Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সুরমা নদীতে ভাসমান রেস্তোরাঁ

surmaপশ্চিম দিগন্তে অস্তগামী সূর্যের আলো সুরমার জলে ঢেউ খেলে। ব্যস্ত যান্ত্রীক নগর জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষেরা সিলেটের সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে অবলোকন করেন খেয়াপারাপারের দৃশ্য। উপরে ঐতিহ্যবাহী ক্বিন ব্রিজ, নিচে সুরমার তীর লাগোয়া আলী আমজাদের ঘড়ি। পাশেই চাঁদনিঘাটে নোঙর করেছে ভাসমান রেস্তোরাঁ সুরমা রিভার ক্রুজ’।

শুক্রবার রাতে ১১টায় নদীর সুরমা তীরে ভাসমান রেস্তোরাঁর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

chardike-ad

ক্লান্তি ঘোচাতে প্রতিদিন সিলেট নগরীর সার্কিট হাউসের সামনে সুরমার তীরে ঘুরতে আসেন শতশত দর্শনার্থী। সমস্যা হচ্ছে, এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য আশপাশ এলাকায় ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট নেই।

তবে সিলেটের স্বপ্নবাজ কয়েকজন প্রবাসী উদ্যোক্তা মিলে সুরমা নদীর তীরে ভাসমান একটি রেস্টুরেন্ট বসানোর উদ্যোগী হন। সেই উদ্যোগের বাস্তব রূপায়ণও করেন। মূলত, বিদেশে অনেক নদীতে এরকম ভাসমান রেস্টুরেন্ট দেখে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই সেবামূলক দৃষ্টিনন্দন রেস্তোরাঁ বসানো হয়েছে।

এছাড়া দূর থেকে তাকালে মনে হবে নদীর বুকে নোঙর করে রাখা একটি সাধারণ স্টিমার। কৌতুলী হয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে যে কারো চোখ কপালে ওঠার মতো দৃশ্য। এ তো স্টিমার নয়, যেন পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্ট।

সিলেটের পর্যটন শিল্পের বিকাশে দেশের প্রথম ভাসমান এই রেস্টুরেন্টটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায় প্রায় সাড়ে তিনবছরের প্রচেষ্টায় ‘রিভার ক্রুজ সিলেট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই ভাসমান রেস্টুরেন্টটি সুরমা নদীতে ভাসাতে সক্ষম হয়েছে। প্রায় তিনকোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনাঘাটে রেস্টুরেন্টটি তৈরি করে সম্প্রতি সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর চাঁদনীঘাটে নিয়ে আসা হয়। দেশি-বিদেশি আধুনিক ফিটিংস ও সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো রেস্টুরেন্টের ভেতর।

রিভার ক্রুজ সিলেটের পরিচালক শান্ত দেব জানান, কেবলমাত্র ব্যবসায়ীক চিন্তা থেকেই এই ভাসমান এই রেস্টুরেন্টটি করা হয়নি। সিলেটের পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং দেশ-বিদেশের পর্যটক ও নতুন প্রজন্মের কাছে এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতেই ৩০ জন তরুণ উদ্যোক্তা ব্যতিক্রমধর্মী এই রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, তিন বছরের শ্রম ও সাধনায় তারা ভাসমান রেস্টুরেন্টটি সুরমার জলে ভাসাতে সক্ষম হয়েছেন। কুশিয়ারা নামের আরেকটি ভাসমান রেস্টুরেন্টের কাজ চলছে বলে জানান।

শান্ত দেব আরো জানান, রেস্টুরেন্টে আসা অতিথিদের সামনে সিলেটের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও আধ্যাত্মিক ইতিহাস এবং গৌরবময় নানা ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। এছাড়া নদী পথে চলতে চলতে সিলেট নগরীতে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর প্রবেশপথ, শতবর্ষী কিনব্রিজ, ঐতিহাসিক সারদা হল, রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত চাঁদনীঘাট, আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত সার্কিট হাউসসহ দুইপাড়ের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো দেখানো হবে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়- তিনতলা বিশিষ্ট রেস্টুরেন্টটির নিচতলা থাকবে পানির নিচে। বিজনেস ক্লাসের ওই তলাটিতে থাকবে ডাইনিংসহ একসাথে ৫০ জনের বেশি লোকের সেমিনারের সুবিধা। রিভারভিউ নামের দ্বিতীয় তলায় একসাথে বসে নাস্তা করতে পারবেন ১২০ জন। আর টপ ফ্লোরের নাম দেয়া হয়েছে ওপেন স্কাই। ওই ফ্লোরে খোলা আকাশের নিচে বসার ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে ফ্যামেলি কেবিন।

প্রতিদিন বিকেল ৪ টা, সন্ধ্যা ৭ টা ও রাত সাড়ে ৮ টায় রেস্টুরেন্টটি চাঁদনীঘাট থেকে ছেড়ে দেড়ঘন্টা সুরমা নদীতে ঘুরাঘুরি করে পুনরায় একই স্থানে এসে যাত্রীদের নামিয়ে দেবে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯৯ টাকা থেকে ৭৯৯ টাকা পর্যন্ত। ভাড়ার সাথে যাত্রীরা পাবেন ফ্রি ফাস্টফুড। রেস্টুরেন্ট থেকে ইচ্ছেমতো পছন্দসই ফাস্টফুড এবং ইন্ডিয়ান-বাংলা ও চায়নিজ খাবারও কিনে নিতে পারবেন যাত্রীরা। এছাড়া জন্মদিন, গায়ে হলুদসহ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও ভাড়া নেয়া যাবে ভাসমান রেস্টুরেন্টটি।

উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, অত্যন্ত উদ্ভাবনশীল ধারণা নিয়ে সুরমা রিভার ক্রুজ রেষ্টুরেন্ট তৈরি করা একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ব্যবসার পাশাপাশি জনসেবারও একটি সুযোগ রয়েছে। মানুষের জন্য বিনোদনের খুবই প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য মানুষকে বিনোদনের একটি সুন্দরতর জায়গা করে দিয়েছে সুরমা রিভার ক্রোজ রেষ্টুরেন্ট। এ জাহাজে চড়ে মানুষ সারা সুরমা নদী ঘুরে খাওয়া দাওয়া ও বিনোদন করতে পারবে। এ জাহাজটি জনগণের কল্যাণে নির্মিত হয়েছে এজন্য জনগণকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করতে হবে।

রেস্টুরেন্ট-এর পরিচালক মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, এনটিসির চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ড. একেএম আব্দুল মুবিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠানিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট সিটি কর্পোরেশন-এর সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, শিফা হাফিজ প্রমুখ।

এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ‘সুরমা রিভার ক্রোজ’ এর পরিচালক শান্ত দেব। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ‘সুরমা রিভার ক্রোজ’ এর পরিচালক সজিব রঞ্জন দাশ, আবুল কালাম আজাদ ছোটন, জিয়াউল হক জিয়া, মানস দাশ গুপ্ত, কাউসার আহমদ, কয়সর আহমদ, দেওয়ান মুজাদ্দিদ গাজী, মুজাহিদ ভুইয়া মান্না, এনায়েতুর রহিম, ইকবালুর রহিম, রাজিব দাশ প্রমুখ।