Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বন্ধুত্বই সব, দেশপ্রেম মিথ্যা!

bangladesh-indiaবাংলাদেশের কাছে ভারতের চাওয়ার আর বোধহয় তেমন কিছু নেই। যা কিছু চাওয়ার, আমাদের সরকার একে একে সবই দিয়ে দিয়েছে। এইতো কিছুদিন আগে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। অনুপ চেটিয়া প্রায় ১৮ বছর বাংলাদেশের কারাগারে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা ছিল এবং সেসব মামলায় যে সাজা হয়েছিল, তা তিনি খেটেছেন। সাজা খাটার পরও তিনি বহুদিন কারাগারে ছিলেন।

ভারত অনুপ চেটিয়াকে বহুবার ফেরত চেয়েছে। নানা কারণে বাংলাদেশ তাকে ফেরত দেয়নি। এমনকি ২০১৩ সালে দু’দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করে নাই সরকার। এবার অতিসংগোপনে তাকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কাক-পক্ষীও জানতে পারেনি। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপ চেটিয়ার ভারতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত তার হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে পারেননি তা খবরে জানা গেছে। তার ভারতে পৌঁছার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী খোদ শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

chardike-ad

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস মাধ্যমে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে অনুপ চেটিয়ার হস্তান্তরটি দ্রুত হয়েছে। আমার দেখা এনডিটিভির রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চেয়েছিলেন এক ধরনের বিনিময় ব্যবস্থা। অর্থাৎ ভারতে অবস্থানরত কয়েকজন ক্রিমিনালকে বাংলাদেশে ফেরত দেয়ার বিনিময়ে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফেরৎ পাঠাতে কোনো শর্ত যুক্ত করতে চাননি। কিসের ভিত্তিতে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, সে সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিস্তারিত আজো কিছু জানাননি। শুধু এটুকু বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে যে সুসম্পর্ক রয়েছে, তার ভিত্তিতেই তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই তো গেলো অনুপ চেটিয়ার কথা।

এবার আসা যাক ট্রানজিট বিষয়, বাংলাদেশ সরকারের সাথে এর আগে ভারতের সম্পাদিত তিস্তার পানি চুক্তির খবর না থাকলেও চার দেশীয় সড়ক যোগাযোগের নামে ট্রানজিট ঠিকই নিয়েছে ভারত। সড়ক ট্রানজিট হিসেবে পরিচিত চারদেশীয় যানচলাচল চুক্তির আওতায় মাশুল কত হবে তা নির্ধারিত না হলেও সড়ক ট্রানজিটের মাশুল কত হবে তার একটি ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিল। সম্ভবত এই ভিত্তি ধরে মাশুল নির্ধারিত হবে। ফলে সেই মাশুলও যে খুবই কম হবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

স্মরণ করে দিতে চাই, ট্রানজিট নিয়ে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি কোর কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি একটি সমন্বিত ট্রানজিটের জন্য ১৫ ধরনের মাশুল আরোপের সুপারিশ করেছিল। কমিটির একটি সুপারিশে ছিল, কেবল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক বিভাগের মাশুলই হবে সর্বনিম্ন ৫৮০ টাকা। কোর কমিটি বলেছিল, ট্রানজিট দিতে বাংলাদেশকে অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। কোর কমিটির সুপারিশ কোনো গ্রাহ্যতা পায়নি শুধু বন্ধুত্বের স্বার্থে। ৫৮০ টাকার মাশুল হয়েছে ১৩০ টাকা। তার মানে ভারতের কলকাতা থেকে আগরতলায় মালামাল নিয়ে যাবে বাংলাদেশের সড়ক পথে। বিনিময়ে পাবে কিলোমিটার প্রতি ১ দশমিক ২০ টাকা। এই সড়ক পথ এবং অবকাঠামো ঠিক করতে খরচ হবে ৪৭ হাজার কোটি টাকা, যার পুরোটাই বহন করতে হবে বাংলাদেশকে (আমাদের টাক্সের টাকায়)!

আসুন তাহলে একটা ছোট অংক করে ফেলি আমরা
কলকাতা থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে আগরতলা যেতে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক পাড়ি দিতে হয়, আর এতে সময় লাগবে ১৯২ ঘণ্টা। পক্ষান্তরে কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে আগরতলার সড়ক দূরত্ব প্রায় ৫৫০ কিলোমিটারের মতো, তাতে সময় লাগবে ৫১ ঘণ্টা। যদি প্রতিদিনে ১০০০ ট্রাক (ট্রাক প্রতি ৫ টন হিসেবে) ট্রানজিট নিলেও শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণ করতে যে খরচ হবে তা ট্রানজিট ফি থেকে উঠাতে লাগবে প্রায় ৪৪ বছর। এছাড়া রাস্তা মেরামত, পুরো রাস্তায় ট্রাকের নিরাপত্তা এবং আরো লোকবল বাবদ যে খরচ হবে তার পুরোটাই বহন করতে হবে আপনার, আমার টাক্সের টাকায়!

বলায় বাহুল্য যে এই ট্রানজিটের ফলে, ভারতের সময় বাঁচবে ট্রাক প্রতি ১৫০ ঘণ্টা বা ১০০০ কিলোমিটার এবং ১৫০ ঘণ্টার জন্য ট্রাকের জ্বালানি। সময় বাদ দিয়ে শুধু জ্বালানির হিসাব করলেও প্রতি ট্রাকে ৮০০০ টাকা (লিটারে ১০ কিলোমিটার এবং ৮০ টাকা/লিটার হিসেবে) অর্থাৎ ১০০০ ট্রাকে প্রতিদিন ৮০,০০,০০০ টাকা সাশ্রয় করবে কোনো প্রকার বিনিয়োগ না করেই। ওই ৪৭ হাজার কোটি টাকা কীভাবে কোথা থেকে আসবে, তার কোনো খোঁজ নেই। আর আমরা ৪৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাবো মাত্র ২,৭৯৫,০০০ টাকা প্রতিদিন!

সবশেষ গত সোমবার ভারত নিজেদের জন্য তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আমদানি করতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে চায়! এজন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে একটি যৌথ কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসিএল)। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গে অবশ্য আগেই বৈঠকে করে পেলেছেন।

সারমর্মে বলতে চাই, প্রতিবেশী দেশের ইচ্ছা পূরণে ও স্বার্থে কোনো দেশের এভাবে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার নজির বিশ্বের ইতিহাসে বোধকরি খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু ‘সুসম্পর্কের কারণে’ কিংবা ‘রাজনৈতিক সমর্থনের বিনিময়ে’ বর্তমান আমাদের সরকার একের পর এক যা করছে, তার খেসারত কিন্তু দেশের জনগণকেই দিতে হবে। পরিশেষে আরেকটি কথা, দেশের নীতিনির্ধারকরা হিসাব না বুঝলে বাংলাদেশের ব্যাংকে মজুদ না বেড়ে বাড়বে বন্ধুদের দেশের।

ই-মেইল: ronybd84@yahoo.com (লেখক)