Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতের সম্মানে নৈশভোজ, বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতকে তলব

বাংলাদেশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও ফিলিপাইনে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ম্যানাসে বরের (Menashe Bar) সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করায় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) জন গমেজকে শিগগির ঢাকায় তলব করা হবে।

ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোনো সম্পর্ক না থাকায় ওই দেশের রাষ্ট্রদূতের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ জন্য ঈদুল আজহার ছুটির পরই রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) জন গমেজ পিএসসিকে ঢাকায় তলব করা হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

chardike-ad

israelপররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম দ্য রিপোর্টকে জানান, ইসরায়েলের কোনো রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। ঈদের বন্ধ শেষে অফিস খুললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

এ বিষয়ে কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনোভাবেই ওই দেশের রাষ্ট্রদূতকে দাওয়াত করে আপ্যায়ন করা যায় না। এমন কী ব্যক্তিগতভাবেও তাকে দাওয়াত দেওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি বিরুদ্ধ। আমাদের রাষ্ট্রদূত এ ক্ষেত্রে কলঙ্কজনক কাজ করেছেন।’

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কূটনীতিকদের কিছু বিধি-নিষেধ আছে, যা তাদের ব্যক্তিগত জীবনেও মেনে চলতে হয়। ইসরায়েলের প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নির্দেশ হচ্ছে, ওই দেশের কারো সঙ্গে হাতও মেলানো (হ্যান্ডশেক) যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রদূত ইসরায়েলের কাউকে দাওয়াত দিয়ে আপ্যায়িত করলে তা অবশ্যই ফরেন পলিসির লঙ্ঘণ। কেননা আমাদের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নাই।’

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনাটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল (রং) মেসেজ দিয়েছে। যা খুবই বাজে (ব্যাড) ঘটনা ঘটেছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে জানান, ঘটনাটি দ্য রিপোর্টে প্রকাশিত হওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। বর্তমানে ঈদের ছুটিতে সবকিছু বন্ধ থাকায় আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছে না মন্ত্রণালয়। ছুটির পর ওই রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা চাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন এবং অধিবেশন শেষে দেশে ফিরে প্যালেস্টাইনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। শুধু তাই নয়, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে শেখ হাসিনার নির্দেশে কূটনীতিকভাবে জাপানকে দিয়েও প্যালেস্টাইনের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন আদায় করেন। ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্যেই বিরূপ মনোভাব এবং ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন। এই অবস্থায় একজন রাষ্ট্রদূত কোনোভাবেই ইসরায়েলের কারো সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারে না।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত জুলাই মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্যালেস্টাইনে ইসরায়িলি সহিংতায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ করেন। তিনি অনতিবিলম্বে প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি বন্ধের আহবান জানান। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি কামনায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

এ ছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গত ২২ জুলাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদেরকে আজ এক হৃদয় ভারাক্রান্ত মনে এখানে কথা বলতে হচ্ছে, যখন জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ইসরায়েল কর্তৃক আন্তর্জাতিক সকল বিধি-নিষেধ অমান্য করে ফিলিস্তিনিদের উপর অমানবিক, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের উচিত প্যালেস্টাইনিদের উপর ইসরায়েলি ধ্বংষযজ্ঞ বন্ধে কার্যকর পদেক্ষপ গ্রহণ করা। পাশাপাশি ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা যাতে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে।’

রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) জন গমেজ পিএসসি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হ্যা, ওনাকে (ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ম্যানাসে বর) নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। উনি আসলে মুরুব্বি শ্রেণীর এবং এখানে সকলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। সকল রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক। আমার সঙ্গেও তার খুব ভালো সম্পর্ক। ম্যানাসে বর (Menashe Bar) খুব ভালো কূটনীতিক। তাই তাকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আর ওই নৈশভোজের দাওয়াতে আরও ১৪-১৫ জন রাষ্ট্রদূত ছিলেন।’

দ্য রিপোর্ট