Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জীবন যুদ্ধে জয়ী একজন ডিজনি

dijniআমরা সবাই ছোট বেলায় অনেক কার্টুন দেখেছি এবং ওয়াল্ট ডিজনি নামটার সাথে বেশ পরিচিত। এটা একজন ব্যক্তির নাম। তিনি একটা পত্রিকায় কার্টুন আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। পত্রিকার মালিক তাকে চাকরিচ্যুত করেন এই বলে যে, তার কল্পনা করার শক্তি নাই এবং তার মধ্যে ক্রিয়েটিভ আইডিয়া নাই।

তিনি ওয়াল্ট ডিজনি নামে একটা কম্পানি দেন এবং তার বাসার গেরেজ এ তার অফিস খুলেন। ওয়াল্ট ডিজনি বর্তমানে হলিউডের একটা বিখ্যাত কম্পানি। যার বাৎসরিক আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার । আামদের আজকের জীবনের জয়গানে তুলে ধরব আন্তর্জাতিক আইকন এবং বিনোদন জগতের এক অমর ব্যক্তিত্ব ওয়াল্ট ডিজনির সফলতার কাহিনী।

chardike-ad

১৯০১ সালের ৫ ডিসেম্বর আমেরিকার শিকাগো শহরের নিতান্তই একটি গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডিজনি। ডিজনির বাবা এলিয়েস ডিজনি ছিলেন একজন কাঠ মিস্ত্রী। সাত জনের সংসার নিয়ে অভাবের তাড়নায় শহরে টিকে থাকতে না পেরে শহর ছেড়ে মিসৌরীতে চলে যান তারা। গ্রামে এসে এক খামারে কাজ শুরু করেন এলিয়েস ডিজনি। কিন্তু একসময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর গ্রাম ছেড়ে কানসাস শহরে এসে নতুন করে জীবন শুরু করেন তারা।

অভাবের সংসারে বাবার কাজে সহযোগিতার জন্য স্কুলে পা রাখা হয় নি ডিজনির। দীর্ঘ ১৬ বছর পর স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয় ডিজনির। তার বাবা জেলির ব্যবসা শুরু করার পর ডিজনি মূলত বেকার হয়ে পড়েন। তাই তার বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু পড়াশোনায় মন ছিল না ওয়াল্ট ডিজনির। পড়াশোনার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়ে পড়াশোনার ইতি ঘটে ওয়াল্ট ডিজনির।

পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর বাবার অবাধ্য হয়ে কানসাসের ছোট একটি ষ্টুডিওতে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯১৯ সালে আঁকার হাতটিকে আরও ঝানু করে তৈরি করার জন্য ‘কমার্সিয়াল আর্টসে’ শিক্ষানবিস হিসেবে যোগ দেন। এখানে ওয়াল্ট ডিজনির সাথে পরিচয় হয় ‘ইউব ওয়ার্কাস’ এর। দুজনের মধ্যে একসময় ভালো বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে। ‘ইউব ওয়ার্কাস’ ছিলেন প্রতিভাবান একজন পরিশ্রমী শিল্পী। অ্যানিমেশন জগতের স্রষ্টা হিসেবে সকলে ওয়াল্ট ডিজনি এর নাম জানলেও এই অ্যানিমেশন এর সৃষ্টিতে ‘ইউব ওয়ার্কাস’ এরও অনেকটা অবদান রয়েছে। তারা দুজন মিলে ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি বিজ্ঞাপন সংস্থা। কিন্তু কানসাস শহরটি ছিল খুব ছোট্ট একটি শহর। তাই এই ছোট্ট শহরে তাদের এই বিজ্ঞাপন সংস্থা সেভাবে ডালপালা মেলতে পারেনি। এরপর মাত্র ২০ ডলার হাতে নিয়ে ওয়াল্ট ডিজনি পাড়ি দেন ক্যালিফোর্নিয়ায়।

ওয়াল্ট ডিজনি যে চরিত্রগুলো নিয়ে কাজ করতেন সেগুলো হলো প্রাণীদের কার্টুন। দর্শকদের মাথায় খেলা করতে শুরু করে যে, কিভাবে পরিচালক এগুলোকে চরিত্রে রূপদান করছেন। ১ম সবাক মুভি ‘স্টীমবোট উইলি’র সফলতা অর্জনের পর জোরেশোরে শুরু করেন ‘মিকি মাউস’ এর পরবর্তী ছবির কাজ।

এবার ‘মিকি মাউস’কে নিয়ে ‘সিলি সিম্ফনি’ নামে সিরিজ নির্মাণের চিন্তাভাবনা করেন। এই সিরিজের ১ম মুভি ‘স্কেলিটন ড্যান্স’ মুক্তি পায় ১৯২৯ সালে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি ‘মিকি মাউস’কে। পরবর্তী ১০ বছরে এই সিরিজের ৭০ টি মুভি নির্মাণ করা হয়। ১৯৩৩ সালে ডিজনি অ্যানিমেশন মুভির জগতে ১ম রঙিন মুভি নির্মাণ করেন। মুভিটির নাম ‘ফ্লাওয়ার্স এন্ড ট্রিজ’।

ডিজনি ওয়াল্ট এর এই অ্যানিমেটেড মুভিগুলো নির্মাণ করা হতো তারই প্রতিষ্ঠিত ‘ডিজনি ওয়াল্ট’ নামে প্রোডাকশন কোম্পানি থেকে। কোম্পানিটির বর্তমান লোগো ওয়াল্ট ডিজনি লেখাটির পাশাপাশি একটি দুর্গ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ২০০০ সাল থেকে বর্তমান লোগোটি ব্যবহার করা শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে এসে এই লোগোতে যুক্ত হয় কয়েকটি উজ্জ্বল তারা। ১৯৩৪ সালে তার প্রোডাকশন কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় সাতশ’র বেশি। নিজের ছবিগুলির পারিবেশনের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছিলেন। ১৯৩৪ সালে তিনি লন্ডন ও প্যারিসে তার পরিবেশ সংস্থার শাখা অফিস খুলেন।

১৯৬৬ সালে ডিসেম্বর মাসে তার শরীরটা হঠাৎ খুবই খারাপ হতে থাকে। ১৯৬৬ সালের ১৫ই ডিসেম্বর এই দুনিয়া থেকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয় চিরন্তন এই শিশু মানবটি। ডিজনি যেদিন মারা যান তার ঠিক ১০ দিন পরই ছিল বড়দিন। সেবার বড়দিনে শিশুরা কোনো আনন্দ পালন করেননি। তাদের প্রিয় এই বন্ধুটির মৃত্যুর সংবাদে তারা সবাই বড়দিনের আনন্দ ভুলে গিয়েছিলেন।