Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দিনদুপুরে রাবি শিক্ষক খুন

sofiul-islamরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছেন।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন তার ভাড়া বাসার সামনের রাস্তায় আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন তিনি। দুর্বৃত্তরা অধ্যাপক শফিউল ইসলামের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।

chardike-ad

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ফেসবুকে গতকাল রাতেই একটি পেজ খুলেছে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামের একটি সংগঠন। তবে পুলিশ বলছে তারা এ ধরনের কোনো সংগঠনের নাম জানে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রাবির ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম তাহেরের হত্যাকাণ্ডের আট বছরের মাথায় খুন হলেন অধ্যাপক শফিউল ইসলাম। ২০০৬ সালে ক্যাম্পাসে নিজ বাসায় খুন হয়েছিলেন এম তাহের। গতকাল হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পাস এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এলাকায়। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি রক্তমাখা চাপাতি উদ্ধার করে।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, বিকাল পৌনে ৪টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলনকে হাসপাতালে আনা হয়। তখনই তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়। সেখান থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হলে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিউরো সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মমতাজ জানান, শফিউল ইসলামের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর জখম ছিল। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে।

অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে কারা এবং কেন খুন করল, পুলিশ তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুই ব্যক্তিকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা হত্যাকারীদের খুব কাছ থেকে দেখেছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। তার ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, সামাজিক, বন্ধুবান্ধবসহ সব বিষয় তদন্তের আওতায় নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসহ অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক শফিউল ইসলাম মোটরসাইকেলে তার বিহাসের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বিহাস সংলগ্ন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের বিহাস মোড় থেকে দক্ষিণে নিজ বাসভবনের সামনে নির্জন স্থানে পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। শফিউল ইসলাম রক্তাক্ত অবস্থায় একাই একটি রিকশায় চড়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হন। কিন্তু ভারসাম্য হারিয়ে তিনি কিছু দূর যাওয়ার পর রিকশা থেকে পড়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হত্যার দাবি স্বীকার আনসার আল ইসলামের!:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রহস্যময় পেজ খুলে ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামে একটি সংগঠন রাবির শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলনকে হত্যার দাবি করেছে। ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে- ‘এই মুরতাদ আজ উচিত শিক্ষা পেয়েছে’। এ পেজে ব্লগার রাজীবের ছবিও রয়েছে, যা লাল চিহ্ন দিয়ে ক্রস করে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহীর মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, এ নামে কোনো সংগঠন আছে কি না, নাকি হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার কৌশল- তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

খুনির সংখ্যা দুই:
রাবি শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুজন অংশ নেয় বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। মতিহার থানার ওসি জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পুলিশ হাসিব ও দিপু নামের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। হত্যাকারীদের তারা চিনতে পেরেছে কিনা, তা জানতেই এ জিজ্ঞাসাবাদ।

তদন্তে অগ্রাধিকার ব্যক্তিগত জীবন:
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার এ কে এম নাহিদুর রহমান জানান, শিক্ষক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিয়নের তিন স্ত্রী ছিলেন। প্রথম স্ত্রী মারা যান। এরপর রাবির এক শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন। ওই স্ত্রী পদ্মা আবাসিক এলাকায় থাকেন। তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মাস চারেক আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ব্যক্তিগত জীবনের কোনো দ্বন্দ্ব এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কাজ করেছে কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর:
শিক্ষকের মৃত্যুর খবরে সন্ধ্যায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। বগুড়ার বাসিন্দা অধ্যাপক শফিউল ছিলেন বাউল সাধক লালনের ভক্ত। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষাগুরু হিসেবে।

পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের (রবিবার) সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সন্ধ্যায় শিক্ষক সমিতির জরুরি বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুমদার।

দাফন বগুড়ার সোনাতলায়:
অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার লাশ বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত শিক্ষকের একমাত্র ছেলে সৌমিন শাহরিদ জাভিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি রাতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে তার পিতার লাশ নিয়ে সোনাতলায় রওয়ানা দেন।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন।

জড়িতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ:
রাবি শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাতে রাজশাহীতে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তিনি এ নির্দেশ দেন।