Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রেমিটেন্স বৃদ্ধির পথে বিছানো বিক্ষিপ্ত প্রতিবন্ধকতা

REMITTANCEগণমাধ্যম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ অর্থবছরে ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স ফ্লো ১৫ বিলিয়ন ডলারের সীমারেখা ছাড়িয়ে যাবে এ বছরেই।

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা ২০১৫ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত পঞ্জিকাবর্ষের হিসাবে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। এর সূত্র ধরে ২০১১ সালের কথাও বলা যেতে পারে, যেখানে রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো। এর পর ২০১২ অর্থবছরে এসে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৩ অর্থবছরে তা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০১৪ অর্থবছরে তা ১৪ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। এক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে আমাদের স্থানীয় মুদ্রা অনেকাংশেই কমে গেছে বলে প্রবৃদ্ধিটা আরো প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে, যার সঙ্গে ভারত কিংবা পাকিস্তানকে মেলানো যাবে না। তবে এ কয়েক বছরে যে ধারাবাহিক উন্নয়ন ঘটেছে, সেটি পরিসংখ্যান থেকে সহজেই দৃশ্যমান হয়।

chardike-ad

একই সঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন— সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, কুয়েত, ইরান ও লিবিয়ায় যেসব বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন, তারা স্বদেশে পাঠিয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, ৯ দশমিক শূন্য ৭২ বিলিয়ন ডলার তারা এ দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত অর্থবছরে অর্জিত রেমিট্যান্সের ৬০ শতাংশের মতো হবে। প্রতি বছর এ হার বেড়ে যাচ্ছে ৮ শতাংশ কিংবা এর কাছাকাছি হারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের কর্মীরা গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যথাক্রমে ১ দশমিক ১৪ ও ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন স্বদেশে। তাদের প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, বিশ্বের নানা দেশে অবস্থিত ৩৪টি এক্সচেঞ্জ হাউজ প্রায় ১ হাজার ১২৩টির মতো সমস্যা সমাধান করেছে, যা রেমিট্যান্স বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, বেশির ভাগ রেমিট্যান্স আসছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাত ধরে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত প্রত্যেক কর্মীকে ওয়াকিবহাল করা— কোন সহজ মাধ্যমে আয়েশে ও নিরাপদে তারা অর্থকড়ি দেশে পাঠাতে পারে। এমন সুবিধাজনক পদ্ধতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা উচিত, যার মাধ্যমে মানুষ সহজে অর্থ পাঠায় এবং অনৈতিক হুন্ডির সাহায্য না নেয়। দ্য রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ) কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৭ জন বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত।  ২০১৫ সালে প্রাপ্ত এ পরিসংখ্যান ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়, যা নিঃসন্দেহে আশাবাদী হওয়ার মতো।

তবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের দিকে এসে রেমিট্যান্স প্রবাহে একটা পতন পরিদৃষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে মার্চের শুরুতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে গেছে বহুলাংশে। সেখানে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান। তবে এটি বাদ দিলে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহের মোট পরিমাণ বেড়ে গেছে বেশ, যা ৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ২০১৪-১৫ সালে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তা একই সময়ের বিচারে ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে প্রতীয়মান।

রেমিট্যান্সের এ অধোগতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোয় বাংলাদেশী শ্রমিকদের অপেক্ষাকৃত কম নিয়োগপ্রাপ্তি। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী তেলের দরপতন একে আরো প্রভাবিত করেছে, যা মূল্যমান বিচারেও রেমিট্যান্সপ্রবাহকে অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে। এর বাইরে আরো দুটি ঘটনা বাংলাদেশী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে। প্রথমে বলা যেতে পারে রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, ইয়েমেন ও তিউনিসিয়ায় বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। অন্যদিকে এই একই ডিনামিকসে উক্ত দেশগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নও থমকে গেছে বহুলাংশে, যা রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন এক্ষেত্রে মুদ্রামান বিচারে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে অনেক দিক থেকে। অন্তত অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে আসা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পেছনে এমনই নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা উঠছে শুরু থেকেই।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান-বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত সাত বছরে (যা বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন অর্জিত) বাংলাদেশ থেকে ৩ দশমিক ৪৩২ মিলিয়ন জনশক্তি বিদেশে গমন করেছে। এর মধ্যে শতসহস্র দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক রয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন নারী কর্মীও। এদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত সাত বছরে বাংলাদেশ যে রেমিট্যান্স অর্জন করেছে, তার অঙ্ক একেবারে তুচ্ছ তো নয়ই, উপরন্তু তা ৯২ বিলিয়ন ডলারের সীমারেখা ছাড়িয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।

সরকারি খাতসহ বেসরকারি খাতের বিভিন্ন পর্যায়ের এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটির গুরুত্ব বুঝে এটিকে অনেক যত্ন নিয়ে দেখভাল করে। খাতটির পরিধি বাড়ানোর জন্যও বিভিন্ন পর্যায়ে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকদের— নারী ও পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই প্রাপ্যতা বাড়ানোর জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জনশক্তি খাতটিকে শক্তিশালী করার জন্য শ্রীলংকা, ফিলিপাইন ও ভারতের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমাদের এখানেও অনুরূপ পথ অনুসরণ করে খাতটিকে আরো শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চলছে।

এখন চলছে বিশ্বায়নের যুগ। এ সময়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে জনশক্তি খাত নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে চাই, তবে আমাদের অবশ্যই কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর বাড়াতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের মধ্যবিত্ত ও ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়া অভিবাসী জনগণের মধ্যে বিদ্যুত্ মিস্ত্রি, গাড়ি মিস্ত্রি, স্বাস্থ্যকর্মী, প্লাম্বার, কম্পিউটার মেরামত মেকানিক এবং ক্রমে যান্ত্রিক হয়ে ওঠা কৃষি ও মত্স্য চাষের জন্য দক্ষ কর্মীর চাহিদা দিন দিন বাড়বে। বিষয়টি আমাদের কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে পেরেছে। অনুধাবন করতে পেরে আমাদের টারশিয়ারি সেক্টর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ৭১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চারটি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে কাজ করছে। প্রয়োজনীয় হওয়ায় প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা উপজেলা পর্যায়ে আরো বাড়বে এবং প্রশাসনের এ পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে তা ৪০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

সরকারের ইতিবাচক মনোভাব এ খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বড় বড় শহরে ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে উত্সাহিত করছে সরকার। যারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, তারা এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইতালিয়ান, আরবি, ফার্সি, কোরিয়ান, মালয়েশিয়ান, চীনা ও জাপানি ভাষা শিখতে কোর্স করতে পারবে। এছাড়া বেসরকারি খাতের বেশকিছু প্রতিনিধিও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এসব কেন্দ্রে ওয়েল্ডিং, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত, পাইপ ফিটিং ও রড বাঁধাই (নির্মাণ খাতের জন্য প্রয়োজনীয়) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যেসব নারী ও পুরুষ এরই মধ্যে কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেছে, তারাও মেডিকেল বা নার্সিংয়ের ওপর বিশেষ কোর্স করছে। যেসব বৃদ্ধ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন রয়েছে, তাদের কীভাবে সেবা করতে হবে তা এ কোর্সে শেখানো হয়। বিশেষজ্ঞদের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের বিভিন্ন জায়গায় নার্সিং খাতটিতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখা ভালো যে, এ খাতে প্রবেশ করতে হলে প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবায় যেমন দক্ষ হতে হবে, তেমনি ইংরেজিতে কথা বলতেও পারদর্শী হতে হবে।

তবে এ খাতে কয়েক বছর ধরে একটি অস্বস্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য সমস্যা— প্রবাসে শ্রমিকদের মৃত্যু চলে আসছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ সমস্যা নিয়ে আমাদের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নাস ওয়েল ফেয়ার বোর্ড ২০১৬ সালের জানুয়ারি শেষে আমাদের দেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশে মৃত্যুবরণকারী প্রবাসী শ্রমিকদের দেহ গ্রহণ-সংক্রান্ত একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। এ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০০৫ সালে গ্রহণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৪৮টি, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৪০২টি, ২০০৭ সালে ১ হাজার ৬৭৩টি, ২০০৮ সালে ২ হাজার ৯৮টি, ২০০৯ সালে ২ হাজার ৩১৫টি, ২০১০ সালে ২ হাজার ৫৬০টি, ২০১১ সালে ২ হাজার ৫৮৫টি, ২০১২ সালে ২ হাজার ৮৭৮টি, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৭৬টি, ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৩৩৫টি এবং ২০১৫ সালে ৩ হাজার ৩৭৫টি। গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, গত ১১ বছরে বিদেশে ২৬ হাজার ৫৪৫ জন শ্রমিকের অকালমৃত্যু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও আমাদের বিদেশী কূটনৈতিক মিশনগুলোর অতিসত্বর দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা ও চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করার জন্য একটি সার্বিক অনুসন্ধান চালানোর প্রয়োজন রয়েছে। এটি বিদেশী শ্রমিকদের অকালমৃত্যু কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে একটি ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন রয়েছে। এ ট্রাস্ট ফান্ডের কাজ হবে যেসব হতভাগ্য প্রবাসী শ্রমিক অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, যাতে তারা ওই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে। এছাড়া এ ফান্ড যেসব শ্রমিক মানব পাচারকারীর হাতে পড়ে মৃত্যুবরণ করছেন, তাদের পরিবারকেও সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারবে। যেসব ব্যক্তি মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে কাতারে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের নিয়োগের প্রবৃদ্ধির চিত্রের কথা এখানে উল্লেখ করা যুক্তিসঙ্গত হবে। অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর চেয়ে এ দেশটিতে সার্বিকভাবে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৫ সালে কাতার ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৬ জন বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে, এর মধ্যে ৮ হাজার ৬৪২ জন নারী শ্রমিক। চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ঘোষণা এসেছে যে, বাংলাদেশ থেকে নেয়া নারী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩০০ রিয়াল (প্রায় ৭৫ ডলার) বাড়াতে যাচ্ছে কাতার কর্তৃপক্ষ। এটি একটি খুশির ও আশাব্যঞ্জক লক্ষণ। অন্যদিকে আমরা চলতি মাসের প্রথম দিকে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশীদের নতুন ভিসা দেয়ার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে এবং এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিক নিয়োগের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। আমাদের সবার প্রত্যাশা ও কামনা যে, আগে বা পরে যখনই হোক, এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার মতভেদ দূর ও সমস্যার সুরাহা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসবে।

একইভাবে মালয়েশিয়া কর্তৃক বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের স্পর্শকাতর বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। জি টু জি প্লাস সমীকরণের ভিত্তিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি আমাদের জন্য নতুন আশা তৈরি করেছিল। কিন্তু নব্য পরিস্থিতিতে আমাদের আশা হতাশায় পরিণত হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পরের দিনই এর বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে কুয়ালালামপুর। এ চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ পেতে পারতেন। এতে এসব শ্রমিকের মধ্যস্বত্বভোগীদের চাঁদাবাজির শিকার হতে হতো না। মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা মাস্টার বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়া (এমবিএএম) এরই মধ্যে ২০১৬ সালের ৪ মার্চ দেশটির সরকারের কাছে বিদেশী শ্রমিক নিয়োগের ওপর আরোপ করা স্থাগিতাদেশ তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এ সিদ্ধান্ত তাদের চলমান নির্মাণকাজ যথাযথ সময়ে শেষ করার ওপর প্রভাব ফেলবে। আমি বিশ্বাস করি, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই মালয়েশিয়ার সরকার তাদের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবমুখী পদ্ধতি পর্যালোচনা করে দেখবে।

এদিকে ফিন্স গ্রুপের লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ বলছে, তেলের দাম হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যের দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি টাকার ওপর চাপ তৈরি করতে পারে, ফলে ডলারের বিপরীতে আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে মুদ্রাটি। এটি হওয়া সম্ভব। তবে আমাদের স্বাভাবিক থাকতে হবে এবং এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো আছে বলেই আমরা বাধা পেরোতে পারব। ১৯৭৬ সালের পর থেকে আমরা এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ওই সময় মাত্র সাত হাজারেরও কম লোক কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল। আমরা উন্নতি করেছি এবং নতুন বহুমুখী গন্তব্যের সন্ধান পেয়েছি। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং আমরা একদিন সফল হব।

 

লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার