Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ছাত্ররাজনীতির বলি সুমন চন্দ্র দাস

sumon
ছেলে সুমন চন্দ্র দাসের পাশে মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ

শুরুতেই শেষ হয়ে গেল সুমনের জীবনের গল্প। মাত্র ২৩ বছর বয়সে কলুষিত ছাত্ররাজনীতির বলির পাঠা হলেন সুমন চন্দ্র দাস। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের মধ্যবিত্ত মুক্তিযোদ্ধা হরিধন দাসের স্বপ্ন ছিল তার ছেলে সুমন লেখাপড়া শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। ঘুণে ধরা ছাত্ররাজনীতির নির্মম বলি হলেন সুমন।

সুমন চন্দ্র দাস সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। বৃহস্পতিবার সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন তিনি।

chardike-ad

সুমনের গ্রাম শ্যামারচরের পূজা বাড়িতে এখন চলছে মাতম। পুত্রশোকে বাকরুদ্ধ বাবা হরিধন দাস ও মা প্রতিভা রানী দাস। সুমনের শ্যামারচর গ্রামের বাড়ি পূজাবাড়ি নামে এলাকায় পরিচিত। এক সময় এ বাড়িতে জমজমাটভাবে পূজাপার্বণ অনুষ্ঠিত হত। কালের বিবর্তনে তাদের সেই জৌলুস এখন আর নেই। চার ভাই-বোনের মধ্যে সুমন ছিলেন দ্বিতীয়। বড়বোন কাকলী দাস শিক্ষকতা করেন। সুমনের ছোট দুই বোন অলি রানী দাস যমজ বোন চম্পা রানী দাস কলেজে লেখাপড়া করছেন। সম্প্রতি ছোটবোন চম্পা রানী দাসের চাকরি হয়েছে। সুমনের বাবা হরিধন দাস মন্দিরভিত্তিক স্কুলে শিক্ষকতা ও গ্রাম্য আমিনের কাজ করে সংসার চালাতেন। কৃষি জমি বিক্রি করে তিনি সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। শ্যামারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি ও ব্রজেন্দ্রগঞ্জ আরসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করে সিলেটে চলে যান সুমন। শৈশবে তিনি একজন ভালো ফুটবলার ছিলেন। বিভিন্ন গ্রামে ফুটবল খেলতে যেতেন।

ব্রজেন্দ্রগঞ্জ আরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সুমনের আত্মীয় রথীন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী জানান, সুমন মাঝারি মানের ছাত্র ছিল। সে ২০০৫ সালে এসএসসি পাস করে। সুমন নম্র ভদ্র ও মিশুক ছিল। সবার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতো। আগে সুমন কোন ধরনের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সিলেটে লেখাপড়ার সুবাধে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সুমন লেখাপড়ায় তেমন মেধাবী ছিলো না। ১৯৯১ সালের ৫ জানুয়ারি সুমনের জন্ম। সে ব্রজেন্দ্রগঞ্জ আরসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে ২ দশমিক ২৫ জিপিএ নিয়ে এসএসসি পাস করে।

সিলেটে ময়না তদন্ত শেষে অ্যাম্বুলেন্স যোগে সুমনের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হলে পূজাবাড়িতে কান্নার রোল পড়ে। শেষবারের মতো দেখতে আসে সুমনের বন্ধু, এলাকাবাসী,পাড়া প্রতিবেশী। স্বজনদের আহাজারিতে পূজাবাড়িতে এখন মাতম চলছে।

সুমনের চাচাতো ভাই প্রশান্ত দাস জানান, সুরমা নদীর তীরবর্তী শ্যামারচর গ্রামেই সুমনরে শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী রবীন্দ্র নারায়ণ দে রনি জানান, সুমনকে হারিয়ে তার বাবা -মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

ছুটি পেলেই সুমন ছুটে চলে আসতেন শ্যামারচর গ্রামে বাবা-মায়ের কাছে। গত দুর্গাপূজায় শেষবারের মতো বাড়িতে এসেছিলেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে পূজা উদযাপন করতে।