Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মীর কাশেমের রায় রোববার

kashem-aliমানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে আগামী রোবরার।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেম আলীর রায়ের দিন ধার্য করেন।

chardike-ad

উল্লেখ, গত ৪মে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষামান রাখে ট্রাইবুনাল-২।

২০১০ সালের ২৬ জুলাই মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। মানবতাবিরোধী অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারী কাশেম আলীকে গ্রেপ্তারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি কাশেম আলীকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩ (২) (এ) (জি)/৪ (২) ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৩ সালের ২ মে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

মামলার তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যলোচনায় দেখা যায়, মীর কাশেম আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ওই সময় চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম শহর শাখারও সভাপতি ছিলেন।

পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন।

এরপর মীর কাশেম আলী জামায়াতসহ অপরাপর রাজনেতিক দলগুলোর সহযোগিতায় ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের সমন্বয়ে সশস্ত্র আলবদর বাহিনী গঠন করেন। সেই আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মীর কাশেম আলী স্বাধীনতাবিরোধী মূল ধারার সঙ্গে একাত্ম হয়ে সারা বাংলাদেশ বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

তদন্তে বলা হয়, চট্টগ্রাম শহরের ‘দোস্ত মোহাম্মদ পাঞ্জাবি বিল্ডিং (চামড়ার গুদাম)’, সালমা মঞ্জিল, ডালিম হোটেলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে মীর কাশেম আলী তার সহযোগীদের নিয়ে আলবদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। এসব নির্যাতন কেন্দ্রগুলোতে বহু মানুষকে ধরে নিয়ে তিনি দিনের পর দিন নির্যাতন এবং অনেক লোককে হত্যা করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুর ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের আগ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আটক, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছি, মীর কাশেম আলী সরাসরি এসব অপরাধে যুক্ত ছিলেন।

২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে ওইদিন বিকেলে মতিঝিলে দৈনিক নয়া দিগন্ত কার্যালয়ের (দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশন) থেকে তাকে গ্রেফতার করে বিকেল সোয়া চারটার দিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেম আলীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।এরপর ১৯ জুন মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মীর কাশেমের জামিন আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের৬ মে মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন তদন্ত সংস্থা। এ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে মীর কাশেম আলীকে দুই দফা সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত সংস্থা।

২০১৩ সালের ১৬ মে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমসহ প্রসিকিউশন ১৪টি অভিযোগে মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।২৬ মে এ অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয় ২১ আগস্ট।

গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর হত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ মোট ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-১।৩০ সেপ্টেম্বর মীর কাশেমের মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।

২০১৩ সালের১৮ নভেম্বর মীর কাশেমের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন।

কাশেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মীর কাশেম আলী ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৪জন।এই মামলায় ঘটনার সাক্ষীরাহলেন-ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম, সৈয়দ মো. এমরান, মো. সানাউল্লাহ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, সুনীল কান্তি বর্ধন দুলাল, শহীদপুত্র শিবু দাস, মৃদুল কুমার দে, প্রদীপ তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা এস্কান্দার আলম চৌধুরী, মো. সালাহউদ্দিন ছুট্টু মিয়া, মো. জাকারিয়া, নাজিমুদ্দিন, মো. হাসান (১), মো. হাসান (২), ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী, জুলেখা খান, মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর চৌধুরী, হাসিনা খাতুন, এস.এম.জামাল উদ্দিন, এস.এম.সরওয়ার ঊদ্দিন এবং লুৎফর রহমান ফারুক।

জব্দ করা তালিকার সাক্ষীরাহলেন-চট্টগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরির বুক সর্টার কাউসার শেখ, বাংলা একাডেমির সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাব উদ্দিন মিয়া এবং বাংলা একাডেমির প্রধান গ্রন্থাগারিক মোবারক মিয়া।

১৪টি অভিযোগের মধ্যে চট্টগ্রামের আসাদনগর ও পাঁচলাইশ এলাকায় আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও লাশ গুম এবং ৩৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন ঘটনার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ ছাড়া বাকি সব কটি অভিযোগেই অপহরণ এবং নির্যাতনের বর্ণনা রয়েছে।

জামায়াতের অন্যতম প্রধান অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিতমীর কাশেম। তিনি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং রাবেতা আল ইসলামী নামে একটি এনজিও’র সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি।

জামায়াত সমর্থক বলে পরিচিত দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনেরও চেয়ারম্যান তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানেরই সংবাদপত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন।

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাশেম আলী তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন।