টাকার অঙ্কটা কম নয়, ৫০ লাখ। চাইলেই টাকাগুলো নিয়ে দুবাই থেকে বাংলাদেশে চলে আসতে পারতেন ট্যাক্সিচালক আরিফুল করিম। তবে ওই পথে পা বাড়াননি আরিফ। কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পুরো টাকাটাই তিনি যাত্রীকে ফেরত দিয়েছেন।
কম্পিউটার ডিজাইনের চাকরিটি ছেড়ে দুই বছর আগে ট্যাক্সি চালানো শুরু করেন ২৮ বছরের আরিফুল করিম। এই চাকরিটা বেশ উপভোগ করেন তিনি। ভোর ৪টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাড়ি চালান তিনি। গত বছর এক যাত্রীকে ৫০ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ায় সততার পুরস্কার হিসেবে দুবাইয়ের সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের (আরটিএ) কাছ থেকে সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
সেই ঘটনার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আরিফুল বলেন, ‘গত বছর রমজান মাস শেষ হওয়ার ঠিক আগে এক যাত্রী মনের ভুলে তার জিনিসপত্র ট্যাক্সিতে রেখেই চলে যান। আমি বিষয়টি খেয়াল করিনি । এরপর আরো কয়েকজন যাত্রীকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিই। পরে ট্যাক্সিতে বিশ্রামের জন্য গা এলিয়ে দিতেই একটি কাগজের প্যাকেট দেখতে পাই। দুই সিটের মাঝখানে সেটি পড়ে ছিল। প্যাকেটটি বের করে আনতেই বুঝলাম এর মধ্যে নগদ অর্থ আছে। গুনে দেখলাম মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার দিরহাম (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ লাখ) । সঙ্গে সঙ্গে আমি আরটিএকে বিষয়টি জানালাম এবং কার্যালয়ে প্যাকেটটি জমা দিলাম। একদিন পর ওই যাত্রী আরটিএ কার্যালয়ে গেলেন। তাকে বলা হলো, তার প্যাকেটটি যেমন ছিল, তেমনি আছে। আমাকেও ডাকা হলো এবং আমি ওই যাত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। ইরানের ওই নাগরিক পুরস্কার হিসেবে আমাকে ৩০০ দিরহাম দিলেন।’
আরটিএ আরিফুলের এই সততার স্বীকৃতি হিসেবে একটি ব্যাজ ও সনদ দিয়েছে।
তবে আরিফুল জানিয়েছেন এটাই প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার তিনি যাত্রীদের উপকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা প্রায়ই তাদের মানিব্যাগ বা মোবাইল ভুল করে ফেলে যায়। প্রতিবার আমি আরটিএ কার্যালয়ে এগুলো জানাই এবং যাত্রীদের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র সেখানে জমা দিই। একবার এক যাত্রী ভাড়া পরিশোধের সময় ৫৮ দিরহামের পরিবর্তে ভুল করে ৫৩০ দিরহাম দিয়েছিলেন। আমি যখন বুঝলাম তিনি আমাকে ৫৮ দিরহামের পরিবর্তে ভুল করে ৫৩০ দিরহাম দিয়েছেন, আমি তাকে ডেকে সেটা বললাম।’
আরিফুল জানান, তার বাবা-মা তাকে সব সময় সঠিক পথ বেছে নেওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।
স্মিত হেসে বাংলাদেশি এই তরুণ বলেন, ‘আমার ভালোমন্দ আল্লাহ দেখেন, আমি কেন অযথা দুশ্চিন্তা করব?’
সূত্র : এমিরেটস ২৪৭ ডটকম