বেঁচে থাকার তাগিদে বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদূর লিবিয়ায়। গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে কর্মরত অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যাওয়া ১৩ বাংলাদেশীর ভাগ্যে জুটছে না নিজ দেশের মাটিটুকুও। মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থা না থাকায় লিবিয়াতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছেন ওই হতভাগ্য বাংলাদেশীরা। সর্বশেষ গত ২১ জুন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত দুই বাংলাদেশী ভাইয়ের লাশ দেশে পাঠাতে সক্ষম হয় লিবিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জাানা গেছে, ওই ১৩ জনের মধ্যে ৫ জন সম্প্রতি দুটি ভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু যুদ্ধাবস্থা চলায় লিবিয়ায় বহির্বিশ্ব থেকে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শীঘ্রই সেটা চালু হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘ সময় লাশ সংরক্ষণের কোন সুব্যস্থাও করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় নিহতদের পরিবারগুলোর অনুমতি নিয়ে তাদেরকে লিবিয়ার মাটিতেই দাফনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যেই দু’জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস।
পরিবারের অনুমতি মেলায় প্রবাসের মাটিতে সমাহিত হয়েছেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ফুল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া এবং ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সদর আলীর ছেলে মিলন হোসেন। পারিবারিক সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রফিকুল ইসলামের ছেলে মশিউর রহমান, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আলী শেখের ছেলে শেখ মোহাম্মদ মিলন, একই উপজেলার সরওয়ার মোল্লার ছেলে মুরাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামাল ভুইয়া, কুমিল্লার মকবুল হোসেন, কিশোরগঞ্জের জামাল মিয়া, জামালপুরের বেলায়েত হোসেন, মানিকগঞ্জের মজিদ হোসেন, নোয়াখালীর মাহফুজুর রহমান এবং মৌলভীবাজারের সেলিম আহমেদের লাশ।
দূতাবাস ও মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে মশিউর রহমান, শেখ মোহাম্মদ মিলন, সরওয়ার মোল্লা মুরাদ টাইলস টেকনিশয়ান হিসেবে কাজ করতেন। তারা একটি ভবনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গেলে ৬ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ওই ভবনে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই ওই তিনজন নিহত হন।
এর আগের দিন বিকেলে ত্রিপোলির সাররাজ এলাকার একটি পানি বিশুদ্ধকরণ কোম্পানিতে হামলায় মারা যান নরসিংদীর মনির মিয়া ও ঝিনাইদহের মিলন হোসেন। এ দু’জনসহ মোট ১৪ বাংলাদেশি সাররাজ এলাকার আফিয়া লিবিয়া পানি বিশুদ্ধকরণ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন বিকাল চারটার দিকে সেখানে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করলে মিলন ও মনির মারা যান। আহত হন কক্সবাজারের আবদুল হামিদ ও হবিগঞ্জের আম্বর আলী। আহতদের চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। বাকি ১০ জন সুস্থ আছেন। তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, ত্রিপোলির মূল বিমানবন্দরের দখল নিয়ে দু’টি পক্ষের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত সংঘর্ষ চলছে।
গত ৩০ জুন আরেকটি পৃথক ঘটনায় নিহত হন বাহ্মণবাড়িয়ার কামাল হোসেন। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে দেশটিতে মারা যান।
ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের কল্যাণ শাখার পরিচালক মুহ: মুহসীন চৌধুরীর বরাত দিয়ে বাংলানিউজ২৪.কম জানিয়েছে, নিহত এসব বাংলাদেশির ওয়ারিশদের ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য তিন লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।
এর আগে গত ২১ জুন রাতে লিবিয়ার বেনগাজি শহরের সামা লিবিয়া নামের একটি পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানার আবাসিক ক্যাম্পে ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মোহাম্মদ মিলন ও মোহাম্মদ স্বপন মারা যান। তারা দু’জন ভাই। রাতে বিশ্রাম নেওয়ার সময় হঠাৎ ক্যাম্পের দেয়ালে একটি ক্ষেপণাস্ত্র লাগলে তারা নিহত হন। তবে তাদের লাশ দেশে পাঠাতে সক্ষম হয় দূতাবাস।
গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে দেশটিতে তিন শতাধিক লিবিয়ান নাগরিকসহ অনেক বিদেশি নিহত হয়েছেন।