Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শবে কদরের মাহাত্ম্য

294631_271118152904755_1270686_nআরবীতে ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ এর অর্থ হল শবে কদর। শব মানে রাত আর ক্বাদর মানে তকদির/ ভাগ্য । অর্থাৎ শবে কদর এর মানে ভাগ্য রজনী। এই রাতে মহান আল্লাহ তাআলা আগামী এক বছরের জন্য রুযী, মৃত্যু ও ঘটনাঘটন কথা লিপিবদ্ধ করে থাকেন। যেমন

তিনি এ কথা কুরআনে বলেন,”এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপুর্ন বিষয় স্থিরীকৃত হয়” (৪৪/৪)

chardike-ad

শবে কদরের মাহাত্ম্য

১। শবে কদরের রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও মাহাত্য। মহান আল্লাহ এই রাতে কুরআন অবতীর্ন করেছেন এবং সে রাতের মাহাত্ম্য ও ফযীলত বর্ননা করার জন্য পূর্ন একটি সূরা অবতীর্ন করেছেন এবং নামকরনও হয়েছে আল-ক্বাদর।

মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে। শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। “(৯৭/১-৩)

২। শবে কদরের রাত হল মুবারাক রাত, অতি বর্কতময় রাত, কল্যান ও মঙ্গলময় রাত।

মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি একে (কুরআন) নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। “(৪৪/৩)

কেউ যদি লাইলাতুল কদরের রাতেপূর্ণ ঈমান নিয়ে আল্লাহর কাছে পুরস্কারের আশায়  নামাজ পড়ে তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী,খণ্ড ৩, বুক অব লাইলাতুল কদর, হাদিস নং২০১৪)

 

শবে কদরের রাত কোনটি

শবে কদরের রাত কোনটি এ নিয়ে বিশেষজ্ঞগণ প্রায় ৪০ টির বেশি মত দিয়েছেন।সহীহ হাদিস অনুসারে রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাত গুলোর যে কোন একটি রাত্রি শবে কদরের রাত।

মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাত গুলিতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।” ( বুখারী হাদিস,খণ্ড ৩, বুক অব লাইলাতুল কদর, হাদিস নং২০১৭)

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ,” আমি শবে কদরের সম্বন্ধে তোমাদেরকে খবর দেওয়ার জন্য বের হয়ে এলাম। কিন্তু অমুক ও অমুকের কলহ করার ফলে শবে কদরের সে খবর তুলে নেওয়া হল। এতে সম্ভবত তোমাদের জন্য মঙ্গল আছে।সুতরাং তোমরা শেষ রমজানের শেষ দশ দিনের ৫ম, ৭ম, ৯ম রাতে তা অনুসন্ধান কর।(বুখারী হাদিস,খণ্ড ১,বুক অব ঈমান হাদিস নং ৪৯)

উবাই বিন কা’ব থেকে বর্ণিত, “আল্লাহর নামে বলছি আমি শুনেছি শু’বা বলেছে সম্ভবত লাইলাতুল কদরের রাত ২৭ রোজায়।কারন নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই রাতে আমাদের নামায পড়তে বলেছেন”।(সহীহ মুসলিম,খণ্ড ২,বুক অব ফাস্টিং, হাদিস নং২৩৬৪)

এছাড়া একটি হাদিস আছে, তোমরা লাইলাতুল কদরের রাতকে খুঁজবে ২১,২৩,২৫,২৭ রোজার রাতে ও রমজান মাসের শেষ রাতে।(তিরমিযী)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজান মাসের শেষ দশ দিনে ইতেকাফ করতেন এবং লাইলাতুল কদরে কে খুঁজতেন।(সহীহ বুখারী,খণ্ড ৩,বুক অব ইতিকাফ হাদিস নং ২০২০)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেন, “তোমরা লাইলাতুল কদরের রাত কে খোঁজো শেষ দশ রাতে।যদি দুর্বল থাকো আর যদি রমজান মাসের প্রথম দিকে না পারো তাহলে শেষ সাতটা রাতের মধ্যে লাইলাতুল কদর কে খোঁজো” (সহীহ মুসলিম,)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেন, “কদরের এই রাত পড়বে রমজান মাসের  শেষ সাত দিনের ভেতরে” (সহীহ বুখারী,খণ্ড ৩, বুক অব লাইলাতুল কদর, হাদিস নং২০১৫)

তাই বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই মত দিয়েছেন যে লাইলাতুল কদরের সঠিক  রাত কবে তা সঠিক কেউ  জানে  না।তবে এই রাত রমযান মাসের মধ্যেই আছে এবং রমযান মাসের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যেই।

শবে কদরকে নির্দিষ্ট না করার  কারন হচ্ছে যাতে বান্দা কেবল একটি রাত জাগরন ও কিয়াম করেই যেন ক্ষ্যান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের ফযীলতের উপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদাত ত্যগ করে না বসে।তাই বান্দার উচিত শেষ দশকের কোন রাতকেই যেন কম গুরুত্ব না দেয় এবং পুরোটাই ইবাদাতের মাধ্যমে শবে কদর অন্বেষন করে।

 

শবে কদরের দূআ

মা আয়েশা (রা) হতে বর্নিত,  তিনি বলেন,” হে আল্লাহর রাসুল! আমি শবে কদর লাভ করলে কি দুআ পাঠ করব ?” উত্তরে তিনি বললেন,”তুমি বলো,আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন কারীমুন তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নী।”

অর্থঃ হে আল্লাহ নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল(মহানুভব), ক্ষমাকে পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।(তিরমিজি ৩৫১২)

হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সঃ) রমজান মাসের শেষ দশ দিনে কোমর বন্ধনী শক্ত করতে বাঁধতেন অর্থাৎ বেশি পরিশ্রম করতেন, সংযত থাকতেন স্ত্রী সম্পর্ক থেকে, সারা রাত নামায পড়তেন এবং পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন নামায পড়ার জন্য। (সহীহ বুখারী,বুক অব ফাস্টিং, খণ্ড ৩,  হাদিস নং ২০২৪)

নবী করিম (সঃ) রমজানের শেষ দশ রাতে বেশি বেশি নামাজ পড়তেন, দোয়া করতেন, যিকির করতেন।(সহীহ মুসলিম,খণ্ড ২,বুক অব ফাস্টিং, হাদিস নং২৬৪৪)

 

লাইলাতুল কদরের কিছু নিদর্শন

সহীহ হাদিসে লাইলাতুল কদরের কিছু নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে।তবে এগুলো এই রাত পার হয়ে সকাল হলে দেখা যায়।

সহীহ মুসলিমে আছে, লাইলাতুল কদরের রাতে পরের সকালে সূর্যের কোন কিরণ থাকবেনা যতক্ষন না তা মাথার উপর আসে।

এই রাতের চাঁদ দেখতে থালার মত হবে।মাসের শেষের চাঁদের মত।

মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন,”শবে কদরের রাত উজ্জ্বল। নাতিশীতোষ্ণ;না ঠান্ডা, না গরম” (মুসনাদ,তাবারানী)

আল্লাহ পাক আমাদের সকল কে শবে কদরের রাত অন্বেষন করার তাউফিক দিন।

ডঃ যাকির নায়েকের লেকচার থেকে সংগৃহীত।