Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ

NCC-Bankপ্রবাসীদের পাঠানো অর্থ এনসিসি ব্যাংক থেকে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের রেমিট্যান্স বিভাগের প্রধানসহ ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনায় আস্থার সংকটে পড়েছে ব্যাংকটি। কমে গেছে এনসিসি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্সপ্রবাহ।

এনসিসি ব্যাংক সূত্র জানায়, গত এক বছরে এনসিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ফরেন রেমিট্যান্স বিভাগের কর্মকর্তারা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন— রেমিট্যান্স বিভাগের প্রধান এসভিপি এবিএম জসিমউদ্দিন আহমেদ, এসএভিপি সাবিনা ইয়াসমিন, ভিপি মঞ্জুরুল হক আকন, এফএভিপি সালাউদ্দিন আহমেদ, এভিপি শামসুর রহমান খান ও কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। চলতি মাসে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

chardike-ad

এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম হাফিজ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি খোয়া যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কিছুটা সময় লাগলেও এ টাকা ফেরত পাওয়া যাবে।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। তার সন্ধানে এসসিসি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা ফরিদপুরে তার গ্রামের বাড়ি গেলেও খোঁজ মেলেনি। তবে ঊর্ধ্বতন পাঁচ কর্মকর্তা বরখাস্ত অবস্থায় ঢাকায়ই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে এসভিপি জসিমউদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

কথা বলতে রাজি হননি আরেক অভিযুক্ত কর্মকর্তা শামসুর রহমানও। তিনি টেলিফোনে কথা বলার বিষয়ে অপারগতা জানান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, সিদ্দিকুর রহমানই এ ঘটনার মূল নায়ক। তিনিই এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তবে রেমিট্যান্স শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। এ কারণেই তারা এখন আসামির কাঠগড়ায়। তদন্ত শেষ হলেই সবকিছু পরিষ্কার হবে।

এ ঘটনার জন্য রেমিট্যান্স বিভাগের প্রধানসহ অভিযুক্ত সবাইকে দায়ী করেছেন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বলেন, এসভিপি এবিএম জসিমউদ্দিন গত পাঁচ বছর ব্যাংকটি থেকে পদোন্নতিসহ অনেক বেশি সুবিধা নিয়েছেন। রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য তিনি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে সঙ্গে নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। এভাবে তিনি ব্যাংকের ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তাছাড়া বিষয়টি তো একদিনে হয়নি যে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগোচরে থেকে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে অর্থ সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকের কর্মকর্তা পর্যায়ে রেমিট্যান্স আত্মসাতের ঘটনায় প্রবাসে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে এনসিসি ব্যাংক। ফলে কমে গেছে তাদের রেমিট্যান্স সংগ্রহ।

সূত্রমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৩৫ মিলিয়ন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৩৭ মিলিয়ন ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৩২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে এনসিসি ব্যাংকের মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে ব্যাংকটির মাধ্যমে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাইয়েও এনসিসি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। কিন্তু অক্টোবরে তা কমে দাঁড়ায় ১৭ মিলিয়ন ডলারে। পরবর্তীতে নভেম্বরে ১৮ মিলিয়ন, ডিসেম্বরে ২০ মিলিয়ন, জানুয়ারিতে ১৭ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারিতে ১৪ মিলিয়ন, মার্চে ১৭ মিলিয়ন, এপ্রিলে ১৬ মিলিয়ন ও মে মাসে ১৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে ব্যাংকটির মাধ্যমে।

তবে রেমিট্যান্স বাড়ানোর লক্ষ্যে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান ব্যাংকের এমডি। তিনি বলেন, কিছু ঝামেলার কারণে রেমিট্যান্স কম আসছে। তবে শিগগিরই তা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনায় এর আগে এনসিসি ব্যাংককে সতর্ক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই রোধে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও বাংলাদেশ শ্রম আইন মেনে ব্যাংকগুলোকে সার্ভিস রুলস সংশোধন করতে হবে। এছাড়া ব্যাংকে নিয়োগকালে পেশাদারিত্ব বজায় রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি নারী কর্মীরা অফিস সময়ের অতিরিক্ত অবস্থান করলে উপযুক্ত নিরাপত্তা ও পারিশ্রমিক প্রদান করতে বলা হয়। নিয়োগকালে পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রার্থী বাছাই করার কথাও বলা হয় প্রজ্ঞাপনে।(সৌজন্যেঃ বণিকবার্তা)