Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনে যাবে বিএনপি

ঈদ শেষ হয়েছে। রাজনীতিতেও এখন নতুন হিসাব-নিকাশ। ঈদের পর কঠিন আন্দোলন করবে- আগেই জানিয়েছে বিএনপি। কেমন হবে এই আন্দোলন, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, এবার তাদের আন্দোলন হবে অহিংস। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, অহিংস আন্দোলনে বাধা দেয়া হবে না। তবে সরকার ও বিরোধী বিএনপি উভয়েই ভেতরে ভেতরে নানা পরিকল্পনা আঁটছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। ঈদের আগে তাদের নেতা-নেত্রীদের কথাবার্তায়ও ছিল উত্তাপ। তবে সরকার আশাবাদী যে, বিএনপি ধ্বংসাত্মক কিছু করবে না। অতীত থেকে তারা শিক্ষা নেবে। এজন্য সরকারের যুদ্ধংদেহী কোনো প্রস্তুতিও নেই। ঢাকা মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসও বলেছেন, তাদের আন্দোলন হবে অহিংস। তবে সরকার সর্বদা সতর্ক।

다운로드 (17)সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এরই মধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের গতিবিধি দেখে ব্যবস্থা নেয়ার। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে সরকার তাদের সহযোগিতা করবে। অহেতুক কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হয়, এটা চাচ্ছে না সরকার। তবে আপাতত কোনো বড় জমায়েত করতে দেবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এ দাবিতে অনড় থাকার কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতসহ জোটের শরিকরা সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেয়, যা দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। এতে জোটের নেতাকর্মীরা যেমন মামলা-মোকদ্দমার জালে জড়িয়েছেন, তেমনি সাধারণ মানুষেরও প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনায় সরকারের ধরপাকড় এবং নির্যাতনের ফলে জোটের নেতাকর্মীরাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন একই দাবিতে আবার তারা আন্দোলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির বিগত মহানগর কমিটি আন্দোলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবার মহানগরে নতুন নেতৃত্ব আনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। কমিটি ঘোষণার পর কিছুদিন ধরে তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। ফলে মহানগর আহ্বায়ক কমিটি নিজেরাই নিজেদের গুছিয়ে তুলতে পারছেন না। এক্ষেত্রে তারা সুষ্ঠুভাবে ওয়ার্ড, থানা ও নগর কমিটি গঠন করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কতটুকু সফল করতে পারবে- তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। এ কারণে বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন, দল শক্তিশালী না হওয়া পর্যন্ত অহিংস আন্দোলন ছাড়া কোনো গতি নেই।

chardike-ad

বিএনপি জোটের আন্দোলনের হুমকি-ধমকিতে সরকারের শীর্ষ মহল খুব একটা বিচলিত নয়। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম প্রসঙ্গে সরকারের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানোর মতো শক্তি বিএনপির নেই। কারণ তারা নিজেরাই সংগঠিত নয়। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বিএনপির আন্দোলনের মূল শক্তি জামায়াত-শিবির। তারা এবার পিছুটান দিয়েছে। কারণ বিগত আন্দোলনে বিএনপির চেয়ে জামায়াত-শিবিরই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও সরকার সতর্ক অবস্থায় থাকবে। শুধু প্রশাসন নয়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও সারা দেশে সতর্ক অবস্থায় থাকবে। ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির আন্দোলন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এর আগে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মাঠে দেখা হবে। আমাদেরও নেতাকর্মী আছে, জনগণ আছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার আওয়ামী লীগের যৌথ সভা রয়েছে। এ সভায় বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে নেতারা বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঈদের দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) কূটনীতিক, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সর্বসাধারণের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এরপর দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি তাদের উচিত হবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। তিনি বলেন, দেশে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন এখন জনগণের দাবি। এ দাবি মেনেই অবিলম্বে নির্বাচন দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পর বাকি সব নির্বাচন হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন নিয়ে জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের আন্দোলন অহিংস হবে। অহিংস আন্দোলনে সরকার বাধা দেবে না। আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বাগ্‌যুদ্ধ অব্যাহত আছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলন মানে যদি হয় বোমা মেরে ঘুমন্ত ড্রাইভারকে হত্যা করা, গাড়িতে পেট্রল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, রেললাইন উপড়ে ফেলা বা গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা- তাহলে সরকারও মানুষের জানমাল বাঁচাতে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নেবে। আর বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে সরকার তাদের সহযোগিতা করবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় না এলে আন্দোলনের বিকল্প থাকবে না। তিনি বলেন, বারবার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সরকারই সংঘাত ডেকে আনছে। তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। এজন্য ঢাকার আন্দোলনের দিকে সবার নজর রয়েছে। তাই ঢাকায় আন্দোলন হতেই হবে। আলোকিত বাংলাদেশ।