সম্প্রতি ৫০ মিলিয়ন ডলার ওঠানোর জন্যে মানুষের কাছে সাহায্য চায় কলোরাডোভিত্তিক অ্যায়ারস্পেস স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এক্সটিআই উড়োজাহাজ। আর এই সাহায্যটি তারা চায় সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটি জেট বানাবার জন্যে।
যেটার গতি হবে একটা জেট প্লেনের সমান কিন্তু উড়তে ও নামতে পারবে একদম একটি হেলিকপ্টারের মতন করেই। তবে কেবল তাই নয়, ‘ট্রাইফেন ৬০০’ নামের ছয় আসন বিশিষ্ট এই সম্পূর্ণ অন্যরকম উড়োজাহাজটির রয়েছে আরো একটি বিশেষত্ব। আর সেটি হচ্ছে, একে অন্যদের মতন কোনো ধরনের হ্যালিপ্যাডের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে না। যেকোনো স্থানেই নেমে যেতে পারবে এটি। আর তাই এয়ারপোর্টেই যে নামতে হবে উড়োজাহাজকে সে ধারণা পুরোপুরিই ভেঙে দিতে যাচ্ছে এটি।
বিশেষভাবে তৈরি এই জেটের শরীরে থাকবে তিনটি পাখা। একটি পেছনে এবং দুটি এর সামনের দুই পাশে। এক্সটিআই থেকে জানানো হয়, প্রথমে তিনটি পাখা একে ওপরে ওঠানোর কাজে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীতে পাশের দুইটি পাখা প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে শুরু করবে এবং এদের থেকেই উড়োজাহাজটি পাবে দুর্দান্ত গতি!
নিজেদের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে ‘ট্রাইফেন ৬০০’ এর ছবি প্রকাশ করে ফেলেছে এক্সটিআই। তাদের মতে, এই উড়োজাহাজটি একজন মানুষকে বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দরে ভ্রমণের প্রথা পাল্টে দিয়ে সুযোগ করে দেবে এক আড়ি থেকে অন্য আড়ির সামনে গিয়ে নামার। এতে করে সময় বাঁচবে! অন্য জেটগুলোর চাইতে আলাদা এই জেটের রয়েছে আবহাওয়াকে টেক্কা দেবার মতন ক্ষমতা। সেই সঙ্গে সময় বাঁচানোর ক্ষেত্রে অন্য বিজনেস জেটের চাইতেও বেশি পারদর্শিতা।
নতুন এই বিজনেস জেটের প্রবক্তা ডেভিড রুডি এর আগে ছিলেন এভিএক্স এয়ারক্রাফট কো-এর সাবেক সভাপতি ও প্রধান কার্যনির্বাহী। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তিনি নিজের এই প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। রুডি ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানটির কান্ডারীদের ভেতরে রয়েছেন সিকোরস্কি এয়ারক্র্যাফটের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেফরি পিনো এবং টেক্সটন ইনের জেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সেসনার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস জনসন। তবে এরা ছাড়াও প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে এখানে নিয়োজিত আছেন পিপারজেট প্রোগ্রাম ও অ্যাডাম এয়ারক্রাফটের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ডেনিস অলকট।
আমেরিকার নিরাপত্তা ও বিনিময় কমিশনের ২০১৫ এর মার্চে নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই জনসাহায্যের এই পথটি বেছে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ইকুয়িটি ক্রাউড ফান্ডিং বলতে সাধারণত ব্যক্তিগত মালিকানার সাহায্য চাওয়া হয় সমতার খাতিরে। শুধু তাই নয়, অন্য সব ধরনের বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক এমন প্রতিষ্ঠান ও মানুষের কাছ থেকেও সাহায্য নিতে রাজি তারা। এক্সটিআই এর মতে- তারা স্বীকৃত ও অস্বীকৃত সব ধরনের উত্সকেই নিজেদের কাজে যোগদানের জন্যে সুযোগ দিচ্ছে। তাও কোনো বাঁধাধরা নিয়ম ছাড়াই!
‘আমরা আশা করছি যে বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে, সাধারণ মানুষ ও যারা বিমানচালনা নিয়ে আগ্রহী, নিজেদের যতটুকু আছে সেটা নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন এই উড়োজাহাজ নির্মাণের কাজে অংশ নেবে যেটা কিনা পুরো ব্যাপারটাকেই পাল্টে দেবে!’ – বলেন এক্সটিআই এর কর্মকর্তারা।
দুই বছরের এই উন্নয়ন কাজে এক্সটিআই ‘ট্রাইফেন ৬০০’-কে এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করছে যাতে করে এটা হয়ে ওঠে প্রথম কোনো ব্যাবসায়িকভাবে স্বীকৃত প্রচন্ড গতির, দূরপাল্লার উরম্ব বা খাড়াভাবে উড়তে ও নামতে পারার মতন উড়োজাহাজ। নিজের পাখাগুলোকে ব্যবহার করেই ট্রাইফান খুব সহজে খাড়াভাবেই উড়তে পারবে। আর এর নামবার বা ওড়বার জন্যে দরকারের খানিকটা জায়গা হলেই চলবে। তা সেটা যেখানেই হোক না কেন!
মাত্র ৯০ সেকেন্ডের ভেতরেই এটি নিজের দুর্দান্ত গতিতে চলতে শুরু করবে। যখন কিনা একটি সাধারণ উড়োজাহাজ মাটি থেকে ওঠার চেষ্টা করে। উড়োজাহাজটির আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি সরাসরি নিজের গন্তব্যে গিয়ে হাজির হবে এবং পুরো ব্যাপারটি উল্টোভাবেও করে ফেলতে পারবে। বলা হয়েছে যে, এক্সটিআই এর এই নতুন জেটটির গতি হবে ঘণ্টা প্রতি ৪০০ মিটার এবং এর আয়ত্বাধীন অঞ্চলের পরিমাপ হবে ৮০০ থেকে ১,২০০ মাইল। নতুন সব পরীক্ষিত প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে অন্যদের তুলনায় ঝুঁকিও কম থাকবে উড়োজাহাজটির।
পুরোটা খরচ চলে আসলে অচিরেই নিজেদের প্রচন্ড উন্নত মানের এই জেটকে বাস্তবে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে এক্সটিআই-এর!