Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফিলিপাইনের দেয়ালহীন সেই কারাগার

karagarএডুইন ইয়োমসম। ডাকাতির অপরাধে এরই মধ্যে জেলে কাটিয়েছেন পাঁচ বছর। নির্ধারিত সাজার মেয়াদ শেষ করতে থাকতে হবে আরো ১০ বছর। কারাগারে বন্দি হওয়া সত্ত্বেও এক সুইমিং পুলের পাশে বাচ্চাদের কাছে বাদাম ও বিস্কুট বিক্রি করছেন তিনি। পাশেই কাস্তে হাতে ঘাস কাটছেন কয়েক’শ বন্দি। ফিলিপাইনের আইঅহিগ জেলখানায় গেলে কারাবন্দিদের এমন উন্মুক্ত চলাফেরার দৃশ্যই চোখে পড়বে। সম্প্রতি সেই উন্মুক্ত জেলখানা থেকে ঘুরে এসে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় একটি প্রতিবেদন লিখেছেন অ্যাঞ্জেল এল. মার্টিজে ক্যানতেরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের মুক্ত জেলখানাগুলোর মধ্যে বৃহত্তম হচ্ছে ফিলিপাইনের আইঅহিগ জেলখানা। এখানে দেয়ালের পরিবর্তে আছে তারের বেড়া। প্রবেশদ্বারে আত্মীয় স্বজনদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আছেন একজন নিরাপত্তারক্ষী।পালাওয়ান প্রদেশের রাজধানী পুয়ের্তো প্রিন্সেসায় অবস্থিত এ জেলখানায় বাস করেন তিন হাজার ১৮৬ জন বন্দি। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় নদীর পাশেই অবস্থান এর।

chardike-ad

ম্যানগ্রোভ বন এবং পর্বত ঘেরা এ জেলটি ২৬ হাজার হেক্টর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত যা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের আয়তনের দ্বিগুণ।
বাগানের পরিচর্যার এক পর্যায়ে ইফরেন ইস্পিনোসা নামের একজন বলেন, এখানকার অবস্থা অন্যান্য জেলখানার চাইতে অনেক ভালো এবং এখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের সঙ্গে শ্রদ্ধার সাথেই কথা বলেন।

কম কড়াকড়িতে থাকা ২শ’ বন্দি(যাদের অপরাধ লঘু) কৃষিকাজ, প্রশাসনিক কাজ এবং মাঝারি পর্যায়ের বন্দিদের পরিচালনা করেন। এর পরের এক হfজার বন্দি নীল টি-শার্ট পরেন এবং তাদের কাজ হচ্ছে ধান, নারিকেল, ভুট্টা এবং সব্জি ক্ষেতের পরিচর্যা করা।

এখানকার বন্দিদের কাজের ফলে যা আয় হয় তা খরচ হয় তাদের ভালো রাখার জন্যই।

জেলখানার সুপরিনটেনডেন্ট অ্যান্টোনিও সি ক্রুজ বলেন, এ জেলখানার মূল্ লক্ষ্য অপরাধীদের পূনর্বাসন। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র সাজা দেয়া নয় তাদেরকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনাও।

ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ থাকার সময় ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আইঅহিগ জেলখানা এবং তখন এখানে সবচে ভয়ঙ্কর বন্দিদের রাখা হতো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ফিলিপাইন স্বাধীনতা অর্জন করলো তারপর ১৯৭০ সালে নিরাপত্তার পরিমান কমিয়ে কিছু অভিযুক্তের পরিবারকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাদাম বাগানের ভিতরে।

কিন্তু এখন ২০ জন কম কড়াকড়ির বন্দি আইঅহিগের মধ্যে তাদের পরিবার নিয়ে বাস করেন। এদের প্রত্যেকের মাসিক আয়ের পরিমাণ প্রায় সাড়ে চার ডলার যেখানে মধ্যম কড়াকড়ির বন্দিদের আয় এর প্রায় অর্ধেক। নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি বোর্ড বসে বন্দিদের অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়।

তাদের আয়ের একটি অংশ ফান্ডে রেখে দেয়া হয়। সাজার সময় শেষ হওয়ার পর তা তাদের দিয়ে দেয়া হয় যাতে মুক্তির পর তাদের হাতে সঞ্চয়ের কিছু টাকা থাকে।

তবে খুশি নন সব বন্দি

তবে এখানকার সব বন্দিরাই খুশি নন। জেল খানার মধ্যে নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করেন ২৯ বছর বয়সী জেফারি। তিনি তার সাজার পরিমান নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট। গাড়ি চুরির অপরাধে খাটছেন ১৫ বছরের সাজা।

জেলখানায় খাবারের সংকটের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এ জায়গা আমার পছন্দ না। এই দ্বীপের অবস্থান ম্যানিলা থেকে অনেক দূরে হওয়ার কারণে আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে দেখতে আসতে পারেন না।’

একইভাবে আর্সেলিও গাদ্দি নামের ৬২ বছরের এক নারী জেলখানার সমালোচনা করে বলেন, ‘এখানকার নিয়ম কানুন নিয়মিত কড়া হয়ে যাচ্ছে। আমার স্বামী আর বাইরে থাকতে পারছেন না।’

ফিলিপাইনের অন্যান্য জেলখানা থেকে আইঅহিগের বন্দিদের মুক্তির সংখ্যা খুবই কম। গত দশকে এখান থেকে মুক্তি পেয়েছেন মাত্র ২০ জন বন্দি।

অনেক বন্দিই এখানকার ব্যবস্থাপনা দুর্বল বলে অভিযোগ করছেন। ২০০৭ সালে ফিলিপাইনের সরকারি ওয়েবসাইট অমবাডসম্যানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলখানাটির বন্দিদের আয়ের হিসাবে অসচ্ছতা রয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বলশাহান সুইমিংপুলে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় যার কোন রশিদ নেই। এটাই প্রমাণ করে এখানেও দুর্নীতি হচ্ছে।

সূত্র: আল জাজিরা, সৌজন্যেঃ প্রিয়.কম