Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যে কারণে বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ রাখা উচিত

facebook-bannedবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তায় এগিয়ে যায় মানবসভ্যতা। নতুন নতুন প্রযুক্তি মানুষের জীবনে আনে নতুনত্ব। সহজ ও সাবলীল করে তোলে দৈনন্দিন জীবনকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আবিষ্কার আমাদের জীবনে এনেছে নতুনত্ব। ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাধন করেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আজ ঘরে বসেই ফেসবুকের মাধ্যমে জেনে যাচ্ছি বিশ্বের খবর। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কে কেমন আছেন, সহজেই জেনে নিচ্ছি ফেসবুক ব্যবহার করে। নিত্যনতুন ছবি আর মত প্রকাশ করে ভরিয়ে তুলছি নিজের ফেসবুক ওয়াল। বর্তমান প্রজন্ম যেন ফেসবুক ছাড়া একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারে না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফেসবুকে ঢুঁ মারা বন্ধ নেই।

ফেসবুক যেন এক মায়াজালে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে আমাদের। ফেসবুকের জন্য আমাদের মধ্যে যে কী টান তৈরি হয়েছে, সেটা গেল কয়েক দিন বন্ধ থাকায় অনুভব করতে পারছি। সেই টানে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেও ফেসবুক ব্যবহার করছি আমরা। সবকিছু মিলিয়ে ফেসবুক যে আমাদের নেশায় পরিণত হয়েছে, আমরা যে ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়েছি, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। ফেসবুক ছাড়া যেন একটি দিনও আমরা ভাবতে পারি না। তবে মন থেকে বলছি, আমি ফেসবুক চাই না। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে ফেসবুক বন্ধ রাখা হোক। আর যদি খোলা রাখা হয়ও, তাহলে সেটা সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে রাখা হোক। কেন আমি চাই বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ রাখা হোক? তার আগে চলুন একটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

chardike-ad

‘বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটির ওপরে। তার মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি। বাংলাদেশে ফেসবুকে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সিদের হার ৪২ শতাংশ (তথ্যসূত্র: দ্য ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ, ঢাকা)।’

ওপরের তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশ তরুণ প্রজন্ম। ১৩ থেকে ২২ বছরের ছাত্রছাত্রী, তরুণ-তরুণী। সংস্কৃতিতে একটি কথা রয়েছে ‘ছাত্রনং অধ্যয়ন তপ:’ পড়াশোনা করাই ছাত্রদের তপস্যা। কিন্তু ফেসবুকের কারণে আমাদের স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়নে ব্যাঘাত ঘটছে বৈকি। ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ ফেসবুকে আসক্ত। তারা যতটুকু না পড়াশোনা করে তার সমান কিংবা তার চেয়ে বেশি ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। ছাত্রজীবনে যদি ফেসবুক নিয়ে পড়ে থেকে সময় নষ্ট করা হয়- তাহলে কী শিখবে তারা? আর তাদের কাছ থেকে জাতিই বা কী আশা করতে পারবে?

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশ তরুণ প্রজন্ম। যাদের আবিষ্কারের নেশায় মেতে থাকা উচিত। নতুন নতুন চিন্তা-চেতনা আর সৃষ্টিশীলতা দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার চিন্তা করা উচিত। কিন্তু এই তরুণ প্রজন্ম সারা দিন ফেসবুক নিয়ে থাকলে তাদের নতুন কিছু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় কই? তরুণ প্রজন্ম তাদের অপার সম্ভাবনাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে ফেসবুকের কাছে। তাদের চিন্তা-চেতনাজুড়ে থাকছে ভার্চ্যুয়াল জগৎ। ফেসবুকের নেশায় তারা দেশ ও জাতিকে কিছু দেওয়ার বিষয়টি বেমালুম ভুলে যাচ্ছে।

তা ছাড়া কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের একটা অংশ ফেসবুকের অপব্যবহার করছে। তাদের মধ্যে একাধিক ভার্চ্যুয়াল প্রেম করার প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ছে নোংরা চিন্তা-ভাবনা ও কুপ্রবৃত্তি। একাধিক ভার্চ্যুয়াল জগতে একাধিক প্রেমের কারণে তারা ফেসবুক থেকে মাথা তুলতে পারছে না।

