চারজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদকে সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংগঠনটির ১৯তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সংশ্লিষ্টদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন। সম্মাননা পাওয়া চার অর্থনীতিবিদ হলেন— ড. অশোক মিত্র, অধ্যাপক ড. মুশার্রফ হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর লুত্ফর রহমান সরকার ও অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম। এদের মধ্যে মরণোত্তর স্বর্ণপদক দেয়া হয়েছে অধ্যাপক ড. মুশার্রফ হোসেন ও লুত্ফর রহমান সরকারকে।
ড. অশোক মিত্র ১৯২৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর তিনি নেদারল্যান্ডসের রটেরড্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। সাহিত্যিক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। ড. অশোক মিত্র মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও কৃষি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানসমৃদ্ধ মানবতাবাদী কল্যাণকামী অর্থনীতিবিদ হিসেবে অর্থনীতি সমিতির ‘স্বর্ণপদক সম্মাননা ২০১৫’ পেয়েছেন তিনি। এবার সম্মাননা পাওয়া একমাত্র বিদেশী নাগরিক তিনি।
অধ্যাপক ড. মুশার্রফ হোসেনের জন্ম ১৯৩০ সালে ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন বিশিষ্ট এ শিক্ষক ও গবেষক। দেশী-বিদেশী জার্নালে তার অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও কৃষি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে স্বর্ণপদক সম্মাননা দিয়েছে অর্থনীতি সমিতি।
১৯৩৪ সালে বগুড়া জেলার ফুলকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন লুত্ফর রহমান সরকার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একজন প্রথিতযশা ব্যাংকার ছিলেন। ৪৮ বছরের ব্যাংকিং কর্মজীবনে অগ্রণী, সোনালী, ইসলামী ও প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন লুত্ফর রহমান সরকার। সাহিত্যিক হিসেবেও একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০১৩ সালের ২৪ জুন মৃত্যুবরণ করেন খ্যাতনামা এ ব্যাংকার। উদ্ভাবনী ব্যাংকিংয়ের জন্য তাকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। একই ফল নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। বর্তমানে ওয়াশিংটনের ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। দেশী-বিদেশী জার্নালে অসংখ্য প্রবন্ধ এবং উন্নয়ন অর্থনীতির ওপর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সম্মাননা পেয়েছেন। বণিকবার্তা।