Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রাণের বিরুদ্ধে সনদ প্রতারণার অভিযোগ আইসিডিডিআরবির

pranদেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি প্রাণ-আরএফএলের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি কর্তৃক পরীক্ষিত দাবি করে নিজেদের তৈরি পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র ‘ড্রিংকইট’ বাজারজাত করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ডিউরেবল প্লাস্টিক লিমিটেড। পণ্যটির প্রচারে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বিলবোর্ডও স্থাপন করেছে তারা। বিষয়টি নজরে আসার পর গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রাণের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান ও আইনি অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আইসিডিডিআর,বি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মিডিয়া সেল থেকে বলা হয়েছে, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসে পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিন ‘ড্রিংকইট’। মেশিনটির পানি কতটুকু বিশুদ্ধ তা যাচাইয়ের জন্য আইসিডিডিআর,বির কাছে আবেদন করে প্রাণ-আরএফএল। সংস্থাটি দৈবচয়নের মাধ্যমে কয়েকটি মেশিনের পানি পরীক্ষা করে দেখে যে, মেশিনের পানি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। এ অবস্থায় তারা ওই মেশিনগুলোর সনদ দেয়। তবে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না মর্মে শর্ত দেয় আইসিডিডিআর,বি। তাছাড়া সবগুলো মেশিনের পানি পরীক্ষা সম্ভব নয় বিধায় অন্য কোনো মেশিনের দায়ভারও নেয়নি সংস্থাটি। কিন্তু ভুলবশত প্রাণ-আরএফএলের পক্ষ থেকে বিলবোর্ডগুলোয় মেশিনটি আইসিডিডিআর,বি সদনকৃত বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটি থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হলে রাজধানীতে যে বিলবোর্ড ছিল, তা অপসারণ করা হয়েছে।

chardike-ad

যদিও আইসিডিডিআর,বি বলছে, সনদ প্রদানের কোনো পর্যায়েরই জড়িত ছিল না সংস্থাটি। প্রাণের এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি গণমাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছে, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডিউরেবল প্লাস্টিক লিমিটেডের ড্রিংকইট পিউরিফায়ার মেশিনটি আইসিডিডিআর,বি কর্তৃক পরীক্ষিত বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তা সত্য নয়। কোনো বাণিজ্যিক পণ্যের সনদ তারা দিতে পারে না। কোনো অবস্থাই এ পণ্যের সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাটি জড়িত ছিল না। এ ধরনের কার্যক্রম তথ্য বিভ্রাট এবং আইনের লঙ্ঘন।

জানা গেছে, ১৯৮১ সালে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের (আরএফএল) মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ তৈরির উদ্দেশ্যে রংপুরে কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৫০০টিরও বেশি খাদ্যপণ্য এবং ১ হাজার ৫০০টির বেশি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লাস্টিক পণ্য রয়েছে। শতাধিক দেশে পণ্য রফতানি করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের নানা পর্যায়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে প্রাণ গ্রুপের রফতানি পণ্যে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ ভাইরাস ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি থাকায় কানাডা থেকে খাদ্যপণ্য ফেরত আসে। প্রাণ এগ্রো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের ইতালিতে রফতানিকৃত খাদ্যপণ্যের চালানে রোডেন্ট এক্সট্রেমেন্টের (ইঁদুরের বিষ্ঠা) উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর তা জব্দ হয়। ইতালির সীমান্ত কর্তৃপক্ষ চালানটি প্রত্যাখ্যান করে এবং এ ধরনের মানহীন পণ্য প্রেরণে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইইউ।

গুণগত মান বজায় রেখে উৎপাদন করতে না পারায় প্রাণের আটটি খাদ্যপণ্যের সিএম লাইসেন্স বাতিল করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এগুলো হল— ম্যাংগো, অরেঞ্জ, লেমন, স্ট্রবেরি, লিচি, আপেল, পাইনঅ্যাপেলসহ ফ্রুট ককটেইল নামের সব ফ্রুট ড্রিংকস। এছাড়া প্রাণের গুঁড়ো হলুদে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ২৩ গুণ মাত্রায় সিসা পাওয়ার কারণে পণ্যটির সনদ বাতিল করে বিএসটিআই।

শুধু তা-ই নয়। কাঁচা আমে মানবদেহে ক্ষতিকর ফরমালিন মেশাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত হন প্রাণের দুই কর্মকর্তা। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামে কাঁচা আমে ফরমালিন মেশানোর দায়ে প্রাণের কর্মকর্তাসহ একজনকে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি জেলায় প্রাণের জুসে ফরমালিন পাওয়া যায়। বণিকবার্তা।