যারা পড়াশোনা করে চাকরিতে প্রবেশ করেছেন তাদের অনেকেরই ফেসবুকে আসক্তি রয়েছে। তারা অফিস টাইমের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকেন। এতে করে বিভিন্ন অফিস-আদালতের কর্মচারীদের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাংলাদেশে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখের ওপরে। এর তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫৬ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি প্রতিদিন গড়ে ১ ঘণ্টা করে ফেসবুক ব্যবহার করেন তাহলে দৈনিক ৫৬ লাখ ঘণ্টা তথা এক দিনেই ৬৪টি বছর অপচয় হচ্ছে। তাহলে মাসে এবং বছরে কতশত বছর অপচয় হচ্ছে? চিন্তা করে দেখুন, কী নিদারুণ সময়ের অপচয় হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে। অথচ ফেসবুক না থাকলে এই সময়গুলো তরুণরা সৃষ্টিশীল কিছু করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারত। নতুন কিছু চিন্তা করতে পারত। সৃষ্টিশীল চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে পারত।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে এত সময় অপচয় করার অবকাশ কোথায়? ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে বেড়ে উঠবে। তরুণ প্রজন্ম সৃষ্টিশীল চিন্তা-ভাবনায় মগ্ন থাকবে। সমাজ, দেশ ও বিশ্বের জন্য নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে। কর্মজীবীরা তাদের কর্মঘণ্টার পুরোটা সময়জুড়ে কাজ করবে। উৎপাদন বাড়িয়ে এগিয়ে নেবে দেশকে। তাহলেই তো উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হব আমরা। দেশকে এগিয়ে নিতে অবসর কোথায় আমাদের? সেখানে কিনা আমরা ফেসবুকের পেছনে কোটি কোটি ঘণ্টা নষ্ট করছি। দৈনিক ৬৪ বছর নষ্ট না করে এর অর্ধেকও যদি সৃষ্টিশীল কিছু চিন্তার পেছনে ব্যয় করা হয়, কর্মক্ষেত্রে কাজ করে যাওয়া হয়, তাহলেও তো বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে যেতে পারে।

উন্নত বিশ্বের মানুষের চাকরি নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা নেই খাওয়া-পরা নিয়ে। অবসর নেওয়া তাদের মানায়। আমাদের দেশে যেখানে মানুষ খেতে-পরতে পারে না, যেখানে এখনো ২৭.৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে (২০১৪ সালের আগস্ট মাসের হিসাব অনুযায়ী), সেখানে অবসর নেওয়ার সময় কই? সময় অপচয় করার সুযোগ কই? ফেসবুকের জন্য বাংলাদেশ বিশাল একটি বাজার। তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করে ক্ষতিগ্রস্ত করছে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের, তরুণদের, যুবকদের, কর্মজীবী মানুষদের। সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্ত করছে আমাদের দেশকে।

যেহেতু আমরা ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়েছি এবং পড়ছি, সেহেতু এখান থেকে চাইলেই একবারে বের হয়ে যেতে পারব না। সে ক্ষেত্রে সরকার ফেসবুক বন্ধ করলেও আসক্তরা প্রক্সি সার্ভার দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করবে। তাই সরকারের উচিত হবে সপ্তাহে অন্তত ছুটির দিনে সবাইকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া। অন্য দিনগুলোতে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে ফেসবুক ব্যবহার।

ফেসবুকে সময় অপচয় না করে পড়াশোনায় মগ্ন হোক ছাত্রছাত্রীরা। অদম্য মেধাবী হয়ে উঠুক আমাদের ছাত্রসমাজ, সদগুণাবলিতে বলীয়ান হয়ে সুনাগরিক হিসেবে বড় হোক তারা। দেশ ও জাতির কল্যাণে চিন্তা-চেতনাকে কাজে লাগাক তরুণ প্রজন্ম। আর কর্মক্ষম ব্যক্তিরা তাদের কর্মঘণ্টার সদ্ব্যবহার করে নিশ্চিত করুক উৎপাদন। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

লেখক: আমিনুল ইসলাম (ক্রীড়া সাংবাদিক), সৌজন্যেঃ রাইজিংবিডি