বেতন-বোনাস ও বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনরত তুবা গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা অবশেষে ঈদের একদিন আগে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বোরবার থেকে দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়ি লাইলী বেগমকে কারখানা ভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় তুবার নিজস্ব কারখানা ভবনে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের নেতৃত্বে সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। এসময়, গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন শ্রমিকরা। তাদের দাবি- মে, জুন, জুলাই তিন মাসের বেতন, ওভার টাইম ও ঈদ বোনাস।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু জানিয়েছেন, সমস্যার সুরাহা না হলে শ্রমিকেরা এখানেই ঈদ করবেন। তারা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, আমরা সরকারসহ সব জায়গায় চেষ্টা করেছি। আমাদের করার কিছুই নাই। আমরা সমস্যা সমাধানে কারখানা ভবনের দুটি ফ্লোর বিক্রি করতে চেয়েছি। কিন্তু কেউ কিনতে চায় না, অনেকে কম দাম বলে। বাজার দরের মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দাম দিতে চায়। এটা নিয়ে আমাদের কিছুই করার নাই।
তুবা গ্রুপের কয়েকজন পোশাক শ্রমিক ও বিজিএমইএ নেতারা জানান, রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় তুবা গ্রুপের কারখানা ভবনে গত শুক্রবার বিকাল থেকে তিন মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে শ্রমিকরা দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়ি ও শ্যালক অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় মালিক পক্ষ এক মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দেয়ার কথা বললেও শ্রমিকরা তা না মেনে আন্দোলন চালিয়ে যান।
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শ্যালক রুবেল হোসেনকে বেতন-ভাতার অর্থ জোগাড়ের জন্য কারখানা থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেন শ্রমিকরা।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুলাহ বণিক বার্তাকে বলেন, তুবা গ্রুপকে শেষ পর্যন্ত ঋণ দিতে রাজি হয়েছে ব্যাংক। মালিককে উপস্থিত করলেই ওই ঋণ অনুমোদন পাওয়া যাবে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কাল (আজ রোববার) শ্রমিকরা এক মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পাবেন।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তুবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১১ জন শ্রমিক নিহত ও দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় জামিন নিতে গেলে আদালত গত ৯ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠান। তার স্ত্রী তোবার চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারকে কারাগারে পাঠালেও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, বেতন-ভাতা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য আছে। কিন্তু দেলোয়ার হোসেনকে মুক্ত করতে বেতন-ভাতা বন্ধ করে এক ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে মালিকপক্ষ।
জানা যায়, তুবা গ্রুপের তুবা ফ্যাশনস, তুবা টেক্সটাইল, বুকশান গার্মেন্টস, তায়েব ডিজাইন ও মিতা ডিজাইন— এই পাঁচ কারখানায় কাজ করেন তিন হাজার শ্রমিক। তারা মে, জুন ও জুলাই মাসের বেতন পাননি। বেতন-ভাতার দাবিতে গত বুধবার তোবার ১ হাজার ২০০ শ্রমিক বিজিএমইএ ভবন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখেন।সূত্রঃ বণিকবার্তা