Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ বাইশে শ্রাবণ। বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৩তম প্রয়াণ দিবস।

আজ থেকে ৭৩ বছর আগে বাংলা ১৩৪৮ সনের এদিনে (৬ আগষ্ট ১৯৪১) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির শ্যামল প্রাঙ্গণে শ্রাবণের বর্ষণসিক্ত পরিবেশে তিনি পরলোকগমন করেন।

chardike-ad

Tagore3কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির শ্যামল আঙ্গিনায় ১২৬৮ সনের ২৫বৈশাখ (১৮৬১ খ্রীস্টাব্দের ৮মে) যিনি জন্মেছিলেন তিনিই পরবর্তিতে বাংলা সাহিত্যের দিকপাল হয়ে উঠেন। সমৃদ্ধ করে তোলেন সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রকে।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্গী, চিএশিল্গী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, ছোট গল্পকার,ভাষাবিদ। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এমন কোন দিক নেই যানিয়ে তিনি লেখালেখি করেননি।

বাংলা সাহিত্য-সংস্কতির বিকাশে যার অফুরন্ত অবদান সেই কবি প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে যখন ইহধাম ত্যাগ করেন সেদিন শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছিলেন – ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারে কোলে/ বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।’

আশি বছরের জীবন সাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অজস্র অমরতার শ্বাশত বার্তায়। তাই জন্মদিন নিয়ে তিনি লিখেছিলেন- ‘ওই মহামানব আসে/ দিকে দিকে রোমাঞ্চ/ মর্তধুলির ঘাসে ঘাসে…’।

সেই তিনিই আবার জীবন সায়াহ্নে লিখলেন- ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক।’ আরও বললেন- ‘আমার এ জন্মদিন মাঝে আমি হারা/ আমি চাহি বন্ধুজন যারা/ তাহাদের হাতের পরশে/ মর্ত্যরে অন্তিমপ্রীতি রসে/ নিয়ে যাবো জীবনের চরম প্রসাদ/নিয়ে যাবো মানুষের শেষ আশীর্বাদ…’।

মানুষের শেষ আশীর্বাদ নিয়েই এই মহান মানবতাবাদী দার্শনিক- কবি অনিঃশেষ অনির্বাণ শিখার মতই জ্বলছেন আজও বাংলা সাহিত্যের সব অঙ্গনেই।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনেক কিছুরই প্রথম তিনি। ছোটগল্পের জনক, এমনকি বাংলা গদ্যের আধুনিকায়নের পথিকৃৎও তিনি। নোবেল জয় করে একটি প্রদেশিক (তৎকালীন) ভাষাকে বিশ্ব সাহিত্যে স্থান করে দিয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত চিঠিও যে কী অসাধারণ ললিল সাহিত্য আর দার্শনিকতার দৃষ্টান্ত হতে পারে, তাঁর ‘ছিন্নপত্র’ সৃষ্টির আগে তার তো কোন নজীর ছিল না। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, প্রবন্ধে, নতুন সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, অসাধারণ সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিসংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তাজাগানিয়া অজস্র নিবন্ধে, এমনকি চিত্রকলায়ও- সবত্রই রবীন্দ্রনাথ চির নতুন।

রবীন্দ্রনাথই আবার গভীর জীবন তৃষ্ণায় লিখেছেন- ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই। এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে/ জীবন হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।’

রবীন্দ্রনাথ অবশ্য জন্ম-মৃত্যুর মাঝে তফাত দেখেছেন খুব সামান্যই। সৃষ্টিই যে এই নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বরতা দেয়, সে কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন বলেই তিনি অমন দৃঢ়তায় বলতে পেরেছেন- মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের/মূল্য দিতে হয়/ সে প্রাণ অমৃতলোকে/ মৃত্যুকে করে জয়।’

২০১১ সালে ছিলো রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশ এবং ভারতে যৌথভাবে বিশ্ব কবির সার্ধশত জন্মদিন পালন করে। তাঁর প্রয়ান দিবস উপলক্ষেও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠকুরের ৭৩-তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী আজবুধবার বিকেল ৪ টায় একাডেমীর শামসুর রহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দিবেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান। একক বক্তব্য প্রদান করবেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আবৃত্তি ও রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করা হবে।

এদিকে বিশ্ব কবির প্রয়ান দিবসউপলক্ষ্যে স্যাটেলাইট টেলিভিশন ইটিভি আজ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।