Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সঞ্চয় নেই ৭৫ শতাংশ প্রবাসী পরিবারের

EXPATপ্রবাসীদের পাঠানো অর্থ সঞ্চয় করে না ৭৫ শতাংশ পরিবার। এসব পরিবারের উত্পাদনশীল খাতে অর্থ বিনিয়োগের প্রবণতা নেই। প্রবাসী আয়ের অধিকাংশ ব্যয় হয় সাংসারিক প্রয়োজন ও বিনোদনে। বিদেশ ফেরত শ্রমিকরা এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেন অনেক সময়। সম্প্রতি রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।

‘ইমপ্যাক্ট অব মাইগ্রেশন অন পভার্টি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাত্র ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবাসী পরিবারের সঞ্চয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১৯ দশমিক ২ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয় করে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার। প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ের মধ্যে ব্যাংকে ১৩ দশমিক ৫ এবং এনজিওতে সঞ্চয় করছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবার। অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে নিজের ঘরে ৫ দশমিক ২ এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে সঞ্চয় রয়েছে দশমিক ৫ শতাংশ পরিবারের। সব মিলিয়ে ৮০ শতাংশ পরিবারের প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয় নেই। আর কোনো ধরনের সঞ্চয় নেই ৭৫ শতাংশ প্রবাসীর পরিবারের। গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিদেশে রোজগারে গেছেন ৯১ লাখ ৪২ হাজার ৮০৬ জন বাংলাদেশী।

chardike-ad

এ বিষয়ে রামরুর চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, ভোগ ও নৈমিত্তিক ব্যয় মেটাতে অভ্যস্ত প্রবাসী পরিবারে সঞ্চয়ের প্রবণতা একটা সময়ে ছিলই না। তবে এখন সঞ্চয় বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সঞ্চয়কে উদ্বুদ্ধ করতে হলে আকর্ষণীয় সঞ্চয় স্কিম প্রবর্তন করা দরকার। সঞ্চয়ের ওপর প্রণোদনা দিতে হবে। প্রবাসীরা যাতে দেশে ফিরে অল্প সুদে ঋণ পান, সে বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জরুরি বলেও মন্তব্য করেন রামরু প্রধান।

‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসন-২০১২’ শীর্ষক রামরুর অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবাসী আয়ের মাত্র ৩ শতাংশ অর্থ সঞ্চয় হয়েছে। এর মধ্যে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে খরচ হয়েছে ২২ শতাংশ। ১৩ শতাংশ ঋণ পরিশোধে, ২০ শতাংশ জমি ক্রয়, ৩ শতাংশ ঘরবাড়ি মেরামত ও পরিবারের অন্য সদস্য বিদেশ পাঠাতে খরচ হয়েছে ৭ শতাংশ। অন্যদিকে উন্নয়ন খাতের মধ্যে শিক্ষায় ৯, চিকিত্সায় ৩, উচ্চফলনশীল বীজ-সার-কীটনাশক ও সেচকাজে ৪ শতাংশ প্রবাসীর অর্থ এ সময় ব্যয় হয়েছে বলে জানা যায়। ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়। কারখানা ও বিভিন্ন খামারে ব্যয় ২ শতাংশ। ১ শতাংশ দিয়ে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির পলিসি কিনেছে পরিবারগুলো। অন্যান্য কাজে তারা ব্যয় করেছে ৬ শতাংশ।

এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্রবাসী আয় ব্যবহার জরিপ ২০১৩’তে দেখা গেছে, ২০১২ সালের প্রবাসী আয়ের প্রায় ৩৯ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে খাদ্যের সংস্থানে। আরো অন্তত ৩৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে শিক্ষা, যাতায়াত, কাপড় কেনাসহ নানা ধরনের প্রয়োজনীয় খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে। টেলিভিশন, ফ্রিজ, মুঠোফোনসহ নানা ধরনের বিলাসপণ্য কিনতে খরচ হয়েছে ৫ শতাংশ। আর ১৭ শতাংশ দিয়ে কেনা হয়েছে জমি বা ফ্ল্যাট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বেশকিছু সঞ্চয় প্রকল্প চালু করলেও সেভাবে সাড়া মিলছে না। এর কারণ হিসেবে দূতাবাসে বন্ড না পাওয়াকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকে সীমিত সংখ্যক শাখায় এ ধরনের সেবা চালু থাকায় অনেকেই সুবিধা বঞ্চিত হন। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিম চালু থাকলেও প্রবাসীদের কাছে সেসব সহজে পৌঁছতে পারে না। অনেক প্রবাসী এসব সুবিধার বিষয়ে জ্ঞাত নন বলেও জানা গেছে। সূত্রঃ বণিকবার্তা।