Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়া থেকে আমেরিকা, ভায়া ট্রেন

বং জুন-হো-কে এশিয়ার বাইরের ফিল্ম-দুনিয়া আবিষ্কার করে ২০০৬ সালে৷ ‘দ্য হোস্ট’ ছবির দৌলতে৷ হান নদী থেকে সিওলে ঢুকে পড়েছে এক দৈতাকার প্রাণী৷ ঘাপটি মেরে রয়েছে শহরের তলাতে৷ সুযোগ পেলে আক্রমণ করছে মানুষকে৷ সায়েন্স ফিকশন বা ফ্যান্টাসি বলে আপাতভাবে মনে হলেও জুন-হো বং-এর এই ছবি ছিল ‘কামুসিয়ান’ (Camusian) মায়া আর নির্মোহের সঠিক মেলবন্ধন৷ ২০০৯-এ তার ছবি ‘মাদার’ও কম সাফল্য পায়নি৷ তার পরেই হলিউডের উদ্দেশে পারি দিয়েছেন পরিচালক জুন-হো বং৷ সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার ‘স্নোপিয়ারসার’৷ বরফ ঢাকা ভবিষ্যতে পৃথিবীকে অবিরাম পাক খেয়ে যাওয়া ট্রেনের গল্প নিয়ে এই ছবি৷ যা সারা ফেলেছে দর্শকদের মধ্যে৷ যদিও ভারতে বড় পর্দায় দেখার সুযোগ পাওয়া যায়নি এখনও৷

news_picture_3792_snowpiercer-3পার্ক চান উক, কিমকি দুকের মতো পরিচালকদের দৌলতে দক্ষিণ কোরিয়ার এক বিশেষ গোত্রের ছবি এই মুহূর্তে বিশ্ব চলচ্চিত্রে রীতমতো আলোচনার বিষয়৷ ‘এক্সট্রিম এশিয়া সিনেমা’ নামে খ্যাত এই বিশেষ ধারায় এশিয়ার বেশ কিছু পরিচালকরা তাদের মতো ভায়োলেন্স, যৌনতার ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করেন ছবির মারফত৷ জাপানের তাকাশি মিকে-র মতো পরিচালকও এই আন্দোলনের অংশ৷ এক্সট্রিম ছবির হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিলেন জুন-হো৷ কিন্ত্ত পথিমধ্যে তার দর্শন কিঞ্চিত্ পাল্টেছে৷ তার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায় ‘স্নোপিয়ারসার’-এ৷ ‘স্নোপিয়ারসার’ কি কমিউনিজমের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজ বিপ্লবের কথা বলে? গল্পের সূত্র ধরে হেঁটে এর উত্তরে পৌঁছনোর চেষ্টা করা যেতে পারে৷ গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর পরে গোটা পৃথিবী বরফে ঢেকে গিয়েছে৷ পৃথিবীর প্রায় সমস্ত প্রাণী মৃত৷ এমন অবস্থায় প্রাণ রয়ে গিয়েছে শুধু এক ট্রেনের মধ্যেই৷ বিশেষভাবে বিছানো রেলপথ ধরে বরফাবৃত পৃথিবীকে পাক খেয়ে চলেছে এই ট্রেন৷ যার চালকের আসনে রয়েছে উইলফোর্ড (এড হ্যারিস), যার স্থান স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনের একেবারে সামনে৷ আর তারপর থেকে যত ট্রেনের পিছন দিকে যাওয়া যায়, আর্থ-সামাজিক অবস্থানের নিরিখে যারা তত তলায়, তাদের অবস্থান ট্রেনের তত পিছনের দিকে৷ একেবারে শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের বাস শেষ কামরায়৷ গিলিয়াম (জন হার্ট)-এব নেতৃত্বে যারা বারবার চেষ্টা করেছে ট্রেনের দখল নেওয়ার৷ কিন্ত্ত প্রতিবারের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে৷ কেটে গিয়েছে বহু বছর এবার কার্টিস (ক্রিস ইভান)-এর নেতৃত্বে একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে তারা৷ শেষ কামরা থেকে একে একে কামরা জয় করে তাদের ইঞ্জিনে পৌঁছনোর জার্নিই এই ছবির গল্প৷

কাছাকাছি সময়ের মধ্যে মুক্তি পাওয়া বেশ কিছু সায়েন্স ফিকশনেই ‘প্রোলেতারিয়েত’দের অধিকার অর্জনের যুদ্ধ, শ্রেণিবৈষম্যকে কল্পবিজ্ঞানের মোড়কে পরিবেশনের চেষ্টা হয়েছে৷ ‘ইলিসিয়াম’ যার অন্যতম উদাহরণ৷ ‘স্নোপিয়ারসার’-এও সেই শ্রেণিবৈষম্য থেকে প্রোলেতারিয়েতদের লড়াই– সবই আছে৷ কিন্ত্ত তেমনভাবে স্পেশাল এফেক্টের আড়ম্বর নেই৷ সায়েন্স ফিকশন বানানোর জন্য যে স্পেশাল এফেক্ট আসলে সব চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান তা তো বহুদিন আগেই প্রমাণ করে দিয়েছিল ‘প্রাইমার’-এর মতো ছবি৷ তাই দৃশ্যত কিংবা দর্শনগতভাবে এই ছবি যে খুব নতুন তা বলা যাবে না৷ কিন্ত্ত উইলফোর্ডের কাছে কার্টিস-এর পৌঁছানো, উইলফোর্ডের কার্টিসের অপেক্ষায় থাকা, ‘ক্ষমতার নিজস্ব নাম আছে… গোত্র আছে, তার সঙ্গে কী বুর্জোয়া, কী প্রোলেতারিয়েত, কারও কোনও মিত্রতা নেই, নেই বৈরিতাও’, তা ছবিতে উইলফোর্ড আর কার্টিসের কথোপকথোনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ছবির নতুনত্ব৷ যে অধিকার অর্জনের জন্য এক শ্রেণির লড়াই, সেই অধিকারেরই বেশি তাগিদ ওই শ্রেণির হয়ে ওঠার, এভাবেই যেন ছবিটি শেষ করতে চান পরিচালক, সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে তার কৃতিত্ব৷

‘লে ট্রান্সপারসেনিজ’ নামের ফরাসি গ্রাফিক নভেল অবলম্বনে নির্মিত হলেও ‘স্নোপিয়রসার’ দক্ষিণ কোরিয়ার ছবির দর্শনকে হলিউডে পৌঁছে দেওয়ার বড় মাইলস্টোন হিসাবে ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবেই চিহ্নিত হবে৷ মনে রাখতে হবে, সময়টা সত্যি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকই প্রায় একসঙ্গে হলিউড-যাত্রা শুরু করলেন৷ বং জুন-হো ‘স্নোপিয়ারসার’ দিয়ে আর পার্ক চান উক ‘স্টোকার’ দিয়ে৷ ইতিহাস নিঃসন্দেহে এব সাক্ষী থাকবে৷-ওয়েবসাইট।