Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যিনি দুনিয়ায় বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন

দুনিয়ায় কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না কে বেহেশতে যাবে আর কে যাবে না। এ অবস্থায় কেউ যদি নিশ্চিতভাবে এ ঘোষণা শুনে যায় যে, সে বেহেশতে যাবে_ তার চেয়ে ভাগ্যবান আর কে হতে পারে? আবু উবায়দা ছিলেন তেমনি এক ব্যক্তি। জীবদ্দশায়ই যে ১০ জনকে অগ্রিম বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল, আবু উবায়দা তাদের অন্যতম। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি দোজখ থেকে বাঁচার জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রাণ দিতেও দ্বিধা করেননি। images (10)আবু উবায়দা ইবনে আমের ইবনে জাররা। তার সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন আমিন থাকেন আর এ উম্মতের আমিন হলেন আবু উবায়দা। আমিন মানে আমানতদার, বিশ্বস্ত_ যার কাঁধে পরম আস্থার সঙ্গে গোটা উম্মতের দায়িত্ব দেয়া যায়।

একবার ইয়ামেন থেকে নাজরানের প্রতিনিধি দল আসে এবং রাসূল (সা.) এর কাছে আবেদন করে তিনি যেন তাদের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে পাঠান যিনি হবেন আমিন, বিশ্বাসযোগ্য, যার ওপর তারা আস্থা রাখতে পারে। তিনি আমাদের বিশ্বস্ততার সঙ্গে সবকিছু জ্ঞান দেবেন এবং আমাদের নানা ব্যাপারে ফয়সালা করবেন। রাসূল (সা.) তাদের বললেন, তোমরা সন্ধ্যায় আমার কাছে এসো। আমি তোমাদের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে পাঠাব। অনেক সাহাবি রাসূলের এ প্রশংসিত ব্যক্তি হওয়ার জন্য উদ্গ্রীব ছিলেন। ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, আমিও রাসূলের সেই প্রশংসিত ব্যক্তিটি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে ছিলাম। অনেকের সঙ্গে রাসূলের কাছে উপস্থিত ছিলাম আমি। মনে মনে কামনা করছিলাম আমাকে যদি সেই প্রশংসিত ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়, তবে তা হবে অতি আনন্দের ও ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু রাসূল (সা.) আমাদের সামনে দেখেও কাকে যেন খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলেন। যখনই তার চোখ আবু উবায়দার ওপর পড়ল তখন তিনি তাকে ডাকলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত করলাম। তুমি তাদের সঙ্গে যাও। এটা ছিল আবু উবায়দার জন্য অতি সম্মানের ব্যাপার। বদর যুদ্ধ তার ত্যাগের জ্বলন্ত প্রমাণ।

chardike-ad

খাঁটি মোমিন হলো তারা, যাদের কাছে আল্লাহ, রাসূল ও দ্বীন ইসলাম তাদের বাবা, মা, স্ত্রী-সন্তান ও সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়। আবু উবায়দা ঈমানের সেই আমানত পুরোপুরি রক্ষা করেছেন বদর যুদ্ধে। বদরযুদ্ধ চলছে। সংখ্যায় ১ হাজারের চেয়েও বেশি শত্রু বাহিনী। তারা মুসলমানদের ৩১৩ জনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আক্রমণের ওপর আক্রমণ চলছে। তাদের ইচ্ছে হলো এ অল্পসংখ্যক মুসলিম বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে শেষ করে দেয়া। এভাবে দু’পক্ষই অপরপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। আবু উবায়দা ইবনে জাররা মুসলিম বাহিনীর সামনে আছেন। তিনি দেখতে পেলেন শত্রু বাহিনীর সামনে রয়েছেন তারই পিতা আবদুল্লাহ ইবনে জাররা। তিনি বীরদর্পে তলোয়ার চালিয়ে তার পিতাকে হটিয়ে দিলেন পেছনে। কিন্তু আবার তিনি ফিরে এলেন। আবার হটিয়ে দিলেন। বারবার ফিরিয়ে দেয়ার পরও তিনি ফিরে ফিরে এলেন। শেষ পর্যন্ত আবু উবায়দার তলোয়ার তার পিতার দেহকে দ্বিখ-িত করে দিল। সবাই তা দেখছিল আশ্চর্য হয়ে। রাসূল (সা.) এতে মুগ্ধ হন। মুগ্ধ হন স্বয়ং আল্লাহ। আবু উবায়দার প্রশংসা করে কোরআনের আয়াত নাজিল হয়।

আল্লাহ ও রাসূল অর্থাৎ দ্বীনের সামনে পিতা-মাতা বা আপনজনের কোনো স্থান নেই। যদি তারা সত্য পথের বিরোধী হয়। ওহুদ যুদ্ধের ব্যাপারে মক্কার বিভিন্ন গোত্রসহ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করল তারা বদরের প্রতিশোধ নেবে। এরই ফলশ্রুতিতে শেষ পর্যন্ত ওহুদ যুদ্ধ শুরু হলো। রাসূল (সা.) এর ওপর প্রচ- আকারে তীর আসতে লাগল। তখন তার পাশে ছিলেন শুধু ১০ জন মুসলমান। তারা রাসূলকে ঘিরে ধরে রাখলেন। তারা নিজের পিঠ পেতে দিয়ে রাসূলকে (সা.) তীরের আঘাত থেকে রক্ষা করতে লাগলেন। আবু উবায়দা ছিলেন সেই ১০ জনের একজন।

লেখক : ভিসি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

আলোকিত বাংলাদেশ থেকে নেওয়া।