শান্ত মনে বসে আছে বাঘ; পাশেই উদাসচিত্তে চেয়ে আছে হরিণ। এই বাঘের মনে নেই কোনো লোভ; হরিণের মনেও নেই উদ্বেগ। বাঘ-হরিণের এমন সন্ধি শুনতে অবাক লাগলেও বাণিজ্যমেলার পূর্ব-দক্ষিণ পাশে ‘সুন্দরবন ইকো পার্কে’ দেখা মিলবে এই অবিশ্বাস্য কাণ্ডের।
মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সহযোগিতায় সুন্দরবনের আদলে কৃত্রিম এই ইকো পার্ক তৈরি করেছেন সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশপ্রেমী মো. জামিউর রহমান লেমন।
আজ সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সব বয়সের মানুষই উপভোগ করছেন কৃত্রিম এই সুন্দরবন; আড্ডা জমাচ্ছেন পার্ক ঘিরে। যারা সুন্দরবন দেখেননি তাদের জন্য ‘সুন্দরবন’ দেখার এক ধরনের সুযোগও এটি। পার্কটি সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
পার্কের ভেতরে গাছের ডালে-ডালে ঝুলছে বানর, গা এলিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে হরিণ, ক্লান্তদেহে বসে আছে বাঘ, জলে-স্থলে অবসর সময় পার করছে কুমির আর গাছের ডালের মতো পড়ে আছে ৭-৮ ফুট লম্বা অজগর সাপ।
অন্যদিকে ভেসে ওঠা মাছকে থাবা দিতে ঠোঁট তাক করে বসে আছে সাদা সাদা বক আর মাছরাঙা। লেজ উঁচু করে ডালে বসে আছে টিয়া ও দোয়েল, কাঠ ঠোকরাচ্ছে কাঠঠোকরা। পাতায় পাতায় বসে আছে রঙ-বেরঙের প্রজাপতি। নিড়ে বিশ্রাম নিচ্ছে ক্লান্ত পাখিরা। রয়েছে মৌচাক ও মৌমাছির দল।
তবে শুধু এসব কৃত্রিম প্রাণি নয় জীবন্ত প্রাণি এবং গাছ-গাছালিও আছে সেখানে। আছে লেক। লেকের পানিতে জীবন্ত ব্যাঙ ও মাছ। খরগোশ, রাজহাঁস, পাতিহাঁস, তিতির পাখির সঙ্গে আছে সুন্দরবনের গোলপাতা, কেওড়া, সুন্দরীর মতো জীবন্ত গাছ।
পার্কে সুন্দরবনের সিডরপরবর্তী দৃশ্য তুলে ধরতে রাখা হয়েছে ডাল-পাতাহীন ছিন্নভিন্ন কৃত্রিম বৃক্ষরাজী।
পার্কটি পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি দর্শকদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কয়েকজন প্রকৃতিপ্রেমী ২ শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন।
পার্কের সামনে কথা হয় কমলাপুর থেকে মেলায় আসা অণু খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতরাতে এই পর্কে এসেছিলাম, আজ এসেছি দিনের বেলায়ই। তবে রাতে পার্কটিকে অনেক বেশি সুন্দর দেখায়। রাতে লেকের জীবন্ত ব্যাঙগুলোর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকের সাথে পার্কে থাকা ২১টি হারিকেনের বৈদ্যুতিক আলো এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে।
এত আয়োজন কীভাবে তা জানতে চাইলে জামিউর রহমান লেমন জানান, টোকিও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এ ধরনের আয়োজন দেখার পরই ঢাকার মেলায় প্রাকৃতিক বনের আদলে কৃত্রিম বন তৈরির চিন্তা আসে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্যুরিজমকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বিস্তৃত এবং পরিবেশকে সুন্দর রাখার জন্য ২০১৩ সালে কাজ শুরু করি। আগামী বছর এ আয়োজনের সঙ্গে কক্সবাজারের সি-বিচ এবং বাংলাদেশের একটি আদর্শ গ্রামের দৃশ্য রাখব।
এই পার্ক তৈরিতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে জানিয়ে পরিবেশপ্রেমী লেমন বলেন, দেশের বড় কোম্পানিগুলো সহায়তা করলে এই পার্ককে আরও আধুনিকভাবে সাজিয়ে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সহজ হবে।
সূত্রঃ অর্থসূচক