Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মালয়েশিয়ায় ৩৮ বছরের শ্রমবাজার

malaysia

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আর এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী কতিপয় জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানাভাবে কর্মীদের হয়রানির কারনে জনশক্তি রপ্তানিকারক এসব প্রতিষ্ঠান ‘আদম ব্যাপারী’ হিসেবে আখ্যা পায়। এদের কর্মকান্ডে বহিঃবিশ্বে দেশের সুনামও নষ্ট হয়। আর এর ধারাবাহিকতায়, বন্ধ হয়ে যায় সম্ভাবনাময় অনেক শ্রমবাজার। যারমধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম।

chardike-ad

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৯৭৬ সালের পর দীর্ঘ ১০ বছর মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ছিল। ১৯৮৬ সাল থেকে দেশটি আবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া শুরু করে। এ বছর ৫৩০ জন কর্মী মালয়েশিয়া যান। ১৯৮৭ সালে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৮ সালে মাত্র ২ জন কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়। ১৯৮৯ সালে আবার শুরু হলে, এ বছর ৪০১ জন কর্মী রপ্তানি হয়। এরপর থেকে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি ক্রমান্বয়েই বাড়তে থাকে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯০ ও ১৯৯১ সালে যথাক্রমে একহাজার ৩৮৫ ও একহাজার ৬২৮ জন কর্মী মালয়েশিয়া যায়। এরপর ১৯৯২ সালে জনশক্তি রফতানি কয়েকগুন বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫৩৭ জনে। ১৯৯৩ সালে প্রায় ছয়গুন বেড়ে এ সংখ্যা হয় ৬৭ হাজার ৯৩৮ জন এবং ১৯৯৪ সালে ৪৭ হাজার ৮২৬ জন। পরের বছর জনশক্তির রফতানি কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ১৭৪ জনে। তবে এর এক বছর পরই ১৯৯৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ হাজার ৬৩১-এ। এরপর হঠাৎ করেই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি কমতে থাকে। ১৯৯৭ সালে ২ হাজার ৮৪৪ এবং ১৯৯৮ সালে ৫৫১ জন মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর ১৯৯৯ সালে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়।

তৎকালীন সরকারের হস্তক্ষেপে ২০০০ সালে আবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে ১৭ হাজার ২৩৭ জন কর্মী নেয় দেশটি। ২০০১ সালে এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৯২৭ জনে। এরপর বছর চারেক দেশটিতে জনশক্তি রফতানি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ সময় কলিং ভিসা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে মালয়েশীয় সরকার। এ সুযোগে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি ও হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ বিএনপি-জাময়াত জোটের এক প্রভাবশালী সাংসদ তার নিজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এককভাবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন। এতে বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশনের নামে গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থও হাতিয়ে নেওয়া হয়। এ কাজে মালয়েশিয়ার স্থানীয় একটি চক্রের জড়িত থাকারও অভিযোগ উঠেছিল। আর এ কারণে তৎকালীন মালয়েশীয় সরকার বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে আবারও বন্ধ হয়ে যায় দেশের অন্যতম শীর্ষ শ্রমবাজার।

এ অবস্থায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০০২ সালে মাত্র ৮৫, ২০০৩ সালে ২৮, ২০০৪ সালে ২২৪ এবং ২০০৫ সালে ২ হাজার ৯১১ জন কর্মী মালয়েশিয়া যেতে সক্ষম হয়। ২০০৬ সালে আবার জনশক্তি রফতানির গতি ফিরে আসলে এ বছর ২০ হাজার ৪৯৯ জন কর্মী মালয়েশিয়া যায়।

সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের শেষদিকে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এ সময় এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে এলে জনশক্তি রফতানি বেড়ে যায়। ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় রেকর্ড সংখ্যক ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০১ জন কর্মী পাঠানো হয়।

এরপর আবারো কমতে শুরু করে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি। ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৬২, ২০০৯ সালে ১২ হজার ৪০২, ২০১০ সালে ৯১৯, ২০১১ সালে ৭৪২, ২০১২ সালে ৮০৪, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৮৫৩ এবং ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৯০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় যান।

২০০৯ সাল থেকে মালয়েশীয় সরকার বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে দেশটিতে কর্মী রফতানি দিন দিন কমতে থাকে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে দেশটি সরকারি (জি টু জি) পর্যায়ে কর্মী নিতে সম্মত হয়। এরই আলোকে বর্তমানে জি টু জি পর্যায়ে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া যেতে পারছে কর্মীরা। আর এ নিয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বায়রার সঙ্গে সরকারের দূরত্বের সৃষ্টি হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

সূত্রমতে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার চালু করতেই প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফর করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে জনশক্তি রফতানি নিয়ে সমঝোতা স্মারক সংশোধন করে প্রটোকল স্বাক্ষর করা হয়েছে। এতে দেশটির সারওয়াক প্রদেশে নতুন করে ১২ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কাজ করতে যাওয়ার সুযোগ পাবে। আর, এর মধ্য দিয়েই আবার উন্মুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।