Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিমান যখন মামুবাড়ি!

bimanকেউ জানালায় তুলে দিয়েছেন পা। কেউ বা দু’পা ছড়িয়ে একাই দখল করে আছেন তিন তিনটি আসন। আবার কেউ কেউ পা ঝুলিয়ে হাঁটার প্যাসেজ বন্ধ করে ফেলেছেন। কারও কারও নাক ডাকার শব্দ যেন হারা মানাচ্ছে ইঞ্জিনের বিকট শব্দকেও।

এ দৃশ্যে মামুবাড়ির পরিবেশ প্রতিফলিত হলেও আসলে কিন্তু তা নয়। চিত্রটি বিজি-০৮৬ ফ্লাইটের! গন্তব্য মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালাল‍ামপুর।

chardike-ad

বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাত। ৪১৯ জন যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বোয়িং ৭৭৭/৩০০ ইআর উড়োজাহাজটি সাকুল্যে ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে বয়ে চলেছে। এদের একজন মাত্র বিজনেস ক্লাসের যাত্রী, বাকিরা ইকোনমি ক্লাসের। যাত্রীদের ১২ জন ভিনদেশি।

মিনিট ত্রিশেক পরেই কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করবে উড়োজাহাজটি। সিট বেল্ট বাঁধার সংকেত বেজে উঠেছে। এতেও সাড়া নেই বেশিরভাগ যাত্রীর। বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন তারা। ঢাকার ফুটপাতে ছিন্নমূল মানুষেরা যেভাবে ঘুমায় ঠিক সেভাবেই যেন ঘুম‍াচ্ছেন যাত্রীরা।

bimanতাদের অনেকেই বিমানের আসনগুলোকে বানিয়ে ফেলেছেন বাসা-বাড়ির বিছান‍া। কেউ জানালার দিকে মাথা রেখে পাশাপাশি তিনটি সিটই দখল করে ফেলেছেন দু’পা ছড়িয়ে দিয়ে। কেউ বা নিজের মাথাটা হাঁটার প্যাসেজের দিকে দিয়ে পা দিয়েছেন জানালার দিকে।

সিটে হেলান দিয়ে কিংবা সিট একটু ঢালু করে উচ্চ শব্দে নাক ডেকে স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন অনেক যাত্রীই। এতে অন্য যাত্রীদের আপত্তির কিছু ছিলো না। অসুবিধা হলো- দু’পা ছড়িয়ে দুই সারি আসনের মাঝের সরু পথটা বন্ধ করে ফেলায়। এতে অন্যান্য যাত্রী ও ক্রুদের চলাচলে হয় বিপত্তি। ক্রুরা যাত্রীদের পা আলতো করে ছুঁয়ে তাদের ডেকে তোলার চেষ্টা করছেন।

‘মনে কিছু করবেন না। পা-টা কি একটু সরাবেন?’ ইংরেজিতে বলা ভিনদেশি সহযাত্রীদের এই আকুতি ‘মামুবাড়িতে’ ঘুমানো যাত্রীরা শুনছিলেন কি না কে জানে! প্লেনের ক্রুরা ছুটে এসে আলতো করে তাদের ডেকে তুলে আকার ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটা বাড়ির বিছানা নয়, বিমানের আসন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সামান্য বিরতি দিয়ে আবার যে সেই দশা।

‘এ কেমন অসভ্যতা।’ বিমানের টয়লেট থেকে ফেরার পথে এমন কথা শোনা গেলো বেশ কয়েকজন ভিনদেশি যাত্রীর মুখে।

biman‘আপনারা কিছু বলেন না?’ জানতে চাইলে বিমানবালা হেনা জানান, এটা সত্যিই অভদ্র ও অসৌজন্যমূলক আচরণ। প্রথমত ভিনদেশি অন্য কোনো এয়ারক্রাফটে এভাবে দু’পা ছড়িয়ে ঘুমানোর বিষয়টি কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু কি করার! যাত্রীদের সবাই আমাদের কাছে সমান। শিক্ষার অভাবেই হয়তো অনেকের মাঝে সামান্য সৌজন্যতাবোধও নেই। তাই কিছু না বলে তাদের পা ছুঁয়েই জাগিয়ে দিতে হয়!

‘এভাবে ঘুমানো নিরাপত্তার জন্য মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ যেকোনো মুহূর্তে জরুরি প্রয়োজন হতে পারে। জরুরি অবতরণ করার সময় এভাবে পা ঝুলিয়ে যাত্রাপথ আটকে রাখা তো কল্পনাই করা যায় না’, যোগ করেন এই বিমানবালা।

তবে নিয়মিত যাত্রীরা জানান, মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটে এটা নিত্যকার দৃশ্য। স্বদেশীদের কারও কারও কাছে এটা বিরক্তিকর হলেও ভিনদেশি যাত্রীদের কাছে এটা অসৌজন্যতা ও অভদ্রতা!

সৌজন্যেঃ বাংলানিউজ২৪