Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘পালানোর পথ পরিষ্কার করুন’

khaleda-ziaপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পালানোর পথ পরিষ্কার করে রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে বন্দি করার আগে নিজের পালানোর পথ পরিষ্কার করে রাখবেন। পাসপোর্ট, ভিসা লাগিয়ে রাখবেন, যাতে ঝটপট যেতে পারেন। কিন্তু জনগণ এমনভাবে রাস্তা বন্ধ করবে যে আর পালানোর পথ থাকবে না। তাই সময় থাকতে সাবধান হোন।’

chardike-ad

মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবি এবং গুম-খুন-নির্যাতন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেওয়ার প্রতিবাদে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।

সম্প্রতি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ কয়েকজন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেন, ‘প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করা হবে।’

মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে সরকার তাকে গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছে, এ অভিযোগ করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনও আমাকে দেশের বাইরে যেতে ভয় দেখিয়েছে। আমি ভয় পাইনি, বাইরেও যাইনি। হাসিনা, আমি গ্রেফতারে ভয় পাই না।’

তিনি বলেন, ‘১/১১-এর সময়ে তার (হাসিনা) নামে অনেক মামলা থাকলেও তিনি এবং তার দলের লোকজনের মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু আমার পরিবার এবং বিএনপির নেতাদের নামে মামলা সচল রেখে গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছেন।’

শেয়ারবাজার, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশে দুর্নীতি বাড়ে।’

খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডেসটিনি থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকা, হলমার্ক থেকে ৩৫ হাজার কোটি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি, বেসিক ব্যাংক থেকে ৪ হাজার ৫০০ কোটি, রূপালী ব্যাংক থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি, কৃষি ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি, জনতা ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজার থেকে সরকার প্রায় লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দুর্নীতি আর লুটপাটের জন্য এ সরকারকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন খালেদা জিয়া।

বর্তমান সরকারকে আবারও অবৈধ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তাদের আইন করার কোনো অধিকার নেই। এ সরকার সংসদে বসে একের পর এক আইন পাস করছে। তারা সম্প্রচার নীতিমালা, বিচারপতিদের অভিশংসন আইন করেছে।

তিনি বলেন, ‘বিচারকরা এমনিতেই অসহায়। অভিশংসন আইন করে তাদের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করুন। প্রতিবাদে এক দিন হরতাল দেওয়া হয়েছে। বন্ধ না হলে আরো কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

গণমাধ্যমকে সত্য প্রকাশে বাধা দিতেই সরকার সম্প্রচার নীতিমালা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির নেতৃত্বধীন জোটের ঐক্য অটুট আছে জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘যারা দেশপ্রেমিক, তারা আওয়ামী লীগের মতো বেইমানের সঙ্গে যেতে পারে না। জনগণের দুর্দিনে জোট আরো ঐক্যবদ্ধ হবে। জালিম সরকারের কাছ থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে সবাই থাকবে।’

পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের মিছিল-মিটিংয়ে গুলি চালাবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে চাই।’

র‌্যাব নষ্ট হয়ে গেছে- দাবি করে আবারও প্রতিষ্ঠানটির বিলুপ্তির দাবি করে বিএনপি প্রধান।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব জানেন, এ দাবি করে প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সব জানেন। ওই ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়েছে। র‌্যাবের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে খবর বেরিয়েছে। তিনি কীভাবে পদে থাকেন। তাকে ধরলেই সব বেরিয়ে আসবে, সেজন্য তাকে ধরা হচ্ছে না।’

ছাত্র-জনতা নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপি-প্রধান বলেন, ‘ঈদের পর আহ্বান জানালে তাতে সাড়া দিয়ে সবাই এগিয়ে আসবেন। এবার আওয়ামী লীগ পথ রুদ্ধ করতে পারবে না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফতের মজলিশের আমির মাওলানা ইসহাক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নিজামী, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।

এর আগে, গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসা থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউসে পৌঁছান। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে তিনি সভামঞ্চে ওঠেন।

খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা আবদুস সালাম, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সমন্বয়কারী মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহি আকবর, প্রাক্তন নারী সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানু, প্রাক্তন ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামান রতন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ।