ এপ্রিল ২০১৪:

শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের প্রয়াত সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ জবসের মৃত্যুতে বাজার দখলে সুবিধা পেয়েছিল দক্ষিণ কোরীয় ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতা স্যামসাং। ২০১১ সালে জবসের মৃত্যুর পর বাজার দখলে এগিয়ে যেতে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি বেশকিছু পরিকল্পনাও করেছিল। স্যামসাংয়ের মিকায়েল পেনিংটন নামের একজন নির্বাহীর এক ই-মেইলে এ ধরনের পরিকল্পনার তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ পায়। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

chardike-ad

3_38234বর্তমান মোবাইল ডিভাইসের বাজারে শীর্ষ দুটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অ্যাপল ও স্যামসাং। অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে বাজার দখলে তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু স্টিভ জবসের মৃত্যুর আগপর্যন্ত স্যামসাং বাজার দখলে অ্যাপলের সঙ্গে ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। কিন্তু জবসের চিরবিদায় বাজার দখলে এগিয়ে যেতে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠানটির সামনে বিশাল সুযোগ করে দেয়।

পেনিংটন তার ই-মেইলে স্টিভ জবসের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করলেও এটি তাদের জন্য অন্যতম বড় সুযোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পেনিংটন ই-মেইলটি করেন ২০১১ সালের অক্টোবরে। স্টিভ জবস মারা যাওয়ার ঠিক দুই দিন পর। জবসের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে ই-মেইলে পেনিংটন বলেন, ‘স্টিভ জবসের মারা যাওয়া প্রযুক্তি খাতের জন্য নিঃসন্দেহে একটি দুঃখজনক খবর। কারণ তার মতো সৃজনশীল ক্ষমতা আজকের যুগে অনেকেরই নেই।’ অ্যাপলের পরবর্তী অবস্থান নিয়ে ই-মেইলে তিনি বলেন, ‘স্টিভ জবস মারা যাওয়ার কারণে অ্যাপলের প্রতি সাধারণ গ্রাহকদের দুর্বলতা কাজ করবে। যা প্রতিষ্ঠানটিকে বাজার দখলে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। আর মিডিয়া স্বাভাবিকভাবেই স্টিভ জবসের মৃত্যুকে হাইলাইট করবে। ফলে অ্যাপল বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হবে।’

অ্যাপলের এসব সুবিধার কথা উল্লেখ করে ই-মেইলটিতে তিনি নিজেদের সুবিধার দিকগুলোর কথাও তুলে ধরেন। স্বাভাবিকভাবেই স্টিভ জবসের মৃত্যু অ্যাপলের জন্য বড় ধরনের দুঃসংবাদ ছিল। কারণ প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি অনেকটা হাতে ধরেই আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। জবস সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্যে সেবা যুক্ত করতেন। পাশাপাশি গ্রাহকদের পছন্দ বুঝে ডিভাইসের নকশা করার কারণে সে সময়ে অ্যাপল এক অনন্য উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির এখনো শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি হিসেবে নাম থাকলেও জবসের মৃত্যু প্রতিযোগিতা থেকে অ্যাপলকে যে পেছনে ঠেলে দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ই-মেইলে পেনিংটন বলেন, ‘বলতে খারাপ লাগলেও এ কথা সত্য যে এখনই আমাদের আইফোনের ওপর হামলা করার উপযুক্ত সময়। এ বিষয়ে এখনি আমাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যা স্যামসাংকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
মোবাইল ডিভাইসের বর্তমান বাজারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। কিন্তু আইফোন এখনো তার জৌলুস ধরে রেখেছে। আইফোনকে টপকাতে না পারলেও স্যামসাং তাদের অন্যান্য পণ্য দিয়ে বাজার দখলে এগিয়ে গেছে। এদিকে অ্যাপল স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর কার্যকর তেমন কোনো পণ্য তৈরি করতে পারেনি। এদিকে স্যামসাংয়ের এগিয়ে যাওয়া অ্যাপলের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে কাজ করছে বলে অভিমত বাজার বিশ্লেষকদের।
স্টিভ জবস সবার কাছে পারফেকশনিস্ট হিসেবেই অধিক পরিচিত। তিনি যে কাজটিই করতেন, তা অত্যন্ত নিখুঁত হতো। কিন্তু স্টিভ জবসের উত্তরসূরিরা তার দায়িত্ব পালন করলেও তার অভাব পূরণ করতে পারছেন না। ফলে একতরফাভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি।
স্যামসাং বর্তমানে মূলত অ্যান্ড্রয়েডচালিত ডিভাইসগুলো দিয়েই ব্যবসা করছে। কিন্তু এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মালিক মার্কিন শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন গুগল। গুগলের পণ্য দিয়ে স্যামসাং গুগলের চেয়ে বেশি ব্যবসা করছে। দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি তাদের কৌশলের মাধ্যমেই বাজারের শীর্ষস্থানে চলে এসেছে বলে অভিমত বাজার বিশ্লেষকদের।
জবসের মৃত্যুর পর অ্যাপল তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পণ্যের ব্যাপক প্রচারণা চালায়। স্যামসাংও পিছিয়ে থাকেনি। তারাও তাদের পণ্যের ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিল। মাঝখান দিয়ে ব্যবধান তৈরি করে দিয়েছিল অ্যান্ড্রয়েড, যা আজো স্যামসাংকে শীর্ষস্থানে ধরে রেখেছে। জবসের মৃত্যুর পরই যে অ্যাপলের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে তা বলাবাহুল্য। তবে প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তী সময়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে সক্ষম হলেও ততক্ষণে অনেক দূর এগিয়ে যায় স্যামসাং। সূত্রঃ বণিকবার্তা।