বাবা-মায়ের কর্মব্যস্ততা কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের জেরে কোরিয়ান শিশুকিশোরদের একটি বড় অংশ লালিতপালিত হচ্ছে দাদা-দাদী, নানা-নানী কখনও কেবলই একজন গৃহপরিচারিকার কাছে। এতোটুকুও যাদের পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না তাঁরা আদরের বাচ্চাটিকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন কোন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে। সংখ্যাটা দিন দিন বেড়েই চলেছে- এমন তথ্য দিয়ে কোরিয়া ইন্সটিটিউট ফর হেলথ এন্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ারস বলছে এর ফলে অনেক শিশুর মানসিক বিকাশে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
কর্মজীবী স্বামী-স্ত্রীরা তাঁদের সন্তানদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন নানা বা দাদার বাসায়। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া এসব শিশু বাবা-মায়ের মুখ দেখে না। অনেক কোরিয়ান দম্পতি আবার বাচ্চার দেখাশোনায় গৃহপরিচারিকা নিয়োগ দিচ্ছেন। কম মাইনে আর অধিক বিশ্বাসযোগ্যতার কারনে এ চাকুরীটির জন্য কোরিয়ান বংশোদ্ভূত চীনা নাগরিকদের চাহিদা বাড়ছে। জরিপ বলে, কোরিয়ায় বর্তমানে গৃহপরিচারিকা বা আয়ার কাজ করছে চীন থেকে আসা ৯০ হাজারেরও বেশী নৃতাত্ত্বিক কোরিয়ান।
পরিস্থিতি ঠিক কতোটা গুরুতর? একটি মাধ্যমিক স্কুলের অধ্যক্ষ জানান তাঁর প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক শিক্ষার্থী হয় দাদু/নানুর কাছে বড় হচ্ছে নয়তো তাদের বাবা-মা আলাদা হয়ে গেছে।
স্ট্যাটিসটিক্স কোরিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২০১০ সালের শেষ নাগাদ ১ লাখ ১৯ হাজার ২শ’ কোরিয়ান বাড়িতে শিশুসন্তানের দেখাশোনা করেন পিতামহ/মাতামহরা। এই সংখ্যা কোরিয়ার মোট বাসাবাড়ির ০.৬৭ শতাংশ, দশককাল আগেও যা ছিল মোট আবাসের ০.২৪ শতাংশ।
ক্রমবর্ধমান এই সংকটের অন্যতম কারন হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে ১৯৯৮ সালের এশীয় অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গণহারে কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়টিকে।
এমন অবস্থায় শিশুদের মানসিক বিকাশ কিভাবে ব্যহত হচ্ছে? সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কাং দো ইয়ং মনে করেন, “শিশুর মানসিক বিকাশের শুরুটা হয় মায়ের সাথে মনের ভাব আদানপ্রদানের মাধ্যমে। সঙ্গত কারনেই তাই মাতৃস্নেহের অভাব শিশুমনে জন্ম দিতে পারে হতাশা, ক্ষোভ আর হীনমন্যতা।”
২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, ২২.৬ শতাংশ কোরিয়ান শিশুর দাবী তাদের মায়েরা তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে না!