প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রায় ৫০ শতাংশ আসছে দেশের চারটি জেলায়। জেলাগুলো হলো চাঁদপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও বৃহত্তর ঢাকা জেলা। এ ছাড়া মোট রেমিট্যান্সের ৯ শতাংশ বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায়, ৮ শতাংশ বৃহত্তর চট্টগ্রামে, ৬ শতাংশ বৃহত্তর ফরিদপুরে ও ৬ শতাংশ বৃহত্তর ময়মনসিংহের। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় এ তথ্য তুলে ধরেন অর্থ স্থানান্তরের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠার এক্সপ্রেস মানির ভাইস প্রেসিডেন্ট সুদেশ গিরিয়ান।
বৃহত্তর ঢাকার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ অন্তর্ভুক্ত। বৃহত্তর নোয়াখালীর মধ্যে ফেনী ও লক্ষ্মীপুর, বৃহত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার, বৃহত্তর ফরিদপুরের মধ্যে রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের মধ্যে জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ দেশের মোট ২৭ জেলা থেকে রেমিট্যান্স আসে ৭৯ শতাংশ। বাকি ৩৭ জেলা থেকে আসে মাত্র ২১ শতাংশ।
এক্সপ্রেস মানির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বৈধ পথে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এর প্রায় ১০ শতাংশ এসেছে এক্সপ্রেস মানির মাধ্যমে। এ অর্থবছরে দেশে এক্সপ্রেস মানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আদান-প্রদান বেড়েছে ১২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও ২০১২-১৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।
চলতি (২০১৪-১৫) অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের আরো প্রবৃদ্ধি ঘটবে জানিয়ে সুদেশ গিরিয়ান বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে কৃষি, অবকাঠামো ও সেবা খাতে বাংলাদেশী শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা ভবিষ্যতে দক্ষ শ্রমশক্তি রফতানির পক্ষে সহায়ক হবে। তিনি আরো বলেন, গ্রাহকরা উদ্ভাবনী রেমিট্যান্স চ্যানেল ব্যবহারে যেভাবে এগিয়ে আসছেন, তাতে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে সেলফোন মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বৈধ বা প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ নিশ্চিত করতে এক্সপ্রেস মানি গত এক বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বিতরণ নেটওয়ার্ক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। সারা বিশ্বে এক্সপ্রেস মানির এজেন্ট ১ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ১১ হাজার এজেন্ট। গত বছর এজেন্ট ছিল ৮ হাজার ৬৪৪টি। এক বছরেরও কম সময়ে এজেন্টের সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ৩৫৬টি। প্রবাসীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্য ও সেবা চালু হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রেরণের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে এনি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ক্রেডিট ও মোবাইল ওয়ালেট চালু করা হয়েছে। হাটবাজার ক্যাম্পেইন ও গ্রাহক সমাবেশ এবং বিশেষ ক্যাম্পেইন ‘হুন্ডিকে না বলুন’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেস মানির এ দেশীয় ব্যবস্থাপক শামীম ইফতেখার বলেন, দ্রুত বর্ধনশীল রেমিট্যান্স বাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সরকার ও সবাই মিলে প্রবাসীদের অর্থ বৈধ চ্যানেলে প্রেরণ নিশ্চিত করতে পারলে ২০২০ সালের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয়ের লক্ষ পূরণ করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, এক্সপ্রেস মানির ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। প্রবৃদ্ধির মূল কারণ, গ্রাহকমুখী সেবা ও সহনীয় মাত্রার অর্থ স্থানান্তর ও অর্থ বিনিময় ফি। কোনো গোপন চার্জ ছাড়াই ঘোষিত সহনীয় অর্থ স্থানান্তর ও বিনিময় ফির কারণে এক্সপ্রেস মানি বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বাজারে গ্রাহক আস্থা অর্জন করতে পেরেছে।