Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘এই সব দিন রাত্রি’র ‘টুনি’র লাশ উদ্ধার.. হত্যা মামলা, স্বামী গ্রেপ্তার

হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ধারাবাহিক এই সব দিন রাত্রির ছোট্ট টুনির লিউকেমিয়া হয়েছে—এ তথ্য নাটকটির যে পর্বে প্রচারিত হয়েছিল, সে পর্ব থেকেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের দর্শকেরা বিমর্ষ, দিশেহারা। নাটকের টুনিকে বাঁচিয়ে রাখতে হাজারো অনুরোধ জমা পড়েছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনে। জার্মানি থেকে টুনির মৃত্যুর সংবাদ যখন নীলু ও সফিকের কানে পৌঁছাল, তখন তাঁদের সঙ্গে গোটা দেশ কেঁদেছিল।

87c553a44b840a7ff925ce68d2809adc-23সেই ছোট্ট টুনি বাস্তবের নায়ার সুলতানা (৩৫)। গুলশানে নিজ বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

chardike-ad

এ ঘটনায় নায়ারের মা রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে নায়ারের স্বামী আলী আমিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে। পুলিশ আলী আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে। আলী আমিনের দাবি, নায়ার আত্মহত্যা করেছেন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে মামলার বাদী আদালতে গিয়ে আসামি আলী আমিনের মুক্তি চেয়েছেন। এর আগেই পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ অবস্থায় আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আলী আমিনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

গুলশান থানার পুলিশ জানায়, গুলশানের ১২৬ নম্বর রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে নায়ারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশটি গলায় শাড়ি প্যঁাচানো অবস্থায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এর পর স্বজনদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাসার বাইরে থেকে স্বামী আলী আমিনকে আটক করে।

মামলার সাক্ষী মো. ওয়াহিদ বলেন, নায়ারের নয় বছর ও ছয় বছর বয়সী দুটি মেয়ে রয়েছে। তারা নায়ারের জন্য খুব কান্নাকাটি করছে। মেয়ে দুটি মা হারিয়েছে। বাবার সাহচর্যে তারা ভালো থাকবে এই আশা থেকেই তাঁরা আলী আমিনের মুক্তি চাইছেন।
অপর এক স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার সময় বাড়িতে তাঁর দুই সন্তান ছাড়া আর কেউ ছিল না। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে নায়ার আত্মহত্যা করেছেন কি না সে ব্যাপারেও কিছু বলা যাচ্ছে না। নায়ার বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন কি না সে বিষয়েও কেউ কিছু জানাতে পারেননি।

গতকাল সন্ধ্যায় নায়ারের মা রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অপর প্রান্তে থাকা এক নারী নিজেকে বাড়ির অতিথি বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, সবাই খুব মুষড়ে পড়ায় কেউ কথা বলতে পারবেন না। তিনি নায়ারের স্বামীর পরিবারের কারও ফোন নম্বর দিতেও রাজি হননি। এ ব্যাপারে নায়ারের বন্ধুবান্ধবরাও কিছু জানাতে পারেননি।

মামলার এজাহারে রাজিয়া সুলতানা উল্লেখ করেন, ২০০০ সালের ৩ অক্টোবর নায়ারের সঙ্গে আলী আমিনের বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে নয় ও ছয় বছরের দুই সন্তান আছে।

এজাহারে বলা হয়, আলী আমিন একজন মাদকাসক্ত। তিনি প্রতিদিন মাদকাসক্ত হয়ে বাসায় ফিরে নায়ার সুলতানাকে মারধর করতেন। কিন্তু দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে নায়ার সব অত্যাচারই সহ্য করতেন। এসব অত্যাচারে আলী আমিনকে তাঁর বাবা-মাও প্রশ্রয় দিতেন। এরই ধারাবাহিকতায় বেলা আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে আলী আমিন নায়ার সুলতানাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যান। আলী আমিন তাঁর বাবা- মায়ের প্ররোচনায় নায়ার সুলতানাকে হত্যা করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন গুলশানা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান। সুরতহালে উল্লেখ করা হয়, ‘নিহতের গলায় অর্ধ চন্দ্রাকৃতির দাগ ও বাঁ হাতের গিরায় কালো আঘাতের চিহ্ন আছে।’

জানতে চাইলে এসআই আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলী আমিন দাবি করেছেন, পারিবারিক মনোমালিন্যের জেরে নায়ার সুলতানা আত্মহত্যা করেছেন। তবে আলী আমিনকে বাসার বাইরে থেকে আটক করা হয়েছে।
বাসার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে আলী আমিন পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর বড় সন্তানকে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসার পর তিনি একটু ঘুরতে বের হয়েছিলেন। এরই মধ্যে খবর পেয়ে বাসার দিকে রওনা দেন তিনি। পরে বাসার সামনে থেকে পুলিশ তাঁকে আটক করে।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঘটনার ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে যেহেতু হত্যা মামলা হয়েছে তাই আমরা ঘটনার ব্যাপারে গ্রেপ্তার আলী আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করব।’