ত্রিশ বছর আগে দুবাই ছিলো অনেকটা মরুভুমি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দুবাই হয়ে উঠে বানিজ্যিক কেন্দ্র বিন্দু এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় স্থান। মাত্র ত্রিশ বছরের মধ্যে দুবাইয়ের এই উন্নয়নে দক্ষিন এশিয়ার শ্রমিকরা নিরলস পরিশ্রম করেছেন।
এখনও দুবাইয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ড থেমে নেই। কিন্তু শ্রমিকরা কেমন আছেন?
দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে পরিবার পরিজন ছেড়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আশায় যে শ্রমিকরা দুবাই গেছেন তাদের অমানবিক জীবনযাত্রার নানা দিক তুলে ধরেছেন ইরানের একজন ফটোগ্রাফার। স্বল্প বেতন আর ঘিঞ্জি পরিবেশে তাদের কষ্টকর জীবন যাত্রার দিকগুলো উঠে এসেছে তার ক্যামেরায়।
ফরহাদ বেরহমান নামের এই ফটোগ্রাফার দুবাইয়ের সোনাপুর এলাকার প্রবাসী শ্রমিকদের ছবি তুলেছেন। আধুনিক দুবাইয়ের বিলাসী জীবনের সম্পুর্ন বিপরীত চিত্র এখানে। সোনাপুর নামটি হিন্দি বা বাংলা থেকে এসেছে। যার ইংরেজি করা যায় সিটি অব গোল্ড। এখানে ১৫হাজারের বেশি শ্রমিক বাস করে। যাদের অধিকাংশ ভারত, পাকিস্তানম বাংলাদেশ এবং চীন থেকে এসেছে।
ফরহাদ ব্রিটেনের ডেইলি মেইল পত্রিকাকে জানান এই শ্রমিকদের অনেকের এয়ারপোর্টে পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়। এরপর সামান্য বেতনে জোরপূর্বক কাজ করানো হয়। অনেকে দেশ থেকে যে স্বপ্ন নিয়ে তারা বিদেশে এসেছেন তা ভেঙ্গে গেছে।
বাংলাদেশি শ্রমিক জাহাঙ্গীরের কথা তিনি জানালেন। ২৭ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর একজন ক্লিনার। চার বছর ধরে সে দুবাইয়ে আছে। সে প্রতিমাসে পায় ৮০০ আমিরাতি দিনার। এরমধ্যে ৫০০ দিনার সে দেশে পাঠিয়ে থাকে। অনেক কষ্টকর জীবন যাপন করছে।
ফরহাদ জানান এই শ্রমিকরা সবাই এসেছে নির্মান শিল্প আর তেলশিল্পে কাজের জন্য। তাদের আশা কাজ করে তারা যা পাবে তাতে দেশে তাদের পরিবার পরিজন অন্তত সুখে থাকতে পারবে।
শ্রমিকরা দুবাই আসার পর এয়ারপোর্ট থেকে পাসপোর্ট নেয়ার পর পাঠানো হয় সোনাপুরে। তারা ১৪ ঘন্টার মতো কাজ করে। যখন তারা কাজ করে তখন দিনের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। অথচ পশ্চিমা পর্যটকদের নির্দেশনা দেয়া হয় গরমে তারা যেনো দুবাই সফর না করেন।
সরকারি আইন অনুযায়ী অতিরিক্ত গরম পড়লে কাজ বন্ধ রাখার আইন থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। এমনকি তাপমাত্রা কত তাও জানানো হয়না।
ফটোগ্রাফার ফরহাদ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, ১২ ফুট একটি ঘড়ের মধ্যে ৬ থেকে ৮ জন থাকতে হয়।
প্রবাসী শ্রমিকদের এই দুর্দশার জীবন দুবাইয়ের অন্ধকার দিক। শ্রমিকদের এসব দুর্ভোগের কাহিনী দেশটির মিডিয়ায় কখনো আসেনা। দুবাইয়ের সরকারি কর্তৃপক্ষ আমাকে এসব ছবি তোলার অনুমতি দিতো না। আমি অনেক কষ্টে রাতের বেলা এসব ছবি তুলেছি। ছবি তোলার সময় অনেক শ্রমিক ছিলো ভীত। যদি সরকারি কর্তৃপক্ষ জেনে যায় তাহলে সমস্যা হবে।