Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বোমাবাজরা সৎ ও মেধাবী

bomb attestedশহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ছাত্র মো. রেজাউল ইসলামকে পেট্রলবোমাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করেছিল মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। এ ঘটনার পর রেজাউলের আইনজীবী আদালতে আসামির জামিনের পক্ষে একটি প্রত্যয়নপত্র জমা দেন। আওয়ামী লীগের পাবনা সদর উপজেলা সভাপতি আলহাজ মো. মোশারফ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই প্রত্যয়নপত্রে বলা হয়- ‘আসামি রেজাউল ইসলাম আওয়ামী লীগের সদস্য। সে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত নয়’।

শুধু মোহাম্মদপুর থানার এই একটি ঘটনাই নয়, সারা দেশে এমন শত শত আসামির পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রত্যয়নপত্র দিয়ে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের জামিন করে ছাড়িয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। আর এ প্রত্যয়নপত্রের বিনিময়ে ওই নেতারা কোথাও মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন, কোথাও বা আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে তাদের এমন প্রত্যয়নপত্র দিয়ে দিচ্ছেন। নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে পড়ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবেও জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলেছেন, নেতাদের প্রত্যয়নপত্র বিলি বন্ধ না করলে মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হলেও বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে না। বরং অনেকেই জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের একই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারপন্থি হিসেবে পরিচিত আইনজীবীরাই নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিদের পক্ষে কাজ করেন। সরকারদলীয় প্রত্যয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে আদালতপাড়ায় একাধিক আইনজীবী বলছেন, পুলিশ আসলে কি অপরাধী ধরছে, নাকি সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে?

chardike-ad

সূত্র নিশ্চিত করেছে, সারা দেশে হরতাল-অবরোধ চলাকালে বিভিন্ন নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিরা জামিনে ছাড়াও পেয়ে যাচ্ছেন। জামিন সহজ করতে কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রত্যয়নপত্র ব্যবহার করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিভিন্ন নাশকতার মামলায় পাঁচ শতাধিক প্রত্যয়নপত্র দাখিল করেছে আসামিপক্ষ। অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুর থানার ১ (২) ১৫ নম্বর মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামি মনিরুজ্জামান সরকারের পক্ষে তার আইনজীবী ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমানের আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের ওপর শুনানির সময় আসামির আইনজীবী আওয়ামী লীগের একটি প্যাডে লিখিত প্রত্যয়নপত্র জমা দেন। ওই প্যাডে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসামির পক্ষে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে আসামি জড়িত নয়’ মর্মে প্রত্যয়নপত্র দাখিল করেন। এ ছাড়া একই মামলায় অন্য আসামি মো. সালাউদ্দিনের পক্ষে তার আইনজীবী একই ধরনের প্রত্যয়নপত্র আদালতে দাখিল করেন। ওই প্রত্যয়নপত্রে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ৪ নম্বর মসিন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল বারী একটি লিখিত বক্তব্য দেন। তাতে উল্লেখ করা হয়- আসামি সালাউদ্দিন মিরপুর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং তিনি কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত নন। এ ছাড়া আইনজীবী শুনানিতে বলেন প্রয়োজনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে এ প্রত্যয়নপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য। পরে শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে প্রত্যয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কোনো আদেশ দেননি।ঢাকার নিম্ন আদালতের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, নাশকতার মামলাগুলোয় যদি আদালত এ ধরনের প্রত্যয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন তাহলে পুলিশ অবশ্যই তা তদন্ত করে দেখবে।

ঢাকার জিআর সেকশনের এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাধারণত মামলায় বিচারক জামিন না দিলে এসব প্রত্যয়নপত্র নথিতে সংযুক্ত করে রাখা হয় না। তবে জামিন হলে আদালতের নির্দেশে আমরা নথিতে এসব ফিরিস্তিযোগে কাগজ রেখে দিই।’ ঢাকা জজকোর্টের ফৌজদারি আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব প্রত্যয়নপত্র মামলা বিতর্কিত করে দেয়। আদালতের উচিত হবে এগুলো যথাযথ যাচাই-বাছাই করা। কেননা যদি এগুলো ভুয়া হয় তাহলে আসামিরা আরও বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়বেন এবং সাধারণ আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন। নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের যত নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছিলেন তার বড় একটি অংশ ইতিমধ্যে ছাড়াও পেয়েছেন। বিস্ফোরণ মামলায় বগুড়ার নিশিন্দারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর বিএনপির সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম সরকারকে গ্রেফতারের পর তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। তার জামিনের পক্ষে আদালতে লড়েন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী। আবার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিযুক্ত করে মামলায় তাদের আগাম জামিন পেতে সহযোগিতা করেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী পরিষদের নেতা। এ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আসামিদের জামিন পাওয়া প্রসঙ্গে একজন আইনজীবী বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তের তালিকা এক ও অভিন্ন। অনেক মামলায় অভিযুক্তের নাম, ঠিকানা ও বিবরণ দেওয়া হলেও আরেকটি মামলায় সংক্ষিপ্ত নাম দেওয়া হয়। অনেক সময় ঠিকানাও এদিক-ওদিক করা হয়। অভিযুক্তরা কে কী করছেন তা-ও বলা হয় না। বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানাও ভুল থাকে। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলায় জব্দের কোনো তালিকা থাকে না। ফলে অভিযুক্তরা সহজেই জামিন পেয়ে আবার নাশকতায় মেতে ওঠেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কোনো আইনজীবী মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাংলাদেশ প্রতিদিন।