নানামুখী কর্মব্যস্ততা থেকে শুরু করে ডায়েটিং কিংবা কেউ কেউ নিছক খেয়াল-খুশি ও অভ্যাসবশত সকালের নাশতায় আগ্রহ দেখান না। কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন খাবারের ক্ষেত্রে সকালের নাশতা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ
স্বাস্থ্যের উন্নয়ন: প্রতিদিন সকালে নাশতা করার ফলে স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটে। সেই সঙ্গে এটি ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রেখে শরীরের চিনির সমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত নাশতা করলে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা এড়ানো যায়। তবে শারীরিক সুস্থতার কথা বিবেচনা করে নাশতায় সেটাই খাওয়া উচিত, যেটা গুরুপাক নয়।
শক্তিমত্তা বৃদ্ধি: নিয়মিত সকালের নাশতা গ্রহণ শক্তিমত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অনেক সহায়ক। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত নাশতা গ্রহণ করেন, তাদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি পায়। সারাদিন অল্প আয়েশ ও ক্লান্তিতে তারা প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারেন। সেই সঙ্গে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সময়মতো নাশতা সেরে কাজ শুরু করলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝেও মন-মেজাজ অনেক ফুরফুরে থাকে।
বিপাক ক্রিয়ার উন্নয়ন: সকালের নাশতার আরেকটি উপকারী দিক হচ্ছে বিপাক ক্রিয়ার উন্নয়ন। বিশেষ করে সময়মতো নাশতা গ্রহণ মানুষের বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি ঘটিয়ে সুস্থ-সবল করে তোলে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা সকালে খাবার খান না, তারা দিনের বাকি সময়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করেন, যা শরীরের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর। এর ফলে শারীরবৃত্তীয় নানা ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি ওজন বেড়ে যায়।
ব্যায়ামের জন্য উপকার: সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেকে ব্যয়াম করেন। কেউ হাঁটাহাঁটি করতেও বের হন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগান দেয়ার ক্ষেত্রে সকালের নাশতা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ব্যায়াম করার সময় শরীর থেকে অনেক শক্তি খরচ হয়, তার উপযুক্ত জোগান না এলে মানুষ হুট করে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য সকালে নিয়ম মেনে নাশতা করাটা জরুরি। অনেকে ঠিক ঘুম থেকে উঠে লম্বা সময় নিয়ে ওয়ার্কআউট করেন। এই সময়টাতে প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান না থাকলে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই জটিলতা এড়াতে নাশতাটা ঠিক সময়ে করে নিতে হবে।
ওজন কমানো: অনেকে মনে করেন শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলার জন্য সকালে নাশতা না খাওয়াই ভালো। কিন্তু নাশতায় চিনিজাতীয় খাবার পরিহার করে প্রোটিননির্ভর খাদ্য উপাদান বেছে নিলে, তা ওজন কমাতে সহায়তা করে। মিষ্টি ভরা ডোনার্ট, মিল্ক সেরিলাক কিংবা ওই জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে নাশতার উপযুক্ত উপকরণ হতে পারে ডিমের সাদা অংশ, ব্রেড, বাটার প্রভৃতি।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: সকালবেলায় নিয়মিত নাশতা গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত সকালে নাশতা গ্রহণ করেন, তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক ও সংবেদনশীলতা অর্জন করেন। খুব বেশি কিছু না শুধু একটা ডিমের অমলেট, একটা প্লেইন ব্রেড, এক টুকরো কেক, অল্প কিছু সবজি কিংবা সালাদজাতীয় খাবার সকালে নিয়ম করে খেলে, তা আপনার চিন্তাশক্তিকে বাড়িয়ে দেবে।
সুস্থ-সতেজ থাকা: সকালে নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করলে সারা দিন অন্তত শক্তি সংকটে পড়তে হয় না। এক্ষেত্রে মানুষ তার চাহিদা মিটিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে দিন পার করতে পারে। অনেক মানুষ সকালে নাশতা করার পরেও ক্ষুধা অনুভব করতে পারে, একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে তাদের নাশতা স্বাস্থ্যকর নয়। একটু সচেতনতার সঙ্গে নাশতা গ্রহণ করলে দ্রুত ক্ষুধাও যেমন লাগবে না, তেমনি সারা দিন সুস্থ থাকাটাও সহজ হবে। বণিকবার্তা।