Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শ্রমবাজারে রোহিঙ্গারা, বাড়ছে উদ্বেগ

কক্সবাজারে আইন-শৃঙ্খলা ইস্যুতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা। অপরদিকে তারা কম দামে শ্রম দেওয়ায় শ্রমবাজার হারাচ্ছেন স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

প্রশাসন বলেছে, রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতি এবং মাদক পাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজ এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উপর।

chardike-ad
rohingya-camp
রোহিঙ্গাদের একটি শরনার্থী শিবির।

কক্সবাজারে নিবন্ধনকৃত কুতুপালং এবং নোয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে ৩২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। অনিবন্ধনকৃত আরও ২টি শিবিরসহ অন্যান্য এলাকায় কত রোহিঙ্গা আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই প্রশাসনের কাছে। এখনও কোনো জরিপ করা হয়নি।

তবে প্রশাসন বলছে, কক্সবাজারের আশে-পাশের এলাকাগুলোতে ৫ লাখ রোহিঙ্গা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে উদ্বিগ্ন প্রশাসন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, শুধু কক্সবাজারেই নয়, রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে তারা।

তিনি বলেন, শরনার্থী শিবিরগুলোর বাইরে পাহাড় বা সংরক্ষিত বন কেটে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা বহুমাত্রিক সমস্যা তৈরি করছে। চুরিসহ নানা অপরাধ যেমন বাড়ছে। তাদের সস্তা শ্রমের কারণে স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষ বেকার হচ্ছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যেভাবে অবাধে বিচরণ করছে তাতে এক সময় এই অঞ্চল রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হতে পারে।

টেকনাফে একটি বাজারের দিনমজুর রজ্জব আলী বলেন, রোহিঙ্গারা গ্রামে গিয়ে অল্প পয়সায় কাজ করে। সেজন্য আমরা কাজ পাই না।

বাজারের ব্যবসায়ী সোলায়মান মিয়ার অভিযোগ, আমাদের গ্রামে এখন প্রচুর রোহিঙ্গা। গ্রামে চুরিও বাড়ছে। রোহিঙ্গারাই চুরির সঙ্গে জড়িত।

কাঠমিস্ত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকের অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িত। তারা এই মাদকগুলো গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

নাফ নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, রোহিঙ্গারা গ্রামেই বসত গড়ছে। ফলে গ্রামে মানুষ বাড়ছে।

স্থানীয় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, চুরি-ডাকাতি, মাদক ও মানব পাচারের মতো অপরাধে মূলত রোহিঙ্গারা জড়িত। পুলিশের অভিযানে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকতে হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশের ভোটার হচ্ছে এবং পার্সপোর্ট নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

তবে নির্বাচন কমিশনের মতে, রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার বিষয়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। কক্সবাজার অঞ্চলে ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে জমির দলিল পেশ করাসহ বিভিন্ন শর্তারোপ করা আছে।

rohingya-house
বাংলাদেশের একটি বনাঞ্চলের পাশে রোহিঙ্গাদের ঘর।

৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা এবং স্থানীয়রা ফোরাম গঠন করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। তবে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে দল বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা অনেক সময় জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে। অপরদিকে, স্থানীয় বিএনপি এবং জামায়াত নেতারা এটি মিথ্যা অভিযোগ বলে দাবি করেন। তবে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি নন।

কুতুপালং অনিবন্ধনকৃত শিবিরের কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, আমরা শ্রম দিয়ে ভাত খাই। আমাদের কেউ কোনো রকম অপরাধের সাথে জড়িত নয়। কোনো অপরাধ সংগঠিত হলেই আমাদের দোষ দেওয়া হয়। হয়তো ২/১ জন জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযোগ আনা ঠিক নয়।

স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এখন সীমান্তেও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ২টি শিবিরের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি