Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জৌলুস হারাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাণ শিল্প

south-korean-shipএক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে রাজত্ব করার পর দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাতারা অপ্রত্যাশিত সংকটে পড়ল। আর এ সংকট এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্ অর্থনীতিটির অন্যতম পোতাশ্রয় শিল্পের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

বিশালাকারের জলযান যেমন ক্রুজ লাইনার, সুপার ট্যাংকার, এলএনজিবাহী জলযান, ড্রিলশিপ ও বৃহত্ কনটেইনার জাহাজ নির্মাণে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাজারের ৪১ শতাংশ ছিল দেশটির নিয়ন্ত্রণে।

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়ার ‘বিগ থ্রি’ জাহাজ নির্মাতাদের একদা দেশটির ‘পবিত্র ত্রয়ী’ হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকে ইউরোপীয় ও জাপানিজ প্রতিদ্বন্দ্বীরা পিছিয়ে পড়ার পর ‘বিগ থ্রি’ বিশ্বের জাহাজ নির্মাণ বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করেছে। সারা বিশ্বের জাহাজ কোম্পানি আর জ্বালানি জায়ান্টদের জন্য বছরের পর বছর হুন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ, ডাইউ মেরিন অ্যান্ড শিপবিল্ডিং ও স্যামসং হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের শিপইয়ার্ডে বিশাল বিশাল কার্গো জাহাজ, তেলের ট্যাংকার ও ড্রিলার তৈরি হয়েছে।

কিন্তু তেলের দামের দীর্ঘমেয়াদি মন্দা ও বৈশ্বিক মন্থর অর্থনীতির প্রভাবে ট্যাংকার ও কনটেইনারবাহী জাহাজের চাহিদা কমে গেছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত উত্পাদনশীলতা, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সস্তা চীনা জাহাজ নির্মাতাদের তরফ থেকে প্রতিযোগিতা খাতটির মুনাফা সংকুচিত করেছে।

গত বছর কোম্পানি তিনটির সামষ্টিক লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি উন (৭৪০ কোটি ডলার)। এদিকে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সব জাহাজ নির্মাতাদের অনাদায়ী ফরমায়েশ ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। মার্চে কর্মীদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে হুন্দাই হেভির চেয়ারম্যান চোই কিল-স্যাওন বলেছেন, জাহাজ নির্মাণের ফরমায়েশ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। আমরা এমন একটি অকল্পনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি যে, খুব শিগগিরই হয়তো আমাদের ডকইয়ার্ড শূন্য পড়ে থাকবে। তিনি আরো বলেন, এমনকি ব্যাংকও আমাদের ঋণ দিতে অনিচ্ছুক। আজ আমরা এই রূঢ়, অনস্বীকার্য বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

বিক্রির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ জাহাজ নির্মাতা হুন্দাই টানা দুবছর লোকসানের কথা জানিয়েছে। কোম্পানিটির মোট লোকসানের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ কোটি উন। দুবছরের বেশি সময় পর এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট মুনাফা হয়েছে বলে জানালেও চোই এজন্য কাঁচামালের কম দাম ও কোরিয়ান মুদ্রার দুর্বল মানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

চোই জানান, এ বছর মোট বৈশ্বিক নতুন আদেশের অর্ধেকের বেশি পেয়েছে চাইনিজ জাহাজ নির্মাতারা। চাইনিজদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলে চাকরি শেষ হয়ে যাবে বলে চোই মন্তব্য করেছেন।

এদিকে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো কষ্টসাধ্য, রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বাধীন সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করায় আগামী দুবছর জাহাজ নির্মাতাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ বছর হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব কোরিয়ার বিশ্লেষক ইয়াং জং-স্যাউ। রাষ্ট্রীয় ত্রাণ ও ঋণ সম্প্রসারণের বিনিময়ে সিউলের আর্থিক নিয়ন্ত্রকরা কোম্পানিগুলোর ওপর আরো সম্পদ বিক্রি, ব্যাপক ছাঁটাই, মজুরি হ্রাস ও কঠোর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা চাপিয়ে দিচ্ছে। ইয়াংয়ের মতে, ২০১৮ সাল নাগাদ পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করবে। এখন প্রশ্ন হলো, কোম্পানিগুলো সে পর্যন্ত অস্তিত্ব টিকে রাখতে পারবে তো? যদি এর মধ্যে কোম্পানিগুলো ভেঙে পড়ে তবে প্রকৃত অর্থেই বৈশ্বিক জাহাজ নির্মাণ শিল্পের নিয়ন্ত্রণ চীনের কাছে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইয়াং।

সূত্র: এএফপি