Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আন্দোলন নিয়ে দোটানায় জামায়াত

যুদ্ধাপরাধের বিচার, শীর্ষনেতাদের ওপর ফাঁসির খড়গ, দলীয় নিবন্ধন বাতিল, নেতাকর্মীদের ওপর মামলার হুলিয়াসহ অস্তিত্ব সঙ্কটে কঠিন সময় পার করছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াতে ইসলামী। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির ঘোষিত ঈদের পর আন্দোলন নিয়ে দোটানায় রয়েছে দলটি। তাদের শীর্ষ পর্যায়ের একটি গ্রুপ আন্দোলনের পক্ষে মত দিলেও বৃহত্তর পক্ষটি এই মুহূর্তে আন্দোলনে রাজি নয়। বরং তাদের অভিমত, বিএনপির সঙ্গে জোটে নামমাত্র সঙ্গী হয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায় বিএনপির আন্দোলনের ফাঁদে পড়ে নিজেদের আরও ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। দলটির ঘনিষ্ঠসূত্র এসব তথ্য জানায়।

dc35657f0f284f1cefcdd62d1cc08620_XLসূত্রমতে, বর্তমান সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করতে বিএনপি ঈদের পর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন করতে চায়। সেই আন্দোলনে সঙ্গী হিসেবে পেতে চায় জামায়াতকে। কারণ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যদলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি নেই বললে চলে। আন্দোলনের পরিকল্পনা ঠিক করতে সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে জামায়াতের পক্ষে দলটির নায়েবে আমির একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিচারাধীন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদীসহ প্রবাসী জামায়াত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা তারেকের সঙ্গে ইফতার মাহফিলেও অংশ নেন।

chardike-ad

জানা গেছে, বৈঠকে ঈদের পর ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে জামায়াতকে। বিষয়টি উপস্থিত নেতাদের মাধ্যমে দলটির শীর্ষপর্যায়ে জানানো হয়েছে। এরপর থেকেই মূলত ঈদের পর আন্দোলন করা নিয়ে দোটানায় রয়েছে জামায়াত। আন্দোলন নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। নেতাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ঈদের পর আন্দোলন করা নিয়ে দলটির নেতারা বিভক্ত। মাঠ পর্যায়ের একটি গ্রুপ সরকারকে চাপে রাখতে বিএনপির সঙ্গে ধারাবাহিক আন্দোলন করতে চায়। এজন্য অতি সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলটির নেতা আব্দুল হালিম, মঞ্জুরুল হক ভুঁইয়া আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা এই মুহূর্তে বিএনপির কথায় মাঠে না নামার পক্ষে মত দিয়েছেন। ওই গ্রুপটি বিএনপির আন্দোলনের ওপর কোনো ভরসা করতে পারছে না। তাদের মতে গত পাঁচ বছর বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করে তাদের কোনো কাজ হয়নি। বরং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। এখন নতুন করে আন্দোলন করলে আরও বিপাকে পড়তে হতে পারে। মামলার হুলিয়া থাকায় দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদসহ শীর্ষনেতাদের জেলে যেতে হতে পারে। একাধিক মামলার হুলিয়া নিয়ে এখনও তারা দল পরিচালনা করছেন। তাছাড়া আন্দোলন করলে জেলে আটক বিচারাধীন শীর্ষনেতাদের আরও বিপদে পড়তে হতে পারে, দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে এবং গণগ্রেপ্তারের পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে বলেও দলটির এ অংশের নেতাদের অভিমত।

জানা গেছে, জামায়াতের অন্যতম নীতিনির্ধারক ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর বিএনপির কথায় আন্দোলনে গেলে তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। দেশে ফিরতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমান সঙ্কট, ভবিষ্যতের আশঙ্কা সবকিছু বিবেচনা করে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে চায় জামায়াত। তবে বিএনপি জোটের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে থাকতে চায় দলটি। প্রয়োজনে জোটকে খুশি করতে দলটি বিএনপির সঙ্গে নামমাত্র কর্মসূচিও দিতে পারে বলে তাদের এক নেতা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঈদের পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শীর্ষনেতাদের একের পর এক বিচারের রায়। এ মুহূর্তে বিএনপির কথায় এখনই আন্দোলনে নেমে বাড়তি ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছেন নেতারা। অথচ গত পাঁচ বছর বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিলেও তাদের নেতাকর্মীকে মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে চায় দলটি।’

জামায়াতের এক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল দাবি করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াত কিছু কৌলশ নিতে পারে, তাই বলে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছে বিষয়টি সঠিক নয়। ঈদের পর থেকে সময়-সুযোগ বুঝে তারা আন্দোলন করতে পারে বলেও আভাস দেন তিনি।’

জানা গেছে, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মামলার হুলিয়া নিয়ে দল পরিচালনা করলেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন তাদের শীর্ষনেতাদের ছেলেরা। মামলা-মোকাদ্দমায় জড়ানো হতে পারে এ আশঙ্কায় তাদের দলের পদ পদবীতে রাখা হয়নি। দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীসহ শীর্ষ জামায়াত নেতাদের ছেলেরা দলটির পদ-পদবীতে না থাকলেও নেপথ্যে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার ধারাবাহিকতায় অতি সম্প্রতি সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গিয়ে বিএনপিজোট নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ও বৈঠক করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অনানুষ্ঠানিক দেখা সাক্ষাতের আড়ালে আন্দোলন পরিকল্পনাসহ জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। বর্তমান।