Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মুনাফায় শীর্ষে দেশের দশ ব্যাংক

munafaঋণ নীতিমালায় ছাড়ের সুবাদে ২০১৪ সালে নিট মুনাফা বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের। কর প্রদান ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর গত বছর সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বাংলাদেশ শাখা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফাও আরেক বিদেশী ব্যাংক এইচএসবিসির। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এর পর রয়েছে সোনালী, জনতা, সাউথইস্ট, অগ্রণী, ইউসিবিএল, পূবালী ও এক্সিম ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া ব্যাংকগুলোর মুনাফার প্রাথমিক হিসাব থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ মুনাফা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের হলেও মুনাফা বৃদ্ধিতে ব্যাংকটি রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি মুনাফা বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের। মুনাফা বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে দ্য সিটি ব্যাংক।

chardike-ad

পরিচালনগত মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি (প্রভিশন) ও কর (৪২ দশমিক ৫ শতাংশ) বাদ দিয়ে নিট মুনাফা হিসাব করা হয়।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর বড় অঙ্কের লোকসান করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। ২০১৪ সালে ব্যাংকটি লোকসান করেছে ২ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এর প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংকিং খাতে। সার্বিকভাবে গত বছর এ খাতের মুনাফা ২০১৩ সালের চেয়ে ১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা কমে গেছে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে ব্যাংকিং খাতের পরিচালন মুনাফা ছিল ১৮ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। কর পরিশোধ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৭ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে পরিচালন মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। তবে নিট মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এ হিসাবে ২০১৩ সালের তুলনায় ২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা বাড়লেও নিট মুনাফা কমেছে ১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের বড় অঙ্কের লোকসানের কারণেই খাতটির নিট মুনাফা কমেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক গত বছর নিট মুনাফা করেছে ১ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। কর পরিশোধ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর ২০১৩ সালে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৮৩৯ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০১৪ সালে এইচএসবিসির নিট মুনাফা ছিল ৫৭৯ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে বিদেশী খাতের ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছিল ৫৬২ কোটি টাকা।

সর্বোচ্চ মুনাফাকারী ব্যাংকের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংক গত বছর নিট মুনাফা করেছে ৫১৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে কর পরিশোধ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর ব্যাংকটি মুনাফা করে ৪৭০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতেও আমরা নতুন নতুন বিনিয়োগের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এসব ব্যবসায়ীই আমাদের মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়েছেন।’

২০১১ সালে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর সংকটে পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এর প্রভাব পড়ে ব্যাংকটির মুনাফায়। ২০১২ সালে মুনাফার পরিবর্তে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান করে ব্যাংকটি। পরের বছর মুনাফার ধারায় ফেরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকটি। ২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংক ১৯০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করতে সক্ষম হয়। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯১ কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির আগে সোনালী ব্যাংক যে পর্যায়ে ছিল, তার চেয়ে এখন ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে। ফলে মুনাফাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বর্তমানে কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। ঋণ প্রদানের জন্য নতুন গ্রাহক খোঁজা হচ্ছে।

আলোচ্য সময়ে আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক জনতার নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩৯৩ কোটি টাকা। এ সময়ে বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের নিট মুনাফার পরিমাণ ৩৭৯ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৪ সালে অগ্রণী ৩৭৬ কোটি, ইউসিবিএল ৩৭২ কোটি, পূবালী ৩৩৫ কোটি ও এক্সিম ব্যাংক ২৭৯ কোটি টাকা নিট মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে।

সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি মো. সহিদ হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূলে না থাকলেও ২০১৪ সালে আমরা কিছুটা ব্যবসা করতে পেরেছি। এতে মুনাফা বেড়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি খুবই নাজুক।’

২০১৩ সালের তুলনায় গত বছর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নিট মুনাফা কমেও গেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জনতার ৩৬৩ কোটি, ইস্টার্নের ৪৩ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটির ১৭ কোটি, শাহজালালের ৮৬ কোটি ও উরি ব্যাংকের নিট মুনাফা ১৪ কোটি টাকা কমে গেছে।

২০১২ ও ২০১৩ সালে বেসিক ব্যাংকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম সংঘটিত হয়। এতে বেড়ে যায় ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ। এ অনিয়মের ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। ২০১৪ সালে ২ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে ব্যাংকটি। একইভাবে মুনাফার পরিবর্তে ১১২ কোটি টাকা লোকসান দাঁড়িয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের।

এদিকে ২০১৩ সালের তুলনায় গত বছর মুনাফা বৃদ্ধিতে শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এ সময় ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৩০১ কোটি টাকা। একই সময়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ২৫৯ কোটি ও দ্য সিটি ব্যাংকের ১৫৮ কোটি টাকা।

গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ যে কোনো উপায়ে ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোর প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ছিল। এ সুযোগে অবাধে ঋণ পুনঃতফসিল ও অবলোপন হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মুনাফায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ তসলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১৪ সালে দেশে ব্যবসার পরিবেশ ছিল না। এর পরও এত মুনাফা হয় কীভাবে। প্রকৃত মুনাফা কত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বণিকবার্তা।