সিউল, ২৯ মে ২০১৪:
ওজন কমানোর জন্য অনাহারে থাকা বা খুব শক্ত ডায়েট করার দরকার পড়ে না। আপনি আপনার খাবার তালিকায় কিছু খাদ্য যোগ করে অনায়াসেই কমিয়ে নিতে পারেন ওজন।
শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় অনেককেই। কারণ স্থূল দেহ বা বর্ধিত ওজন মানুষের শরীরে ক্ষতিকর রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, পাশাপাশি হ্রাস করে কর্মক্ষমতাও। তাই দেখা যায়, অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠে অনেকেই। ওজন কমাতে কোনো চেষ্টারই ত্রুটি করে না বাড়তি ওজনের মানুষ। ওজন কমানোর চা, বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ এমনকি অপারেশন পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে, কিন্তু সব চেষ্টার পরও ওজন কমে না অনেকেরই। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য অনাহারে থাকা বা খুব শক্ত ডায়েট করার দরকার পড়ে না। আপনি আপনার খাবার তালিকায় কিছু খাদ্য যোগ করে অনায়াসেই কমিয়ে নিতে পারেন ওজন। আসুন জেনে নেই এরকম কিছু খাবারের তালিকা।
দারচিনি: প্রতিদিনের রান্নায় অনেক ধরনের মসলা খাওয়া হয়। দারচিনিও এক ধরনের মসলাবিশেষ। ওজন কমাতে ইচ্ছুক সব মানুষেরই খাদ্যতালিকায় এটি রাখা উচিত। খাবারের মধ্যে চিনির পরিবর্তে দারচিনির গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলে তা খাবারের স্বাদে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করবে। কারণ এক থেকে চার চা চামচ দারচিনি গুঁড়ো শতকরা ২০ ভাগ দ্রুত শর্করার বিপাকে ভূমিকা রাখে, যা শরীরে সামগ্রিকভাবে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
সামুদ্রিক মাছ: খাবারের তালিকায় সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে স্যামন বা টুনা মাছ মেদ কমানোর জন্য খুবই উপযোগী। এসব সামুদ্রিক মাছে থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। এ এসিড মেদ বৃদ্ধিতে দায়ী চর্বিকে পোড়াতে এবং শরীরে ভালো চর্বির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ থেকে যে ফ্যাট পাওয়া যায়, তার নাম ‘পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’। আর তাই বাদাম ও জলপাই তেলের মতো সামুদ্রিক মাছের ফ্যাটও ওজন হ্রাসে ভূমিকা রাখে।
সবুজ চা: সবুজ চা ওজন কমানোর জন্য খুব সহায়ক। এর প্রতিটি দানায় রয়েছে মানুষের শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক পলিফেনল ও কোরোজেনিক এসিড। সবুজ চা হজম ক্ষমতা বাড়ায়, যা কিনা শরীরের ওজন কমানোর প্রধান শর্ত। দৈনিক ২-৩ কাপ সবুজ চা পান করে বছরে ১৫ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব। এবং তা ব্যায়াম ছাড়াই। কেবল আপনার প্রতিদিনের চা বা কফির বদলে পান করুন সবুজ চা! আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি সান দিয়েগোয় একটি সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে গ্রিন টি ওজন কমায়। অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছেন এমন ১৬ জনকে ২২ সপ্তাহ ধরে সবুজ চা পান করানোর পর দেখা গেছে, তাদের ওজন গড়ে ৩ দশমিক ৮৫ কেজি কমে গেছে।
কুসুমবিহীন ডিম: কোলেস্টেরল থাকার কারণে অনেকেরই ধারণা, ডিম শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের নাশতায় ডিম খেলে তা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি১২, যা দ্রুত চর্বি কমাতে সহায়তা করে। যারা নিয়মিত ডায়েট করেন, তারা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি করে ডিম রাখতে পারেন। তবে ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলা ভালো।
অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল হচ্ছে ৮৫ শতাংশ অয়েলিক এসিড, যা পরিপাক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী সাধারণত মেটাবলিজম কম থাকা। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ অলিভ অয়েল খাওয়ার অভ্যাস করলে তা শরীরে মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এবং সেই সঙ্গে কমাবে ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা।
লেবু: লেবু শরীরের মেদ কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। শরীরে খাদ্য গ্রহণের পর তা ক্যালরি থেকে মেদে পরিণত হতে বাধা দেয় এবং শক্তিতে পরিণত করে থাকে লেবু। গরম পানিতে লেবুর রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াটা ওজন কমানোর একটি কার্যকর উপায় হিসেবে স্বীকৃত।
যব: অনেকেই যব খাবার তালিকায় রাখতে চায় না সেটা সুস্বাদু নয় বলে। কিন্তু যবে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, যা দ্রুত ওজন কমায়। যারা খুব বেশি ওজন নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিনের নাশতার তালিকায় ওটস রাখতে পারেন।
আপেল ও আখরোট: চিকিত্সকের কাছ থেকে ওজন কমানোর পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন হবে না যদি আপনি নিয়মিত আপেল খান। একটি আপেলে চার-পাঁচ গ্রাম ফাইবার থাকে। তা ক্ষুধার উদ্রেক কমায়। আপেল দেহে চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং চর্বি কোষ ধ্বংস করে। আর আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাট আলফা-লিনোলেনিক এসিড, যা দেহের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
ঝাল মরিচ: খাবারে ঝালের মাত্রা বেশি হলে খেতে পছন্দ করে অনেকেই। তাই খাবারের সঙ্গে একটি মরিচ না নিলে অনেকের খাওয়াই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ঝাল মরিচ ওজন কমানোয় সহায়তা করে। মরিচের ঝালে থাকে ‘ক্যাপ্সাইসিন’ নামক যৌগ। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ঝাল খাদ্য গ্রহণের সময় ও গ্রহণের পর এ ‘ক্যাপ্সাইসিন’ শরীরে একটি প্রভাব ফেলে, যাকে ‘থারমোজেনিক’ প্রভাব বলে। এ থারমোজেনিক প্রভাব দেহে যতক্ষণ পর্যন্ত থাকে, ততক্ষণ শরীরের চর্বি ক্ষয় হতে থাকে। এ ঝালের প্রভাব যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ ক্যালরি ক্ষয় হবে বিনা পরিশ্রমে। হ্রাস পাবে ওজনও। সূত্রঃ বণিকবার্তা।