Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

তাজিয়া মিছিল দেখে কোরিয়ান নারীর বিস্ময়!

tajia

দক্ষিণ কোরিয়ার নারী হামিন। দুই মাস আগে ঢাকায় এসেছেন। মহররমের তাজিয়া মিছিলের গল্প শুনে লোভ সামলাতে পারেননি। একা একাই চলে এসেছেন আজিমপুরে। মিছিলের লাল সবুজ পতাকা প্রথমে তার ভালোই লাগছিলো। বেশ উপভোগও করছিলেন বাহারি রঙে সাজা মানুষগুলোকেও।

chardike-ad

কিন্তু থমকে গেলেন খানিক পরেই। কালো কাপড় পরা একদল যুবকের আহাজারিতে তার চোখ আটকে গেছে। যুবকরা তাদের দুইহাত দিয়ে সজোরে বুক চাপড়াতে তিনি কেবলই অবাক হলেন না, ভাঙা ভাঙা বাংলায় প্রশ্নও করে বসলেন, ‘ওরা কী করছে?’ উত্তর শুনে তার বিস্ময় আরও বেড়ে গেছে।

মিছিল দেখতে দেখতেই গল্প হচ্ছিলো হামিনের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে থাকা কোরিয়ার কয়েকজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকলেও কোন বাংলাদেশির সঙ্গে তার সখ্য এখনও গড়ে উঠেনি। তাই একা একাই ছুটে এসেছেন মিছিল দেখতে।

‘কেমন লাগছে তাজিয়া মিছিল এমন অনুভূতি জানতে চাইলে হামিনের হাসিমাখা উত্তর, ‘অনেক ভালো লাগছে। এতো মানুষ এখানে। খুব সুন্দর করে তারা সেজেছে।’ তবে কৌতুহল দমাতে পারেননি হামিন। পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, ‘এটা কী ধরণের উৎসব?’ সব খুলে বলতেই বেশ বুঝি বুঝি ভাব নিয়ে মাথা নাড়লেন কোরিয়ান এ নারী।

একটু পরে বেশ আঁতকে ওঠার মতো কুঁকড়ে গেলেন হামিন। দু’হাতে মুখ চেপে ধরেছেন। চোখ দুটোও বন্ধ হয়ে গেছে তার। কারণ খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়লো ‘হায় হোসেন হায় হোসেন’ বলে চিৎকার করা যুবকদের কাণ্ড। নিজেদের শরীরকে অবলীলায় ছুরি আর ধারালো বস্তু দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলছে। বুক ও পিঠ থেকে বেয়ে পড়ছে রক্তধারা। কারও কারও গায়ের জামা ভিজে চুপসে গেছে সে রক্তে।

হামিন অবাক। এ কেমন প্রতিবাদ বা উৎসব? তার প্রশ্ন। বুঝিয়ে বলার পরেও সেটা তার খুব একটা মনোপুত হয়নি। তার কণ্ঠে পাল্টা প্রশ্ন- ‘মানুষ এটা কেমন করে পারে?’ আতঙ্ক ছাপিয়ে এবার তার কৌতুহল মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠেছে। নিজেই ছুটে গেলেন এমন এক যুবকের কাছে। আধো আধো বাংলায় নিজেই প্রশ্ন ছুঁড়লেন। হারুন নামে সে যুবকের উত্তর শুনে আর কথা বাড়ালেন না হামিন। একটু দূরে এসে বললেন, ‘অদ্ভুত এক ত্যাগ তাদের। কোন কোন ধর্মে মানুষ বলি দেয়ার মতোই এরাও নিজেদের রক্তাক্ত করতে এটুকুও ঘাবড়াচ্ছে না।’

বাংলাদেশ অনেক পছন্দ হামিনের। তার ধারণা ছিলো, এটাই বুঝি এদেশের বড় উৎসব। পরে যখন জানতে পেরেছে পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস, ঈদুল ফিতর ও আযহা এবং দুর্গা পূজাই এদেশের প্রধান প্রধান উৎসব, তখন নিজেই বলে উঠলেন, ‘আমি সেগুলোও দেখতে চাই। বাংলাদেশ আমার অনেক ভালো লেগেছে।’

একটা প্রশ্ন অবশ্য না করেই পারলেন না, ‘সেখানেও কি এমন রক্ত নিয়ে খেলা হয়?’ ‘না’ উত্তর শুনে তার মুখে ছড়িয়ে পড়লো ভীষণ সুন্দর এক হাসির রেখা।