Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রশ্নবিদ্ধ রাজপথ আন্দোলন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় বিরোধী জোট

বক্তব্য রাখছেন  ফেরী দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারবর্গের মুখপাত্র ইয়ো কিউং-গিউন। ছবিঃ ইয়নহাপ।
বক্তব্য রাখছেন ফেরী দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারবর্গের মুখপাত্র ইয়ো কিউং-গিউন। ছবিঃ ইয়নহাপ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় এপ্রিলের ভয়াবহ ফেরী দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবীতে সরকার বিরোধী জোট নিউ পলিটিক্স অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির (এনপিএডি) রাজপথের আন্দোলন বন্ধ করতে জোটটির নেতৃস্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওই দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্বজনরাই। বৃহস্পতিবার সিউলের একটি হাসপাতালে ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো এক কিশোরীর পিতার ৪৬ দিনের অনশন ভাঙাতে গিয়ে তাঁরা এ আহ্বান জানান। এনপিএডির রাজপথের এ আন্দোলন নিয়ে জোটের অভ্যন্তরেই নানা প্রশ্নের তৈরি হয়েছিল এবং স্বজনহারা পরিবারগুলোর এমন আহ্বান সেসব প্রশ্নকেই আরও প্রকট করে তুলেছে।

মর্মান্তিক ফেরী দুর্ঘটনায় ১৬ বছরের কিশোরী কন্যাকে হারানো কিম ইয়ং-ওহ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের সনাক্ত করার স্বার্থে আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত একটি বিশেষ কমিটি গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করতে গত ১৪ জুলাই থেকে অনশন শুরু করেন। ১৯ আগস্ট এনপিএডি’র একজন সাংসদ মুন জায়ে-ইন ওই পিতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশনে যোগ দেন। নিহতদের পরিবারবর্গের অনুরোধে বৃহস্পতিবার কিমের সাথে মুনও তাঁর অনশন ভঙ্গ করেছেন।

chardike-ad

উল্লেখ্য, ফেরী দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কোরিয়ান সংসদে ‘সেওল বিল’ শিরোনামে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। তবে ঘটনা তদন্তে প্রস্তাবিত বিশেষ কমিটিকে স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা ও দোষীদের অভিযুক্ত করার ক্ষমতা দিতে হবে- নিহতদের পরিবারগুলোর এমন দাবীর প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন স্যানুরী পার্টির তরফে বলা হয়, “এটা আইন বিরোধী এবং অগ্রহণযোগ্য।” ওদিকে প্রস্তাবিত কমিটির সদস্যরা কিভাবে নিযুক্ত হবেন তা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সাথে বিরোধী জোটের মতানৈক্য তৈরি হয়। কয়েক সপ্তাহ সংসদীয় আলোচনার পর উভয়পক্ষ সরকার, বিরোধী জোট ও নিহতদের পরিবারবর্গের পছন্দ মোতাবেক কমিটির সদস্য নির্বাচনের ব্যাপারে একমত হয়। কিন্তু কমিটিকে কোনভাবেই কার্যনির্বাহী ক্ষমতা দেয়া হবে না- সরকারের এমন অনড় অবস্থানে হতাহতদের স্বজনরা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

এনপিএডি'র র‍্যালি। ছবি" ইয়নহাপ।
এনপিএডি’র র‍্যালি। ছবি” ইয়নহাপ।

এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী জোট এনপিএডির সংসদীয় দলের নেতা পার্ক ইয়ং সান রবিবার একটি ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল থেকে এ প্রস্তাবকে ‘বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এর পরপরই আলোচনা প্রস্তাবে রাজী হতে স্যানুরী পার্টি ও প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হে’র উপর চাপ প্রয়োগ করতে এনপিএডির সাংসদরা জাতীয় সংসদের বাইরে অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করেন। বুধবার সরকার ও বিরোধী জোট পৃথক পৃথকভাবে নিহতদের পরিবারবর্গের সাথে বৈঠক করে বিলের উপর থেকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা চালিয়েছেন।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার কিমের অনশন ভাঙাতে গিয়ে নিহতদের পরিবারবর্গের মুখপাত্র ইয়ো কিউং-গিউন বিরোধী জোটের সাংসদদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা বিরোধী সাংসদদের আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা রাজপথের এই কর্মসূচী সমাপ্ত করে সংসদে ফিরে যান এবং একটি নিরাপদ কোরিয়া গঠনে আপনাদের ভূমিকা পালন করুন।” এছাড়া দুটি স্থানীয় গণমাধ্যমের জনমত জরিপে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬০ শতাংশেরও বেশী অংশগ্রহনকারী এনপিএডি’র এই সংসদ বর্জিত আন্দোলনের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন।

জোটের ১৫ জন সাংসদও বৃহস্পতিবার সকালে এক বৈঠক শেষে ‘এমন কর্মসূচী দলের পক্ষে ইতিবাচক জনমত তৈরি করবে না’ মন্তব্য করে জানিয়েছেন, তাঁরা মনে করেন দলের কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন আসা উচিৎ। এ ব্যাপারে সংসদীয় দলের নেতার সাথে দেখা করে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন বলেও জানান ওই সাংসদরা।

বিরোধীদের সংসদে ফেরার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্ক বলেছেন, “সংসদই হচ্ছে যুদ্ধ করার সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকর জায়গা।” জনমত জরিপের বিষয়টিকে সামনে এনে প্রতিপক্ষের সমালোচনা করতে ছাড়ছে না স্যানুরী পার্টিও। সংসদীয় দলের সভায় পার্টির চেয়ারম্যান কিম মু সুং বলছিলেন, “জনগন তাঁদের এ কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করেছে।” তিনি বিরোধী সাংসদদেরকে জনমত জরিপগুলো গুরুত্বের সাথে নেয়ার আহ্বান জানান।

তবে এতোকিছুর পরও এনপিএডি সহসাই তাঁদের কর্মসূচী থেকে সরে আসছে না বলেই দাবী করেছেন জোটের সংসদীয় দলের নেতা। তবে ‘অন্তত শনিবার পর্যন্ত কর্মসূচী চলবে’, পার্ক ইয়ং সানের এমন বক্তব্যকে কর্মসূচীর সমাপ্তির ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন অনেকে।

ওদিকে স্বাধীন কমিশনের দাবীতে ৪৬ দিন অনশন করা কিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অনশন ভঙ্গ করার মানে এই নয় যে তিনি রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। প্রয়োজনে আবারও কর্মসূচীতে ফিরে যাবেন বলেও এ সময় তিনি  মন্তব্য করেন।

এপ্রিলে সংঘটিত কোরিয়ার স্মরনকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ফেরী দুর্ঘটনায় ৩ শতাধিক যাত্রী প্রাণ হারান যাদের অধিকাংশই ছিলেন একটি স্কুলের শিক্ষার্থী।