Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দুর্বল হয়ে পড়ছে ইউরোপের ‘স্ট্রংম্যান’ জার্মানি

GERMANY MAPইউরোপের ‘স্ট্রংম্যান’খ্যাত জার্মানির অর্থনীতি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের সর্বশেষ তথ্য এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ সংবাদ জন্য নিঃসন্দেহে দুঃসংবাদ। দেশটির সরকারের কঠোর অর্থনৈতিক নীতি, প্রতিবেশী দেশগুলোর দুর্বল চাহিদা ও ইউক্রেন সংকট দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে অর্থনীতিবিদরা দাবি করছেন।

মাস হিসাবে জার্মানির উত্পাদন আগস্টে ৪ শতাংশ কমেছে। এছাড়া দেশটির কারখানায় ক্রয়াদেশ অপ্রত্যাশিতভাবে কমেছে।

chardike-ad

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জন্য জার্মানির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানোর পর দেশটির অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়। আইএমএফ বলছে, দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৪ সালে হবে ১ দশমিক ৪ ও ২০১৫ সালে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা ইউরো অঞ্চলের গড় হিসাবের তুলনায় ভালো হলেও যুক্তরাজ্যের তুলনায় কম। ২০১৪ সালের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ ও আগামী বছরের জন্য ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

জার্মানির দুর্বল হয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমেই আসবে দেশটির কঠোর অর্থনৈতিক নীতি। দেশজ চাহিদা বৃদ্ধিতে ব্যবহার না করে নগদ অর্থ মজুদের প্রবণতার জন্য ফ্রান্স সবসময় জার্মানির সমালোচনা করে আসছে। ফ্রান্সের মতে, জার্মানির নগদ অর্থ মজুদের প্রবণতা কমলে তা পুরো ইউরোপের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কয়েকজন অর্থনীতিবিদ মনে করেন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল রাজস্ব অর্থনীতির যে চর্চা করছেন তা শুধু জার্মানির জন্য নয়, বরং প্রতিবেশীদের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান ইউরোপিয়ান অর্থনীতিবিদ জনাথন লেনেস বলেন, ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কমার তথ্য জার্মানির সরকারে থাকা সেসব লোকের জন্য জেগে ওঠার ডাক, যারা এখনো রাজস্বের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজি নয়।’

জার্মানির প্রতি বৃহত্ অবকাঠামো খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ।

ইউরো অঞ্চলের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর চলমান দুর্বল চাহিদার জন্যও ভুগছে জার্মানি। অন্য দেশের চাহিদার কাছে জার্মানির উন্মুক্ত অর্থনীতি অরক্ষিত। দেশটির জিডিপির প্রায় অর্ধেক রফতানি শিল্প, যেখানে চীনসহ অন্য উদীয়মান বাজারে বাণিজ্য বাড়ছে, সে সময় জার্মানির অংশীদার এখনো ইউরোপের দেশ বিশেষ করে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া ও ইতালি।

ফ্রেঞ্চ ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিএনপি পারিবাসের অর্থনীতিবিদ ইভেলিন হারমান বলছেন, জার্মানির রফতানি বাণিজ্য আগামী কয়েক প্রান্তিক খুব কম প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএনজির প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রিসটেন বার্জস্কি মনে করেন, জার্মান অর্থনীতির নিম্নগতির ঝুঁকি ভূ-উত্তেজনার জন্য নয়, বরং ইউরো অঞ্চলের দেশগুলোর দুর্বল চাহিদার কারণে ঘটবে।

ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্ব পরস্পরের প্রতি পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রাশিয়ায় জার্মানির রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১৩ শতাংশ। বিএনপি পারিবাস বলছে, ইউক্রেন সংকট জার্মানির অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। জার্মানির ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আসে রাশিয়া থেকে।

এ সংকট পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্যেও আঘাত হেনেছে। জার্মানির রফতানির ১০ শতাংশ যায় পূর্ব ইউরোপে। এছাড়া অন্য উদীয়মান বাজার যেমন তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিএনপি পারিবাস বলছে, ক্রমবর্ধমান ভূ-উত্তেজনা জার্মানির প্রবৃদ্ধিতে প্রত্যাশার বেশি ক্ষতি করবে। বণিকবার্তা।