Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান…

মাঝে একটা মরদেহ রেখে চারপাশ থেকে মাথা নুয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন একদল চিকিৎসক! এমন এক ছবি ক’দিন ধরে আলোড়ন তুলেছে সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে। মাঝের বিছানায় নিথর শুয়ে থাকা চীনা বালকটির অভাবনীয় কীর্তির গল্পটা শুনলে অবশ্য যে কারোরই শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসার কথা!

liang-yaoyi-11-year-old-chinese-boy-with-brain-tumor-donates-organs-body-to-save-others-01ব্রেনে জন্ম নেওয়া টিউমার একটা সময় ক্যান্সার হয়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ছোট্ট লিয়াংয়ের শরীরে। এগারো বছরের যে বয়সটায় তাঁর দস্যিপনা করে বেড়ানোর কথা সে বয়সেই কিনা তাকে মৃত্যুর সাথে লড়তে হল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে!

chardike-ad

কিন্তু এমন গল্প তো নতুন কিছুও নয়? প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে দুনিয়াজুড়ে কতো শিশুপ্রাণ অকালে ঝড়ে যাচ্ছে কি বিদঘুটে সব রোগের কাছে হার মেনে! কিন্তু এতো অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসে চলে যাওয়াটা ঠিক মানতে পারছিল না লিয়াং ইয়াওই। অতটুকু ছেলের মনটায়, টিউমারের সংক্রমণে দিনকে দিন অচল হয়ে যাওয়া মাথাটায় জেদ চাপলো এভাবে এতো তাড়াতাড়ি সে কিছুতেই দুনিয়া ছাড়বে না! তাই বলে মৃত্যুকেও যে ঠেকানোর কোন উপায় নেই!

তবে? হ্যা লিয়াং মরে গিয়েও বেঁচে থাকবে তাঁরই মতো অন্য কোন শিশুর শরীরে! আসন্ন অবশ্যম্ভাবী পুত্রবিয়োগের যাতনায় কাতর মা-বাবাকে রাজী করানোটা খুব সহজ ছিল না। কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী পুত্রের জেদের কাছে হার মানলেন বাবা-মা। বুকে পাথর চাপা দিয়ে ছেলের শেষ ইচ্ছেটুকু মেনে নিলেন। ঠিক হল, লিয়াংয়ের মৃত্যুর পর তাঁর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করে দেয়া হবে। কেন এমন সিদ্ধান্ত তাঁর? মৃত্যুর আগে লিয়াং বলে গিয়েছে, “বহু মানুষ পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। তারা মহান, আমিও তাদের মত মহৎ হতে চাই।

lee young_respect

 

সম্প্রতি চীনের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পর লিয়াংয়ের মৃতদেহ ঘিরে তিনবার মাথা নুয়ে শ্রদ্ধা জানান সেখানে উপস্থিত চিকিৎসকরা। যুগে যুগে জন্ম নেয়া এমন প্রাণগুলোর জন্যই হয়তো বাংলার কবিগুরু লিখে গেছেন, উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তাঁর ক্ষয় নাই

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ ফজলুল বারী, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক