Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি অপচয়

dhaka_roadগন্তব্যে পৌঁছতে কত সময় লাগবে— ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে তা বলা এক রকম অসম্ভব। সকাল হোক বা দুপুর, বিকাল কিংবা সন্ধ্যা কখনই বলা সম্ভব নয়, কতটুকু সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছা যাবে। কারণ একটাই— যানজট। এর কবলে পড়ে ঢাকাবাসীর দৈনিক সময় নষ্ট হচ্ছে গড়ে দেড় ঘণ্টা। পাশাপাশি যানজটে আটকে অপচয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জ্বালানিও, যার আর্থিক মূল্য বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) ও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের যৌথ সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। যানজটের কারণ ও প্রভাব নিরূপণ এবং তা নিরসনে করণীয় নির্ধারণে সম্প্রতি যৌথভাবে সমীক্ষাটি চালানো হয়। সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় কানাডিয়ান সেন্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড এডুকেশনের জার্নাল অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটিতে।

chardike-ad

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বিদ্যমান পরিবহনগুলোর অবস্থাও নাজুক। তাই বাধ্য হয়ে রাজধানীবাসী ছোট পরিবহন তথা ব্যক্তিগত গাড়ির দিকে ঝুঁকছে। গত বছর দৈনিক গড়ে ৭৫টি করে ব্যক্তিগত গাড়ি ও ১২৩টি মোটরবাইক নেমেছে ঢাকা শহরে। অন্যান্য যানবাহন বিবেচনা করলে ২৫০ ছাড়াবে যানবাহনের সংখ্যা। এত বেশি সংখ্যক গাড়ির চাপে ঢাকা শহর অচল হয়ে পড়ছে। যানজটে আটকে অপচয় হচ্ছে যানবাহনের বিপুল পরিমাণ জ্বালানিও।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। এর প্রায় ৭৬ শতাংশই নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। এতে ঢাকাবাসীর সময় ব্যয় হয় দৈনিক গড়ে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। এর মধ্যে যানজটে আটকে থেকে নষ্ট হয় প্রায় দেড় ঘণ্টা। অর্থাত্ যাতায়াতের জন্য ব্যয়িত সময়ের ৫৫ শতাংশই অপচয় হয়। একই কারণে গাড়িচালকদের অপচয় হয় কর্মঘণ্টার প্রায় ২৫ শতাংশ।

ঢাকা শহরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ মোটরযান চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি যানজটে আটকে থাকে গড়ে দেড় ঘণ্টা করে। বাস-মিনিবাস আটকে থাকে সাড়ে ৩ এবং অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাব আড়াই ঘণ্টা। এ থেকে মুক্ত নয় মোটরবাইকও। এগুলোও দৈনিক প্রায় ৩০ মিনিট সময় পথে আটকে থাকে। এতে বছরে যে পরিমাণ জ্বালানি অপচয় হয়, তার আর্থিক মূল্য ১১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে সমীক্ষা পরিচালনাকারী দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর সহকারী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ বণিক বার্তাকে বলেন, যানজটে জ্বালানি তেলের অপচয় বের করতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ইকোনমেট্রিক মডেল প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ঢাকা শহর ও আশপাশের বিভিন্ন ফুয়েল স্টেশনে কী পরিমাণ জ্বালানি বিক্রি হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যানজটে কত সময় আটকে থাকছে এবং এতে কী পরিমাণ জ্বালানি ব্যয় হচ্ছে— এসব তথ্য ব্যবহার করা হয়। আর প্রাপ্ত ফলাফল তুলনা করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তথ্যের সঙ্গে।

সমীক্ষার তথ্যমতে, প্রতিটি মোটরযান চলাচলে নির্দিষ্ট একটি ব্যয় রয়েছে, যা ভেহিকল অপারেশন কস্ট (ভিওসি) নামে পরিচিত। যানজটের কারণে প্রতিটি গাড়ির এ-সংশ্লিষ্ট ব্যয় বাড়ছে। বিশেষত অত্যধিক সময় চালু থাকার কারণে মোটরযানের আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। এছাড়া যানজটের কারণে ঢাকাবাসীর প্রত্যেকের যাতায়াত ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। এখন যাতায়াতে ঢাকাবাসীকে গড়ে ৭৬ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। তবে যানজট না থাকলে এ ব্যয় ৪৩ টাকায় নেমে আসত।

এদিকে যানজটে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় দৈনিক গড়ে ৩০ টাকা আয় কম হয়। এক কোটি জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ দৈনিক প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আর বছরে ঢাকাবাসীর আয় কম হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।

যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে সমীক্ষায় বেশকিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অপর্যাপ্ত সড়ক নেটওয়ার্ক, নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, যেখানে সেখানে পার্কিং ও গণপরিবহনের স্বল্পতা এর মধ্যে অন্যতম। এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার যানজট হ্রাসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিবহন বিভাগের অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান বলেন, ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। হাঁটার পথ প্রশস্ত ও সুগম করা, ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি। এর পর আসবে ট্রাফিক আইন মানা ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন। মূলত ঢাকা শহরের যানজট কমাতে একক ক্ষমতার নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তা না হলে যতই উদ্যোগ নেয়া হোক, ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। সূত্রঃ বণিকবার্তা।