শীর্ষ সম্ভাবনাময় উদীয়মান বাজার নিয়ে ব্লুমবার্গ মার্কেটসের চতুর্থ বার্ষিক র্যাংকিংয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে দক্ষিণ কোরিয়া। ২০১৫ সালে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত বাজার নিয়ে তৈরি এ র্যাংকিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পরেই অবস্থান করছে যথাক্রমে কাতার, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর ফ্রন্টিয়ার মার্কেটের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে সৌদি আরব। খবর ব্লুমবার্গ।
২০১৬ সাল পর্যন্ত ফ্রন্টিয়ার ও উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর সার্বিক বিনিয়োগ সম্ভাবনা তালিকা দুটি প্রণয়ন করেছে বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গ। এক্ষেত্রে ব্লুমবার্গ, এমএসসিআই, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’স এবং জেপি মরগানের তথ্যসহায়তা নেয়া হয়েছে। ১৯টি সূচকে দেশগুলোর কার্যক্রম বিবেচনা করে তাদের বিভিন্ন পয়েন্ট দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স করা বাজারটি পেয়েছে শূন্য পয়েন্ট এবং সবচেয়ে ভালো ফলাফল করা বাজারটি পেয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক পয়েন্ট। সব পয়েন্টকে যোগ করে সার্বিকভাবে শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত স্কোর করা হয়েছে। ২ জানুয়ারি পর্যন্ত যাবতীয় তথ্য এ র্যাংকিং প্রণয়নে ব্যবহার করা হয়েছে।
মোট স্কোরের ৪০ শতাংশ বণ্টন করা হয়েছে অর্থনৈতিক সূচকগুলোয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস, পূর্বাভাসকৃত মূল্যস্ফীতির হার এবং জিডিপির অনুপাতে সরকারি ঋণ, সার্বিক বিনিয়োগ ও চলতি হিসাব ভারসাম্য অর্থনৈতিক সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আরো ৪০ শতাংশ বণ্টন করা হয়েছে আর্থিক সূচকগুলোয়। এগুলোর মধ্যে প্রাইমারি ইকুইটির প্রাইস-টু-বুক রেশিও (পিবি রেশিও) অন্যতম। সাধারণত একটি কোম্পানির বুক ভ্যালুর বিপরীতে স্টক মার্কেটে সেটির মার্কেট ভ্যালুর অনুপাত পিবি রেশিও নামে পরিচিত। বাদবাকি ২০ শতাংশ বণ্টন করা হয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স, বিশ্বব্যাংকের প্রণীত সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ সূচক ও নিরক্ষতার হার এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারের কেওএসপিআই ইনডেক্সটির অর্ধেকেরও বেশ কোম্পানি রফতানিকারক। অন্যদিকে বাজারের ১৭ শতাংশ একাই দখল করে আছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। তাই ইউবিএসের সম্পদ ব্যবস্থাপনার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান হারমুত ইসেল বলেন, ‘কোরিয়ার স্টকের ভবিষ্যৎ প্রায় পুরোটাই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো তাদের বৃহত্তর বাজারগুলোর অর্থনীতির গতিবিধির ওপর।’
উদীয়মান অর্থনীতিগুলো বর্তমানে কিছুটা সংকটে থাকলেও তাতে অক্ষত রয়েছে চীন। ২০১৩ সালে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ পতনের পর ২০১৪ সালে সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্সটি এগিয়েছে ৫৮ শতাংশ। চীন নিয়ে বেশ আশাবাদী গোল্ডম্যান স্যাকসের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক প্রধান ও ‘ব্রিক’ ধারণার জনক জিম ও’নিল। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝি না কেন সবাই চীন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে। এ দশকজুড়ে প্রতি বছর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ গতিতে দেশটির অর্থনীতি এগোবে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছর দেশটি ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।’
বিভিন্ন ইকুইটি ইনডেক্সের প্রকাশক নিউইয়র্কভিত্তিক এমএসসিআই লেনদেনের পরিমাণ, বিদেশী বিনিয়োগের নিষেধাজ্ঞার মাত্রা, করপোরেট প্রশাসন এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে ইমার্জিং ও ফ্রন্টিয়ার মার্কেট হিসেবে বিভিন্ন দেশের অবস্থান নির্ধারণ করে থাকে। ফ্রন্টিয়ার মার্কেট সূচকে বাংলাদেশসহ ২৪টি দেশ রয়েছে। অন্যদিকে ইমার্জিং মার্কেট সূচকে রয়েছে ২৩টি দেশ।
২০১৪ সালে সংস্থাটি কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ফ্রন্টিয়ার সূচক থেকে ইমার্জিং সূচকে নিয়ে আসে। ফলে দেশটি ওই বছর বিশ্ববাজারে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণে সমর্থ হয়। নিজেদের বাজারে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় এখনো ফ্রন্টিয়ার বাজারে রয়েছে সৌদি আরব। গত জুলাইয়ে এ সীমাবদ্ধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি, যা আগামী এপ্রিল নাগাদ কার্যকর হবে। তা বাস্তবায়ন হলে ইমার্জিং মার্কেট সূচকে প্রবেশের অন্যতম শর্ত পূরণ করবে দেশটি।
চীনের পাশাপাশি ভারত নিয়েও বিশ্লেষকরা বেশ আশাবাদী। সংস্কারবাদী অর্থনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর গত ২৬ মে থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের সেনসেক্স ইনডেক্সটি ১৬ শতাংশ বেড়েছে। ইমার্জিং মার্কেট সূচকে ভারতের অবস্থান ২৪তম। ব্রিকের অন্য দুটি দেশ ব্রাজিল ও রাশিয়ার অবস্থান যথাক্রমে ১৬ ও ২২তম।
ট্যাম্পলেটন ইমার্জিং মার্কেটস গ্রুপের চেয়ারম্যান মার্ক মবিয়াস বলেন, ‘ইমার্জিং মার্কেটগুলো নিয়ে তিনটি বিষয় এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে। উন্নত অর্থনীতিগুলোর তুলনায় তাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি দ্রুত, তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও তুলনামূলক বেশি এবং অগ্রসর অর্থনীতিগুলোর তুলনায়ও তাদের জিডিপির অনুপাতে সরকারি ঋণের বোঝা কম।’
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও পণ্যের মূল্যপতনের কারণে উদীয়মান অর্থনীতির কিছু দেশ বর্তমানে সংকটে থাকলেও ২০১৫ সালে তাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের তুলনায় বেশি থাকবে বলে মনে করেন মবিয়াস।