দক্ষিণ কোরিয়ার ইনছনে ১৭তম এশিয়ান গেমসে দর্শকখরা নিয়মিত চিত্র। তবে এ গেমস নিয়েও গর্বের শেষ নেই কোরিয়ানদের। অত্যন্ত নিম্ন ব্যয়ের এ আসরে অংশ নিচ্ছে প্রায় ১০ হাজারের মতো অ্যাথলিট। ব্যয়ের দিক বিবেচনায় এ গেমসকে এশিয়া মহাদেশের জন্য ‘রোল মডেল’ হিসেবেই দেখছেন আয়োজকরা।
১৫ দিনের এশিয়াড আয়োজনে অনেক কিছুই নির্মাণ করতে হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইনছনে। তবে স্টেডিয়ামগুলোর বেশির ভাগই থাকে খালি। তাইওয়ানের গ্র্যান্ডস্লাম ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হেসিয়েহ সু ওয়েই ইনছনে মহিলা দ্বৈতের ফাইনালে জেতেন মাত্র ১০০ দর্শকের সামনে! কিছু ফুটবল ম্যাচে তো এর চেয়েও কম দর্শক ছিল।
ইনছন শহরের মেয়রের কপালে চিন্তার ভাঁজ। গেমস আয়োজনে তাদের মোট খরচ পড়বে ২০০ কোটি ডলারের মতো। এর বেশির ভাগই ঋণ করে নেয়া। কিন্তু দর্শকখরায় তাদের আয় হচ্ছে নিতান্তই কম। ফলে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন শহরটির মেয়র।
গেমস এখন মাঝ পথে। এ সময় পর্যন্ত কেবল ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের টিকিট বিক্রি করতে সমর্থ হয়েছেন আয়োজকরা, যা কিনা লক্ষ্যের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম। এটা স্বীকার করে নিয়ে আয়োজক কমিটির সেক্রেটারি কুয়োন কিউং স্যাং বলেন, ‘এটা সত্য যে, সাধারণ মানুষের আগ্রহ খুব বেশি নয়, এর কারণ কোরিয়ার তৃতীয় শহর হিসেবে এশিয়ান গেমস আয়োজন করছে ইনছন।’
দর্শকশূন্য স্টেডিয়াম অবশ্য এশিয়ান গেমসে নতুন কিছু নয়। ২০১০ সালে চীনের গুয়াংঝু ও ২০০৬ সালে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত গেমসেও ছিল একই চিত্র। কিন্তু একটি জায়গায় ইনছন আলাদা। তাদের মতো এত কম খরচে গেমস আয়োজন করতে পেরেছে কম শহরই।
গুয়াংঝু তো ২ হাজার কোটি ডলার খরচ করে কয়েকশ কোটি ডলার লোকসানের মুখে পড়ে। দোহা গেমসের খরচ ছিল ৩০০ কোটি ডলার। অলিম্পিকের খরচের বাহার দেখুন। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকের খরচ ছিল ৪ হাজার কোটি ডলার এবং এ বছরের শুরুতে রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের ব্যয় ছিল ৫ হাজার কোটি ডলার!
ব্যয়ের দিক বিবেচনায় নিয়ে কোরিয়ানরা অখুশি নয়। তারা মনে করছে, এত অল্প ব্যয় করাটা তাদের জন্য বিরাট এক সফলতা। কিউং স্যাং এ নিয়ে বলেন, ‘এশিয়াড নিঃসন্দেহে খুব দক্ষতার সঙ্গে এবং অর্থনৈতিকভাবে মিতব্যয়িতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যারা এশিয়াড আয়োজন করতে চায়, তাদের জন্য আমরা একটি ইতিবাচক বার্তাই দিয়ে রাখলাম। আগের আসরগুলো ছিল কেবলই শক্তিধর দেশগুলোর জন্য, কিন্তু আমরা ছোট দেশগুলোর জন্যও এ গেমসটা স্মরণীয় করে রাখতে পারব।’
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের সন্নিকটে অবস্থিত ইনছন শহর এশিয়ান গেমস আয়োজনের সুনাম কাজে লাগিয়ে এখন ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠতে আশাবাদী। নির্মিত নতুন নতুন অবকাঠামো, পার্ক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা শহরটিকে প্রাণবন্ত রাখবে বলেই তাদের আশা।
এ নিয়ে কিউং স্যাং বলেন, ‘এমন কিছু অদৃশ্য সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে, যা আপনি সংখ্যায় পরিমাপ করতে পারবেন না।’ ২০১৮ সালে এশিয়াডের পরবর্তী আসর অনুষ্ঠিত হবে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। অধিক ব্যয়ের ভয়ে ভিয়েতনাম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায়ই মূলত কপাল খুলে যায় ইন্দোনেশিয়ার। গেমস-সম্পর্কিত নানা তথ্য সংগ্রহ করতে ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ইনছনে। এএফপি