বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ডের দূরত্ব কতো জানেন? সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটারেরও কিছু বেশী। সেই দেশের ঠিক ক’জন মানুষ তৃতীয় বিশ্বের এই উন্নয়নশীল দেশটির নাম জানে সেটা একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। কিন্তু এই অখ্যাত বাঙাল মুলুকই যদি ওই পোল্যান্ডের কারও গবেষণার বিষয় হয়ে যায় তাহলে ব্যাপারটা কেমন শোনায়? যেমনই শোনাক, তাতে প্যাট্রিসিয়া স্লিভিন্সকা ওরফে জয়ার কিচ্ছু যায়-আসে না। পোলিশ এই তরুণী এখন বাংলার প্রেমে বিভোর। ভালোবেসে পোল্যান্ডের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন বাংলা ভাষা নিয়ে। আর নিয়মিত তাঁর বাংলা শিক্ষার অগ্রগতি বিষয়ে জানাচ্ছেন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে!
ঠিক কিভাবে এলো এই ‘বাংলা’ প্রেম? প্যাট্রিসিয়া নিজেই শোনাচ্ছেন সে গল্প, “আমার যখন দশ বছর বয়স তখন আমার মা আমাকে ভূগোলের উপর বানানো একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম এনে দেন যেখানে বিশ্বের সব দেশের জাতীয় সঙ্গীত ছিল। আমি এখান থেকে সবগুলো জাতীয় সঙ্গীত শুনি। কিন্তু আমি অনুভব করলাম যে আমি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতটির প্রেমে পড়ে গেছি কারন এটা ছিল খুবই সুন্দর।”
তারপর? “সেই বয়স থেকেই আমি বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে জানার চেষ্টা করতে থাকি। অন্যান্য দেশ নিয়েও আমি জানার চেষ্টা করতাম কারণ দীর্ঘদিন ভূগোল আমার প্রিয় বিষয় ছিল।”
কিন্তু ভূগোলের প্রেম প্যাট্রিসিয়ার বাংলা প্রেমের কাছে হার মেনে যায়, “একটা সময় এসে বাংলা শেখাটা আমার স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। এই ভাষাটা আমার কাছে শুনতে খুবই মধুর মনে হয়। এটাই এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাষা।”
শুধু কি ভালোবেসেই ক্ষান্তি দিয়েছেন এই তরুণী? না, ভালোবাসাকে সম্পূর্ণ নিজের মাঝে ধারণ করতে প্যাট্রিসিয়া নিজেকে বদলে হয়ে উঠতে চাইছেন পুরোদস্তুর বাঙালি। নিজের ডাক নাম রেখেছেন বাংলায়, জয়া।
বর্তমানে তিনি পোল্যান্ডের ওয়ারসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি বিভাগের অধীনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি নিজের বাঙ্গালিয়ানা চর্চার অংশ হিসেবে পরছেন বাঙালি পোশাক, গাইছেন বাংলা গান। জয়া মনে করেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ইউরোপিয়ান বা অ্যামেরিকান গান না শুনে বাংলা গানই শোনা উচিৎ এবং এসব গান নিয়ে গর্ববোধ করা উচিৎ। তাঁর মতে বাংলা গানের মত করে অর্থবহ বার্তা কোন পশ্চিমা গান দিতে পারে না।
জয়ার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল থেকে পাওয়া তাঁর নিজের গাওয়া কিছু বাংলা গান ও বাংলা ভাষা বিষয়ে তাঁর নিজস্ব উপলব্ধি বাংলা টেলিগ্রাফের পাঠকদের জন্য এখানে ‘শেয়ার’ করা হলঃ